আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক্কেবারে ছোটদের গল্প : বানরের ফন্দি

যে নদীর গভীরতা বেশি, তার বয়ে চলা স্রোতের শব্দ কম।

জঙ্গলে মন্ত্রী পরিষদদের উপর ভীষণ জুলুম করছেন মহারাজ সিংহ সাহেব। এই জঙ্গলে জ্ঞানীদের যেন কোন কদরই নেই ! আচ্ছা, যেই শিয়াল কিনা থাকে সব সময় কাদা মাটিতে গর্তের ভিতর। খায়ও পচা বাসী খাবার! সেই ওকেই কিনা সিংহ মশাই প্রধান উজিরের খেতাব দিলেন। না-না এটা বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।

ভাবছে বানর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি বানর বৈরাগী। বৈরাগী তার বংশগত টাইটেল। বানর ভাবছে এটা কী করে সম্ভব তাকে রেখে শিয়াল ‘টপ’-এ উঠবে। ইমপসিবল। হিসেবে প্রধান উজির খেতাব পাওয়া কেবল বানরেরই সাজে।

সে সর্বদা গাছে গাছে থাকে। সবার উর্ধ্বে বিচরণ করে। থাকেও অলওয়েজ কীন। খায় ভালোভালো ভিটামিনযুক্ত ফল। শিয়ালের চেয়ে অনেক সভ্য সে।

তাকে রেখে শিয়াল কখনো প্রধান উজির হতে পারে না। না না না। বানর ছুটলো রাজার কাছে। আজ এর একটা বিহিত হতেই হবে। মহারাজ সিংহ তার পন্ডিতবর্গ ও উজির নাজির নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন।

এমন সময় সেখানে বানর এসে হাজির। কুর্নিশ করলো সে সিংকে। কী ব্যাপার বৈরাগী সাহেব। এত সকাল-সকাল আজ দরবাওে ! রাত্রে ঘুম হয়েছিল তো? জানতে চাইলেন মহানুভব সিংহ। বানর বলল জিনা মহারাজ চিন্তায় রাত্রে ঘুমাতে পারিনি।

সেকি তুমি বনের বানর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি। আর তুমিই কিনা রাত্রে চিন্তার জন্য ঘুমাতে পারনি। আজ্ঞে মহারাজ। বলো কী তোমার চিন্তা। বলতে ভয় হচ্ছে হুজুর।

যদি বেয়াদবি না নেন। আহা বলে ফেলনা। হুজুর আপনি আজ একটা অবিচার করে ফেলেছেন। হোয়াট! কী বললে তুমি! েেপ ওঠে মহারাজ সিংহ। আমি কি ভুল শুনলাম? আমি সত্যি কথাই বলছি মহারাজ।

গোস্তাখি মাফ করবেন। বলো, আমি কোন দিক থেকে অবিচার করেছি। মহারাজ, এই জঙ্গলে আমার মত একজন জ্ঞনী গুণী বংশ মর্যাদাসম্পন্ন বানর থাকতে আপনি খেকশিয়ালকে প্রধান উজির উপাধি দিলেন। ওর মত মূর্খকে এই সম্মান দেয়া আদৌ রুচিসম্মত কাজ হয়নি। খামুশ।

আমার নির্বাচন তে তুমি এ্যাভোয়েট করতে চাও। তোমার স্পর্ধাতো কম নয়। আই উইল কিল্ ইউ। আই ডোন্ট কেয়ার ইট জাহাপানা, অলওয়েজ আই শ্যাল টক ট্রু। বানরের কথা বর্তমান উজির শেয়াল পন্ডিতও শুনছিল।

নাক কুচকানি দিল সে। ছ্যা ছ্যা! মহারাজ, আপনার মুখের উপর তর্ক করে বানর, তাও অন্যের অপবাদ, ওকে আপনি এখনো কিছু বলছেন না? ছোট খাটো এক তর্কযুদ্ধ বেঁধে গেল বানর আর শিয়ালের মাঝে। শিয়াল বলে ওঠলো অহন অন্যের ভালো তুমি সইতে পারছো না। তুমি তো একটা স্বার্থপর। হ্যা, আমি স্বার্থপর কারণ আমি সর্বদা পরের স্বার্থে কাজ করি।

