আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধাক্কা

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.

বাসা পাল্টেছি এখনও একমাসও হয়নি। আমি আসার আগে এই বাসায় একজন ভাড়াটিয়া ছিলেন যিনি বাসার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করেছেন বলে বাড়িওয়ালার আক্ষেপ। তাই আমাকে ভাড়া দেওয়ার সময় তিনি কঠিন কঠিন সব শর্ত, বিশাল অংকের সিকিউরিটি ডিপোজিট আয়োজন করলেন। বাসায় উঠে আমি ওনাকে ১১টা খুঁতের ফর্দ বানিয়ে দিলাম। যেহেতু আগের ভাড়াটিয়া ঘর নষ্ট করেছে, ইতিমধ্যেই ওনার অনেক খরচ হয়েছে, তাই উনি এই বাসার পেছনে আর কোনও খরচ করতে নারাজ।

পড়লাম বিপাকে। জেনারেটরের কানেকশন যেভাবে থাকার কথা সেভাবে নেই। নিচের থেকে ইলেক্ট্রিকের লোক ডাকলাম। সে এসেই বল্লো ১০০০ টাকা দিতে হবে তার খাটুনির মজুরি। আমি অবাক হয়ে বললাম "আরে এই জেনারেটরের পয়েন্ট তো আমার পাওনা!!" মিস্ত্রি বলে "বাড়িওয়ালা টাকা দিবেনা, আপনি দিলে দ্যান, নাহয় আমি কাজ করবোনা।

" আমি তার কাছ থেকে কিছুদিন সময় চেয়ে তাকে বিদায় করে দিলাম। ডিশের কানেকশন আমি এই বাসায় উঠার দুদিন পরে নষ্ট হয়ে গেল। লোক ডাকলাম। সে এসে বল্লো ২০০০ টাকা না-দিলে সংযোগ দেবেনা। আমি বললাম "আরে সংযোগ তো ছিলই।

" তারা বল্লো নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে শুনে তারা সংযোগ কেটে দিয়েছে। আমি তাদের বললাম "ঠিকাছে লাইন দিয়ে যাও। সামনের মাসে টাকা দেওয়ার সময় আমি ২০০০ টাকা দিয়ে দেব। " এদিকে পুরোনো বাসার বাড়িওয়ালার কাছে আমি ৫০০০০ টাকা পাই সিকিউরিটি ডিপোজিট। বৃদ্ধ মুরুব্বি মানুষ, ঘর ছাড়ার দিন টাকা-নেই এক সপ্তাহ পরে দেব বলাতে আমি মুখের উপর তর্ক করতে পারিনি।

তাকে ফোন করলাম। ওমা, সে ২৬০০০ টাকা সেখান থেকে কেটে রাখবে!! কেনো? কারন আমার মেয়েরা বেডরুমের বারান্দার দেয়ালে ছবি এঁকেছে, সেজন্য পুরো ঘর রঙ করাতে হবে। বাসা শিফ্‌ট করার সময় এসি সার্ভিসিং করালাম। "আপা আপনার এসি'র এই পার্টসটা বদলায়ে দিসি। " জিজ্ঞাসা করলাম কেন? "এইটা নষ্ট হয়ে গেসিলো।

না বদলালে এমনিতেই জ্বলে যাইতো। " এরপরে আমার এসি আরো দু'বার নষ্ট হলো। দুইবারই সে মিস্ত্রি ২৫০০ টাকা নিয়ে পার্টস বদলে দিলো। শেষের বার বল্লো এক বছরের গ্যারান্টি। একটু আগে থেকে এসি আবার নষ্ট।

তাকে ফোন করলাম। বল্লো "আপা বাসা পাল্টান। আপনের বাসার ইলেক্ট্রিক লাইনে সমস্যা। নাইলে এমন ভাল জিনিস বারবার নষ্ট হয় ক্যান?" বুঝলাম আবার ২৫০০ টাকা খরচ করতে হবে। আমার একটা টাচ্‌প্যাড ফোন বদলাবদলি করলাম বান্ধবীর বান্ধবীর সাথে।

আমার ফোনটা কেনার ৪ দিন পরেই। টাচপ্যাড্‌ ফোনে আমি অভ্যস্ত নই, তার এক নোকিয়া মিউজিক এক্সপ্রেস নিয়ে নিলাম। সে থাকে চিটাগাং এ। বল্লো চিটাগাং এ গিয়ে এক্সেসরিস পাঠিয়ে দেবে। আমার বাসায় এসে সে আবার আমার ফোনটার এক্সেসরিস, ওয়ারান্টি কার্ড, মায় বাক্সটাও নিয়ে গেল।

আজ ২০ দিনের উপরে হয়ে গেল। চিটাগাং থেকে কিছুই আসেনি। কয়েকবার ফোন করেছি। আজ দেবো, কাল দেবো---এইই চলছে। এরকম ছোট ছোট অনেক ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি আজকাল।

প্রতিনিয়ত। বলতে গেলে প্রতিদিনই। খুব ইচ্ছে করে মানুষকে বিশ্বাস করতে। কিন্তু আজকাল অবাক লাগে ভেবে, আমি যত সহজে সবাইকে বিশ্বাস করি, তারা কিন্তু সেটা করেনা। আমি নিজে দিয়ে তারপর প্রতিদান আশা করি, অন্যেরা আগাম প্রতিদান নিয়ে চম্পট মারে।

দু'বছর একেবারে ঘরে বসে ছিলাম। বাচ্চারাই ছিল আমার জগৎ। এর বাইরে ছিল তরকারিওয়ালা নাহয় ছুটা বুয়া, আর ভাইবোন-বাবা-মা। আজকাল বহির্মূখী হচ্ছি, মানুষের সাথে মিশছি, আর অবাক হয়ে যাচ্ছি। কেনই বা অবাক হচ্ছি? দুটো বছরে কি আমি ভুলেই গিয়েছি "মানুষ আসলে কেমন?" কেন বারবার মন খারাপ হয়??


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।