আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাঙ্কি রুট- পর্ব ৫

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

পর্ব-৫ পূর্ব প্রকাশের পর... (এই ঘটনাটা আমার খুব কাছের এক ডাঙ্কারের কাছ থেকে শোনা। ঘটনাটার পরে দুঃসপ্ন তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় আজো!তার বিশেষ অনুরোধে স্হান কাল পাত্রের সামান্য কিছু পরিবর্তন সাপেক্ষে ভয়াবহ সেই ঘটনাটা তুলে ধরছি- বিশেষ করে তাদের জন্য যারা একটু উন্নত জীবনের আশায় যে কোন উপায়ই হউক না কেন ইউরোপ আমেরিকায় পাড়ি জমাতে চায়। ) স্টেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সহোযোগিতায় একবার মাল গাড়িতে ফার্নিচারের আড়ালে গাদাগাদি করে তিনচারদিনের খাবার দিয়ে পাঠানো হোল বেশ কিছু আদম । গন্তব্য পোল্যান্ড থেকে জার্মানী। তাদেরকে বলা হোল নির্দিস্ট স্থানে পৌছুলেই ব্যাপারির প্রতিনিধি হাতুড়ি জাতীয় কিছু দিয়ে মালগাড়ির গায়ে জোরে জোরে আঘাত করবে সেটাই ওদের পৌছানোর সংকেত।

বারবার সাবধান করে দেয়া হোল সেই সংকেত শোনার দুর্ভাগ্যবশত সেই ট্রেনের যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে কিছু মালবাহী বগি বিকল হয়ে পড়ে যারমধ্যে হতভাগ্য সেই আদমদের বগিও ছিল|(এইটে আমাদের ও সেই আদম ব্যপারীরও ধারনা। সত্যিকার অর্থে জানিনা কেন বগিগুলো এই নির্জন জায়গায় এতদিন পড়েছিল!) সেখানকার পোলস্কা ও ডয়েসল্যান্ড বর্ডারের অদুরে এক রেল স্টেশনে ওই বগিগুলো ফেলে রেখে ট্রেন চলে যায় বার্লিন| দিনের পরদিন আপেক্ষা করছে সেই অন্ধকার লোহার কুঠুরিতে প্রায় পচিশজন আদম সন্তান। সময় যেন থমকে দাড়িয়ে আছে সেখানে । অন্ধকার .. অন্ধকার ..চারিদিকে বিভৎস অন্ধকার । খাবার ফুরিয়ে গছে দুদিন আগে- ক্ষুধা তৃষ্ণায় ঝটফট করতে থাকা সেই লোকগুলি প্রতিমুহুর্তে আপেক্ষা করছে একটা হাতুড়ি পিটুনির আওয়াজের।

তারপরেই মুক্তি .. আহ কিশান্তি । সে অপেক্ষা যেন অনন্ত কালের অপেক্ষা। হাতুড়ির শব্দ আর শোনা যায় না শুধু নিকটে আতি নিকটে বেজে চলে একনাগারে পচিশটা হৃদয়ের অবিরাম চলার শব্দ ধুক পুক ধুক পুক। প্রথমে জোরে কথা বলতে শ্বাস নিতে ভয় পেত,শব্দ পেয়ে এই বুঝি পুলিশ ধরে জেলে পুরে। কিন্তু সাত দিন যেতেই মৃত্যুভয়ের কাছে অন্য সব ভয় তুচ্ছ হয়ে গেল।

শুরু হল চেচামেচি -চিৎকার। হতভাগ্যরা জানেনা তাদের কন্ঠের তীব্র চিৎকার এই কঠিন চার দেয়াল ভেদ করে বাইরে পৌছুবেনা। আর পৌছুলেও কেউ শুনবেনা। কেননা আশেপাশে মাইলখানেক জনমানব শুন্য। এদিকে আসেও লোকজন কদাচিৎ।

তারপরও বোঝার উপায়নেই এটা দিন না রাত ? তারা হয়তো দিন ভেবে সারারাত ধরে চিৎকার করেছে । চিৎকার করতে করতে গলা ভেঙ্গে গেল - ঠান্ডায় হাতপা জমে যাচ্ছে, হৃদয়ের স্পন্দনও ধীরে ধীরে শ্লথ হয়ে আসছে । শক্ত কিছু দিয়ে যে দেয়ালে ঠুকবে সে শক্তিটুকুও কারো অবশিষ্ট নেই । ১৭ দিন পরে তারা ঠিকই পৌছে জার্মানীতে কিন্তু জীবিত অবস্থায় নয়! তারা পরাজিত তাদের উচ্চাঙ্খার কাছে । তাদের সপ্ন ছিল হয়ত গ্রামের নিভৃত কোনে পরে থাকা অসহায় মায়ের মুখে একটু হাসি ফোটাতে ।

বোনের একটা ভাল বিয়ে অথবা ছোট ভাইয়ের সুন্দর একটা ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় কিংবা সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি থেকে রেহাই দিয়ে বাপের সামান্য একটু অবসর। খড় বা টিনের চালা ভেঙ্গে সেখানে বড়জোড় দুটো ইটের গাথুনি। কেউবা তার শেষ সম্বল জমিটুকু বেছে কিংবা বন্ধক রেখে অমুল্য ধন একমাত্র সন্তানকে বিধাতার হাতে সপে দিয়েছেন। কিন্তু বিধাতা তাদের দেখেনি। তার মা পথপানে চেয়ে উদাস নয়নে বড়বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলবে - কখনো বা দুফোটা চোখের জল।

ডাক হরকরাকে ক্ষনে ক্ষনে জিজ্ঞাসিবে তুমি ভুল করছনাতো? হয়তো সে ঠিকানাটা ঠিক লিখেনি! শেষে হতাশ হয়ে বলবে থাক বাছা যেখানেই থাকিস তুই সুখে থাকিস। ... সুখে সে আছে -চির শান্তিতে। একটু আরাম আয়েস বিলাস ব্যাসনের জন্য আর কোনদিন তাকে সামান্য খাটতে হবে না। বাপ সবার অলক্ষ্যে গভীর রাতে হয়তো ডুকরে কেদে উঠবেন। নিজের কস্টকে বেশীক্ষন বুকে চাপা রাখতে না পেরে রাগে অন্ধ হয়ে যাবেন।

পাড়ার লোকেরা হয়তো বলাবলি করবে, বিদেশের কোন সাদা মেমের পাল্লায় পড়ে ছেলেটা তার বাপ মাকে অব্দি ভুলে গেল! বড় ভয়াবহ করুন সে মৃত্যু। এর থেকে গুলি খেয়ে এক লহমায় মরে যাওয়া অনেক ভাল। ...ক্রমশ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।