তুমি তো একটা স্বার্থবাদী, ফটকাবাজ। তুমি একটা ধারীবাজ। তুমি একটা ইতর। তুমি একটা বদমাইশ। থামো।

ধমকে ওঠেন মহারাজ সিংহ। তোমরা ঝগড়া করো না। শত হলেও বানর আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। রাজা হিসাবে বিচারটা তদন্ত করা আমার কর্তব্য। রাজার কথা শুনে বানর বেজায় খুশি হলো।

রাজা বল্লেন। বানর, তুমি বলছো শিয়াল হচ্ছে মুর্খ এবং নিজকে সবচে বেশী জ্ঞানী দাবী করছো। আজ্ঞে মহারাজ। পরীা দিতে পারবে? রাজি হুজুর। তবে যাও আগামি কালই এর পরীা হবে।

তোমাদের মধ্যে যে সবচে বেশি চালাক তাকেই আমি পুরস্কার হিসেবে প্রধান উজির পদে নিযুক্ত করবো। যথাস্ত মহারাজ। বাসায় এসে বানর হেসে কুটি কুটি। যাক। রাজাকে পটানো গেল।

এবার শিয়াল মিয়াকে ফন্দি এঁটে পরাস্ত করতে পারলেই হলো। কিন্তু কাজটা কীভাবে সম্ভব ? বানর বৈরাগী আসলেই ভষিণ চালাক। কী করে শিয়ালকে পরাস্ত করা যায় ? যেভাবেই হোক বানরকে তার স্ব-স্বার্থ আদায় করতেই হবে। রাত ভর ফন্দি আটলো বানর। কিন্তু শিয়াল কে পরাস্ত করার মত কোন বুদ্ধিই সে পেল না।

রাত পেরিয়ে সকাল গড়িয়ে এলো। সারারাত ফন্দি এটে সে একটাই সিদ্ধান্তে উপনিত হলো, তা হলো মহারাজের কাছে গিয়েই সে শিয়ালের নামে উল্টা পাল্টা বদনাম রটানো শুরু করবে। যা থাকে কপালে ! পরদিন। রাজ দরবারে উপস্থিত হল বানর। সে বাদী আর শিয়াল বিবাদী।

সিংহ দুই জনের মধ্যে বসে। আর রাজ সভার সকল পরিষদ বর্গ সবাই যে যার মত বসে আছে। মহারাজ সিংহ অত্যন্ত বিচণ, তা সবাই জানে। মহারাজ বলা শুরু করলেন। শোন বৈরাগী বানর আর শিয়াল পন্ডিত।

আমার কাছে এখন তোমাদের দু‘জনেরই পরীা দিতে হবে। আমরা প্রস্তুত মহারাজ। সম্মিলিতকন্ঠ বানর ও শিয়ালের। বেশ। সবার আগে বানর তুমি শিয়ালের দোষ ক্রটি সবার সম্মুখে উপস্থাপন কর।

জ্বো-হুজুর জাহাপানা। খুশি মনে শুরু করলো বানর। মহারাজ, সেই আদিকাল থেকেই শিয়াল স¤প্রদায় অতি হীন-প্রকৃতির প্রাণী। সমাজে এদের মহৎ কোন ভূমিকা তো দূরে থাক, কোন মূল্যই নেই। এরা মানব সমাজের চোখের কাটা, এরা মানুষের ঘর-বাড়ি থেকে হাঁস-মুরগী চুরি করে খায়।

এরা চোর স¤প্রদায়ও বটে। এরা অত্যন্ত রুচি বাগিশ, মহারাজ। খায় পচা খাবার, থাকেও নোংরা কাদায়। এরা এতই নির্বোধ যে, ‘শিয়ালের লেজ কাটা’ গল্পটাতো জানেনই। অন্য পে শিয়ালের চেয়ে বানর স¤প্রদায় অতি উৎকৃষ্ট এবং বুদ্ধিমান প্রাণী।

