ডালিয়া সুলতানা হেপী ইস্যুতে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪ দল সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
কামরানের সমর্থকেরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। ‘ডলিয়া’এখন শুধু সিলেট নয়,দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষ স্হানে ।
শুক্রবার দৈনিক যুগান্তরের শেষ পৃষ্টায় রঙ্গিন ছবিসহ ‘মেয়র কামরানের স্ত্রী দাবিদার ডালিয়াকে নিয়ে সিলেটে তোলপাড়’শিরোনামের অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
হেফাজত ইস্যুতে ভোট ব্যাংকে ফাটল সৃষ্টি হওয়ার পর এবার ডালিয়া ইস্যুতে বেকায়দায় কামরানের সমর্থকেরা।
ঢাকায় বসবাসরত কামরানের স্ত্রী দাবিদার ডালিয়া সুলতানা হেপীকে নিয়ে সিলেটে তিন দিন ধরে তোলপাড় চলছে। কামরানের পক্ষে যারা ভোট চাইতে নেমেছেন তাদের কাছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাভাবে ডালিয়া প্রসঙ্গ নিয়ে আসছেন ভোটাররা।
কারণ গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মহাখালীতে সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বিপত্তি শুরু। মহাখালী পুলিশ বক্সের কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হলে গাড়ির মালিক ডালিয়া সুলতানা হেপী নিজেকে কামরানের স্ত্রী দাবি করেন। এর পর থেকে ডালিয়া আসলে কে, কী তার পরিচয় তা নিয়ে মানুষের প্রশ্নের শেষ নেই।
হঠাৎ করে নিজেকে একজন বিদায়ী মেয়রের স্ত্রীর পরিচয় তাকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। এ নিয়ে কামরানও বিব্রত। এর প্রধান কারণ সামনে নির্বাচন। ডালিয়ার দাবি অনুযায়ী কামরান যদি সত্যিই তার স্বামী হন তাহলে এটি কামরানের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে।
কারণ নির্বাচনী ব্যক্তিগত তথ্যে কামরান ডালিয়ার নাম উল্ল্যেখ করেননি, যা আইন অনুযায়ী তাকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলতে পারে।
এ নিয়ে কামরান অবশ্য গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘ডালিয়া নামের কোনো মহিলাকে আমি চিনি না। কেউ বললেই তো স্ত্রী হতে পারে না। তার জন্য বিয়ের কাবিনসহ তাকে প্রমাণ করতে হবে। এসব অপপ্রচার, মিথ্যা ও বানোয়াট ’।
এরই আলোকে শুক্রবার নগরীর দর্জিবন্দ, দর্জিপাড়া, রায়নগর, জল্লারপার ও মধুশহীদ এলাকায় গণসংযোগকালে কামরান বলেন, জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
নগরবাসীর সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে একটি মহল আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য নানা কল্পকাহিনী রচনা করছেন। কিন্তু এসব অপপ্রচার চালিয়ে নগরবাসীকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।
এদিকে, সিলেটের নির্বাচনী মাঠে কামরান সমর্থকেরা বেকায়দায় থাকলেও প্রতিপক্ষ আরিফুল হকের সমর্থকেরা রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। হেফাজত ইস্যুতে এবার কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক ভোটাররা আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থী কামরানের পরিবর্তে আরিফকে কাছে টেনে নিয়েছেন। এর ফলে কামরানের চেয়ে আরিফ এগিয়ে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডালিয়া ইস্যুতে কামরানের ভোট ব্যাংকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় আরিফ আরো এগিয়ে যাবেন এমনটি মনে করেন সচেতন ভোটাররা।
কামরানের স্ত্রী দাবিদার ডালিয়া ঢাকার ওয়ারীর ৮ র্যাংকিং রোডের ফরচুন টাওয়ারের সাউথ ভবনের ৬-বি ফ্যাটে নিজের মেয়েকে নিয়ে থাকেন। এই একই ভবনের ১১ তলায় থাকেন আওয়ামী লীগের এক মহিলা এমপি। ফরচুন টাওয়ারের মালিক আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সুধাংশু শেখর হালদার। তবে যে ফ্লাটটিতে ডালিয়া থাকেন তার ক্রেতা কামরান বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ডালিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। জানা গেছে সংবাদ প্রকাশের পর ডলিয়াকে ফ্লাট থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাসায় গেলে বাসার এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, তিনি বাসায় নেই। কোথায় গেছেন তা-ও জানেন না।
একটি সূত্র জানায়, ডালিয়ার গ্রামের বাড়ি দোহার উপজেলায়।
প্রথম স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর প্রায় ১০ বছর আগে কামরানের সাথে পরিচয় হয়। এরপর তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়লে একপর্যায়ে ডালিয়াকে বিয়ে করতে বাধ্য হন কামরান। ডালিয়ার আগের স্বামীর ঘরের ১৫ বছর বয়সের একটি মেয়ে রয়েছে তার।
এলাকাবাসী জানান, ঢাকায় এলেই এই ফ্যাটেই ডালিয়ার সাথে অবস্থান করতেন কামরান। মাঝে মধ্যে ডালিয়াকে নিয়ে গাড়িতে করে বাইরে যেতেও এলাকার লোকজন দেখেছেন।
এ ছাড়া ডালিয়া এই টাওয়ারে তার পরিচিতজনদের কাছে কামরানের স্ত্রী হিসেবেই পরিচিত।
কারণ কামরান যখন এই ফ্লাটে অবস্থান করেন তখন দলের অনেক নেতা কামরানের সাথে সাক্ষাতের জন্য এই ফ্যাটে যাতায়াত করতেন। যার কারণে ডালিয়া-কামরানের বিষয়টি তারাও জানতেন।
এ ছাড়া ডালিয়া যে মোবাইল ব্যবহার করেন সেই সিমের রেজিস্ট্রেশনে স্বামীর নামের স্থানে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নামে একজনের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। গত বুধবার পর্যন্ত ডালিয়ার মোবাইল নাম্বার খোলা থাকলেও বর্তমানে নাম্বারটি বন্ধ রয়েছে।
সাবেক মেয়র কামরানে ঘনিষ্ট সূত্রে জানা যায়,ডালিয়া সুলতানা হেপীর পাসপোর্টে স্বামীর নামের স্হানে বদর উদ্দিন কামরান লেখা রয়েছে। কয়েক বছর আগে লন্ডনের ভিজিট ভিসার জন্য কামরান ওই পাসপোর্টটি তার এক বন্ধুর কাছে জমা দিয়েছিলেন।
সংবাদ সূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।