আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধাক্কা

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

ভারাক্রান্ত মনে সারাদিন কাটাবার পর বারান্দায় দাঁড়িয়েছি দিনের শেষ সিগারেট টানতে । ব্যক্তিগত এক শোকের দিনের সাথে অফিসের নিষ্পেষণে নিজেকে সুস্থির রাখতে প্রানান্তকর পরিশ্রম করতে হচ্ছে । সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে কোথাও বেরিয়ে পড়বার প্রবল ইচ্ছা হচ্ছে । আদ্যপান্ত সংসারী মানুষ মাত্রই বোধহয় এমন ইচ্ছা স্রেফ বুকের মধ্যে পুষে রাখতে ভালোবাসে কিন্তু বাস্তবায়ন করতে নয় ।

কার লেখায় পড়েছিলাম মনে করতে পারিনা । পেছনে কারো পায়ের শব্দ পেলাম । দেখলাম মা বহুদিন পর বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে । বিরক্তির সাথে সাথে রাগ হলো আমার । আজকে সারাদিনে তার আচরণ আমাকে অনেক বেশী বিপর্যস্ত করেছে ।

পারিবারিক একটা শোকের দিন অথচ তার মধ্যে কোন ছাপ দেখলাম না । একটা মিলাদের আয়োজন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিষেধ করে দিলো । তার ঘরের দেয়ালের ছবিটার উপর মাকড়সার জাল হয়ে এক নোংরা অবস্থা হয়েছে তবু কাউকে ডাকলোনা পর্যন্ত ঝেড়ে পরিষ্কার করবার জন্য । অন্যান্য দিনগুলোর মতোই স্বাভাবিক আচার - আচরণ যেন কিছুই হয়নি । আজকের তারিখটা কিছুই নয় ।

নিজের শশুরবাড়ীর মানুষজন নিজেদের মতো করে কি না কি ভেবে রেখেছে কে জানে । তাদের ভাবতে দোষ কোথায় ? আমি নিজেই তো ভেবে কূল - কিনারা কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা মায়ের এমন আচরণের । দুইজনের মধ্যকার নীরবতা মা নিজেই আগে ভাঙ্গলো , " একটা ফুটবলের দাম কতো রে এখন ? আমার কাছে টাকা আছে কিছু দিলে নিয়ে আসতে পারবি " মায়ের এই আজিব প্রশ্ন শুনে অবাক হবার সাথে সাথে মেজাজ আরো খিঁচড়ে গেলো । মার আজকে হয়েছে কি ? তবুও নিজেকে শান্ত রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করলাম " নিয়ে আসতে পারবো কিন্তু হঠাৎ ফুটবলের দামের কথা জিজ্ঞেস করছো কেন ? তোমার কি দরকার " আমাদের বাড়ীর বারান্দার সামান্যতম দূরত্বেই বছর দুয়েক আগে এক এপার্টমেন্ট উঠে বসেছে বলে আমরা কেউ নিঃশ্বাস নিলেও যেন সেই বিল্ডিঙের পাশের বাড়ীর জানালা থেকে সেই নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাবে । সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মা শান্তস্বরে বলতে থাকলো , " আমাদের গ্রামের টিপুর কথা মনে আছে তোর ? তার ছেলেটার ফুটবলের অনেক শখ ।

বাপকে নিজের ইচ্ছার কথা বলে প্রচন্ড মার খেয়েছিলো । তাও সেই ইচ্ছাটা যায়নি । ঢাকায় এসে কষ্ট করে কোনমতে একটা ছোট মেসে উঠেছে । তুই একটা ফুটবল কিনে দিলে সামনের মাসে তোর বড় মামার ফুটবল কোচিঙে ভর্তি করে দেবো । তোদের বাবা আমার জন্য যা রেখে গিয়েছিলো তার থেকেই দেবো ।

মানুষটা ফুটবলের বড্ড পাগল ছিলো । নিজের ৩ ছেলের অন্তত একজনকে ফুটবলার বানাতে চেয়েছিলো । কোন ইচ্ছাই তার পুরণ হলোনা । " মা থেমে যায় । মিনিট দুয়েক আগেই শেষ সিগারেটটা টেনেছিলাম ।

আবারো সিগারেটের তৃষ্ণা পেলো । আমি কোনমতে হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে বারান্দা থেকে বেরিয়ে আসলাম । মা তখনো বারন্দায় দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছিলো । কি যেন দেখছিলো । আজকে বাবার মৃত্যুবার্ষিকী ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।