অবশ্য বুদ্ধিমান হওয়ারও কথা। আমরা সব সময় গাছের মগডাল থেকে টাটকা ও ভিটামিনযুক্ত ফল খাই। মানুষের সমাজে আমাদের কদর আছে। মানুষের মতই আমরা সবকিছু অনুকরণ করতে পারি, হাসতে পারি, ভেংচি কাটতে পারি। আমাদের জ্ঞানের কথাও আপনি জানেন।

আমার এক স্বজাতি কীভাবে বোকা কুমিরকে ধোকা দিয়ে প্রাণে বেচে ছিলো-তাও জানেন। অতএব আমি বলতে চাই প্রধান উজির খেতাব পাওয়াটা শেয়ালের নয়, কেবল আমারই সাজে। এতোণ কেউ খেয়াল করেনি- এসব অপবাদ শুনে শিয়াল পন্ডিত লজ্জায় কাঁদছে। হু হু করে কাঁদছে। মহারাজ বানরের কাছে সব শুনলেন।

তারপর ‘হুম’ বলে শিয়ালের দিকে তাকালেন। বলেন। শিয়াল শুনলেতো বানর তোমার নামে কীসব বলল। এবার তুমি বানরের দোষ ক্রটি সবার কাছে পেশ করবে। শিয়াল এমনিতেই কেঁদে কেঁদে অস্থির হচ্ছিল বানরের দেয়া অপবাদ শুনে।

এবার তাকে কিছু বলতে বলায় তার কান্না গেল আরও বেড়ে। বানরের কোন দোষই সে বলতে পারলো স্পর্ষ্ট করে। এমনিতেই গতকাল এক বুড়ো মোরগের হাড় খেতে গিয়ে সামনের চোয়ালের তিনটি দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছে। ফলে এখন সে যা ই বলছে দাঁতের ফাঁক দিয়ে ঠু করে বেরিয়ে আসছে। বুঝা যাচ্ছে না কিছুই।

অবশেষে হাউমাউ করে কতণ কেদে থামলো শিয়াল। এবার রায় ঘোষণার পালা। গবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে রায় শোনার জন্য। বানর মহা খুশি। যা বলা বলেছে জয় তার নিশ্চিত ! মহারাজ খানিকণ ভেবে বলা শুরু করলেন।

আমার সুধী পরিষদবর্গ। এতোণ আপনারা বানরের মুখ থেকে শিয়ালের বদনাম এবং শিয়ালের মুখ দিয়ে বানরের দোষ ক্রটি শোনলেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই আমি আমার রায় ঘোষনা করেছি। চিন্তা করে দেখলাম বানর যা বলছে সবই সত্য বলেছে। শিয়াল বস্তুতই বোকা এবং মুর্খ।

এবং বানর মানব সমাজেই অধিকতর কদর পেয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। আপনারা আমার একটি কথা মনে রাখবেন, তাহলো আমরা মানুষ নই। আমরা বুনো এবং পশু শ্রেণী। তাই মানব সমাজে আমাদের মানায় না। শিয়াল মানুষের তি করে এ জন্যে তার শাস্তি হবে।

অন্য দিকে বানর মানুষের কাছে খুবই সমাদ্রিত। সে জ্ঞানী গুনী ভদ্র স¤প্রদায়ের জাত। তার এই জঙ্গলে থাকাটা সাজে না। তাই আমি বানরকে এই মর্মে আদেশ করছি যে, সে যেন কাল সূর্যোদয়ের মধ্যেই এই জঙ্গল ছেড়ে চলে যায়। তার মত এমন এক জ্ঞানী গুণী বংশ মর্যাদা সম্পন্ন বানরকে এই জঙ্গলে রেখে তার অসম্মান আমরা করতে চাই না।

বাহবা রব ওঠালো মহারাজের বিচারে। বানরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো। তার ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিঁড়তে। বড় লোভ করতে গিয়ে এ কোন ফাঁদে পড়লো সে ? নিজের ভুল বুঝতে পেরে সিংহের পায়ে লুটিয়ে পড়লো বানর। সিংহ মজা করে দিলেন এক হুংকার।

বানর ভয় পেয়ে এক লাফে গাছের মগডালে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.