মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!
ডাঙ্কি রুট-তৃতীয়পর্ব-
বাঙ্গালী হলে তাও কিছুটা ছাড় দিত, পাকিস্থানি কিংবা শ্রীলঙ্কান হলে এসব আব্দার কানইে তুলতনা তারা।
শ্রী লঙ্কানরা আবার ছেলে মেয়েরা একই সাথে এই পন্থায় ভিন দেশে পারি জমায় । দেখা যেত আঠারোটা ছেলের সাথে দুটো মেয়ে একই রুমে মাসরে পর মাস কাটাচ্ছে, তবুও কোন অভিযোগ নেই!
একবার কেন যেন ওখানকার পুলিশ বাহিনী ক্ষেপে উঠল। যেখানে যেকটা আদম পাচ্ছে তাদেরকেই জেলে পুরছে। কোন ওজর আপত্তিতেই কাজ হচ্ছেনা।
আমার বন্ধুকে সেই বড় কর্তা ফোন করে বললেন, তুমি বাসা থেকে পারতপক্ষে বেরিও না। আর যেখানে যেকজন লোক আছে তাদের সাথে দেখা করাতো দুরে থাক টেলিফোনেও খবর নিও না। পরে সমস্যা হলে আমার কিছুই করার নেই।
হুম!
মহাবিপদ!
কার ব্যাপারির না আদমের? বন্ধু আমার একনাগাড়ে দশটাদিন কোন ফোন এলে ধরেন না ফোন করেনও না। দশদিন বাদে সেই পুলশি অফিসারের হাতে পায়ে ধরে সে আদমদের সাথে দেখা করার অনিুমতি নিল।
বাইরে কাঠন্যি থাকলওে ভিতরে ভিতরে মনটা বেশ নরম ছিল। আদমদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে সেই ক'টাদিন সে খুবই বিমর্ষ ছিল।
রাত প্রায় বারোটা নাগাদ আমরা একটা ট্যাক্সি ক্যাবে করে গেলাম সেখানটায় যেখানে মাস তিনেক আগে আসা প্রায় ২২জনের মত শ্রীলঙ্কান(তামলি) রাখা হয়েছে। নির্দিস্ট ফ্লাটের সামনে গিয়ে অনেক্ষন ডোর বেল বাজালাম কিন্তু ভিতর থেকে কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। দরজা ধাক্কালামও অনেক্ষন কোন সাড়া নেই!
শব্দ শুনে পাশের ফ্লাটের বুড়ি দরজা খুলে মুখখানি বের করে ক্রুর চোখে একঝলক অগ্নি বর্ষন করে আবার দরজা আটকে দিল।
অগত্যা দারুন দুঃশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে আবার বাসায় ফিরে গিয়ে সে ফ্লাটের ডুপ্লিকেট চাবি এনে দরজা খুললাম। ভিতরে ঢুকে ভয় পেয়ে গেলাম!
চারিদিকে ঘুটঘুট্টি অন্ধকার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসেরও শব্দ নেই। সবাইকে কি ধরে নিয়ে গেল বন্ধুটি নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে হাতড়ে করিডোরের লাইট জ্বালাল। যে-রুমে রাশান পরিবারটি থাকত সেটা তালামারা।
হুম গ্যাছে! বন্ধুটি আমার দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে কথাগুলো বলল যে সব শেষ!
একটু এগিয়ে পাশের রুমে উকি দিতেই,রুমের অন্ধকার কোনে গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে থাকা লোক গুলি নজরে এল।
বন্ধুর আশ্বাস পেয়ে তারা যেন ধরে প্রান ফিরে পেল ।
এক এক করে সবাই নড়েচড়ে উঠল। আলোজ্বালার পর ভয় বিহ্ববল ক্ষুধার্ত রোগা লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে -আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারলামনা।
সামান্য নিরবতা! তারপরেই সবাই যেন একযোগে হাউমাউ করে বলতে শুরু করল তাদের কস্টের কথা । আধভাঙ্গা ইঙরেজীতে তাদের সত্যিকারের আবেগ অনুভুতির কথা তাদের বোঝাতে এবং আমাদের বুঝতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল,তবু চেচামেচি আর কান্নার আওয়াজ ছাপিয়ে তাদের আর্তনাত হৃদয় ছুয়ে যায়।
হোক সে ভিনদেশী তবুও তাদের কান্নাঝরা আকুতি আর মুখের করুন অভিব্যাক্তিই বলে দেয় কস্টের তীব্রতা।
বিশ্বের সবদেশের মানুষের কস্ট প্রকাশের ভঙ্গীতো প্রায় একই। তামিলরা এমনিতেই খুব কস্ট সহিষ্ণু জাতি এরা দীর্ঘ দিন ধরে নিজেদের স্বাধীন সত্বা বা ভুমির জন্য সংগ্রামে লিপ্ত। তখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ও দুর্ধর্ষ গেরিলা তামিল টাইগারদরে রক্ততো এদের ধমনীতেই বইছে। এদের গড়া সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যরা যখন তখন নিজেদেরকে বলি দিতে প্রস্তুত ছিল, এখনো হয়তো আছে!
কিন্তু সবাইত আর ভয়ংকর(!) নয়।
দেশ থেকে অনেক দুরে মালদোভিয়ার কোন এক নিভৃত গৃহকোনে ক’জন লঙ্কান তামিল ভাইবোন কোন সংগ্রাম ছাড়াই তালাবদ্ধ হয়ে অনাহারে মৃত্যুর দিন গুনছিল। তারপর ভর করে ছিল ভয় ও আতংক ।
মরে যাবে তবু পুলিশের হাতে ধরা দেবে না। এ বড় ভয়ংকর সংকল্প ।
গত ছয়-সাতদনি আগে তাদের খাবার ফুরিয়ে গেছে।
বাড়ির মালিক ডাঙ্কারের(আদম ব্যপারি) সাথে যোগাযোগের অনেক চেস্টা করে বিফল হয়ে এতগুলো লোকের অন্ন সংস্থান করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু তালা দিতে ভোলেনি ! টেলিফোনটাও লক্ করে রেখে গেছে। কি নিষ্ঠুরতা!
সঙ্গে সঙ্গে ছুটলাম খাবার কেনার জন্য। শুকনো পাউরুটি আর ঠান্ডা দুধ পেয়েই তারা কি খুশি !...ক্রমশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।