মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!
সংকলিত পোস্টে এই প্রথম আমার লেখা যাচ্ছে-এখন থেকে আমি সেফ ব্লগার! মজা পাইলাম। লেখায় ভুলভ্রান্তি থাকলে গুরুজনেরা বকাবকি কইরেন না। মাথায় হাত বুলাইয়া বুঝায় দিয়েন।
পূর্ব প্রকাশের পর...
ডাঙ্কি রুট-৪র্থ পর্ব
ডাঙ্কারদের(আদম ব্যপারীদের) জমায়েতে শুনতাম আদম পাচারের করুন কাহিনী-সেসব তারা বলত রসে চুবিয়ে সাবলীল ভঙ্গিতে।
কার ক’জন আদম সীমান্ত রক্ষীর হাতে পড়ল।
ক’জন বরফে জমে, কিংবা গাড়িতে দমবন্ধ হয়ে মারা গেল সে সব কাহিনী। তার সবগুলো মনে নেই-স্থান কাল ভুলে গেছি। যতটুকু স্বরণে আছে তা থেকে দুয়েকটা কাহিনী তুলে ধরছি
ঘটনাটা ঘটেছিল অস্ট্রিয়ার বর্ডারে,
অস্ট্রিয়া থেকে একটা ফ্রিজার ভ্যানে কতগুলো লোককে পাচার করা হচ্ছিল। গন্তব্য সেই একই জার্মানী কিংবা ইতালি। চতুর ট্রাক ড্রাইভার সাচ্ছন্দেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
যেন মাছ মাংস কিংবা দুগ্ধ জাতীয় কোন পন্য বহন করছে। তবে ফ্রিজিং সিস্টেম চালু ছিল না। অস্ট্রিয়ার বর্ডারে ইমিগ্রেশন কর্তারা কাগজপত্র পরীক্ষা করার সেটা দাড় করাল।
সব ঠিক আছে। গ্রীন সিগন্যাল - তুমি যেতে পার।
ড্রাইভার মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিল। ঠিক তখুনি এক অফিসারের চোখ গেল ড্যাস বোর্ডের সুইচ গুলোর দিকে। অ্যাই রোখো, আরে! তুমিতো ফ্রিজার সুইচ বন্ধ রেখেছ?’
'ওহ্ স্যরি স্যার। এক্ষুনি চালু করে দিচ্ছি। 'ড্রাইভারটি সুইচটা অন করে -খুব চতুরতার সাথে অফিসারের দিকে চেয়ে একটা হাসি দিল।
কর্মকর্তাটি একটু সন্দেহের চোখে চেয়ে আবার কেন যেন ছেড়ে দিলেন।
ড্রাইভারটি এত সহজে বর্ডার ক্রস করতে পারবে ভাবতে পারেনি। সে খুশিতে ডগমগ হয়ে শীষ দিতে দিতে গাড়ির গতি বাড়িয়ে চলেছে ।
১.. ২...৩....৪.....৫ -ঘন্টা পাচেক পর হঠাৎ তার নজর আটকে গেল সেই সুইচটার উপর যেটা সে বর্ডারে অন করেছিল। হায় ঈশ্বর! মুহুর্তে সে সেটা বন্ধ করে হাইওয়ের একপাশে গাড়ি ভিড়িয়ে দ্রত ছুটে গেল পিছন পানে ।
কম্পিত হাতে দরজা খুলতেই নজরে এল বরফে জমে যাওয়া স্পন্দনহীন কতগুলো মৃতদেহ !
এমনি আরো কত ভয়ংকর হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে সবার অলক্ষ্যে কেউ কোন দিন জানতেও পারবে না । কতশত মায়ের বুক খালি করে তাদের সন্তানেরা এভাবে হারিয়ে গেছে চিরতরে কেউ কি তার খবর রাখে।
শস্য শ্যামলা সুজলা সুফলা সকলদেশের সেরা দেশ বলে যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি । বর্তমান ও ভবিষ্যতকে ভুলে যার অতীত নিয়ে টানাহেচড়া করি। এ দেশ বর্তমান প্রজন্মকে কি দিয়েছে।
মুখভরা বুলি আর ঝুড়িভরা মিথ্যে আশ্বাস বৈ-তো আর কিছু নয়। এদেশে একটা শিশু জন্ম নেয় তার পূর্বপুরুষদের ঋনেরবোঝা মাথায় নিয়ে। জন্ম মুহুর্তেই সে হয়ত চিৎকার করে বলে কি অভিশাপে আমার জন্ম হল এই বিশ্বের দরিদ্রতম হতভাগা দেশে? শুধূ রোগ জরা ব্যাধি দুষন দারিদ্রতাই নয় সেই সাথে প্রকৃতির নিষ্ঠুর আঘাত আমাদের নিত্য সঙ্গী। একটা উপকুলীয় ঘুর্নিঝড়েই একবারে হারিয়ে যায় কয়েক লক্ষ মানুষ। তাই মাঝে মধ্যে ভাবতে বসি কি আছে এই দেশে ?
একটি প্রবাদ আছে 'আমি যাই চান্দে আমার কপাল যায় আমার সঙ্গে’।
পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাইনা কেন আমার দুর্ভগ্যকে আমার সাথে নিয়ে বয়ে বেড়াতে হয় । একটা পাসপোর্ট গাঢ় সবুজ রঙের যার উপরে লেখা 'গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার' একমাত্র ভুক্তভুগিরাই জানেন উন্নত বিশ্বের প্রতিটা দেশে এই পাসপোর্ট বা পাসপোর্টধারী ব্যক্তিকে কিভাবে মুল্যায়ন করা হয়। সমগ্র আরব বিশ্বে আমাদের পরিচিতি ’মিসকিন’ বা ভিক্ষুক হিসেবে। ইউরোপ আমেরিকায় বাংলার দামাল ছেলেরা কি করছে? মুস্টিমেয় কয়েজন ছাড়া বাকীরা যে পথে পয়সা উপার্জন করতে বাধ্য হচ্ছে তা দেখে বা শুনে নিজের প্রতি বা এদেশের প্রতি ঘেন্না হয়। যে কারনে (সবক্ষেত্রে নয়)অনেক প্রবাসী বাঙ্গালী স্বজাতীর কাছেই তাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখে।
প্রবাসে-দেশী মানুষকে দেখলে নিজের মাতৃভাষায় কথা কইতে মনটা আনচান করে, চেহারা দেখে কখনো কেউ হয়তো থমকে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে ’ভাই আপনি কি বাঙ্গালী’?প্রতিউত্তরে সে হয়তো ভিন ভাষায় উল্টো শুধায় 'তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না। প্রশ্নকারী স্বভাবতই বিব্রত বোধকরে কেটে পড়ে।
এদের কি বলব কুলাঙ্গার জাতির কলঙ্ক! এসব গালি দেয়ার আগে একবার ভেবে দেখা উচিত ’কেন তারা নিজের জাতীয়তা গোপন রাখে বা রাখতে চায়?...’ক্রমশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।