কতো কী করার আছে বাকি..................
সূর্য শেষ আকাশের সীমানা অতিক্রম করলে সেখানে রাত নেমে আসে। ঘনকৃষ্ণ রাতের অন্ধকারে সেই শহরের অধিবাসীরা আরেকটি মৃত্যু প্রহর কাটায়। ভয়ের কাঁথায় অনিশ্চিত মৃত্যু সিথানে নিজের বুলেটবিদ্ধ-শোণিতে বাহিত মৃগতৃষিকার ভবিষ্যৎকে একান্তে আঁকড়ে ধরে রাত কাটায় তারা একমাত্র ঈশ্বরের উপর ভরসা রেখে। সেই অন্ধকারের আকাশে ফুটে থাকা বারুদস্ফুলিঙ্গই তাদের তারা। অথচ এই ভূমিতেই প্রচন্ড প্রকৃতিকে আঁকড়ে ধরে সেই নব্যপ্রস্তরের মানুষেরা গুহা বসতিতে রাত কাটাতো প্রত্যুষের অপেক্ষায়।
আর আঙুর চাষ শেষে তাদের পূর্বপুরুষরা এমনকি মৃত জনের লাশবীজ পুঁতে দিত অদেখা ভুবনের সমৃদ্ধি কামনায়। সেই রুক্ষভূমির আকাশে এখন জঙ্গীবিমানের ঘনঘন আতর্নাদ-বারুদের গর্জন রাতের ঘুমকে কেটে টুটাফাটা করে দেয়। লেলিহান মৃত্যু জিহ্বা চকিত দেখে নেয় কোথায় আছে এক বাবা যে সন্তান হারিয়েও বেঁচে আছে। কোথায় আছে এক মা, যার বুকে এখনো তার সন্তানের জন্য দুধ জমানো আছে। খুঁজে বের কর তাদের-ছুটিয়ে দাও বারুদ দলা-যা তাদের বুকে পেটে বিস্ফোরিত হবে,লাল রক্ত ছলকে উঠবে-ওই নোনা সমুদ্রে ভেসে যাবে তাদের আগত জীবন-বালুতে চুষে নিবে তাদের স্বপ্ন।
আর দুধ দাঁত পড়েনি এখনো যে শিশুর, তার মুখের রক্ত মানচিত্রে আছড়ে পড়ে বিলাপ করবে কোন এক মা-হে রাতের আকাশ এখনো কেন তবে তুমি ভেঙ্গে পড়ছো না-কেন তবে জলপাই তরু এখনো বাতাসে দোল খাও-হা ক্যকটাস তোমার কাঁটাসুদ্ধ কেন তবে ছুটে আসনা এই নরখাদকদের দিকে-ওরা যে আমার সন্তানকে বাঁচতে দেয় না।
হয়তো নাগরিক চিন্তা মুক্ত আপনি যখন এই লিখা পড়ছেন তার প্রতিটি বাক্য কি শব্দের অন্তেই গাজায় আরেকটি মানুষ লাশ হয়ে গেল। সেই শহরের পাশেই যে অনন্ত সমুদ্র নোনা বাতাস ছুটায়-শুষ্ক বালি হঠাৎই চরাচরে অন্ধকার ডেকে আনে তাদের বুকে তো লিখা থাকবে না কোন এক মরা বালকের কথা যে ওই বালি দিয়ে ঘর বানিয়েছিল। সমুদ্রও লিখে রাখবে না কোন এক বুলেটবিদ্ধ কিশোরীর কথা বিস্তীর্ণ সমুদ্র দেখে যার বুকে একদিন হুহু উঠেছিল। এ শুধু মানবের ইতিহাসেই লিখা থাকবে।
সভ্য মানুষ-শিক্ষিত মানুষ কাতারে কাতারে মানুষ মারে, এই নিষ্ঠুরতা অবশ্যই লিখা থাকবে মানবেতিহাসে। যেমন লিখা আছে সাত সাতটি ক্রুসেডের কথা। ঘোড়ার উরু পর্যন্ত রক্ত উঠেছিল সেই ক্রুসেডে । মানুষ মেরে আট্রহাস্য করে ছিলেন দাপিয়ে বেড়ানো ধর্ম রক্ষীরা। যে যায়ন পাহাড়ে রোদ্র ঝিলিক দিয়ে উঠত- তাতে ক্ষণে ক্ষণেই ঝিলিক দিয়ে ওঠে মৃত্যু বিমান।
ভূমির ইতিহাস বিকৃত করে মানুষ। ভূমিতো মানুষ-গোষ্ঠি-ধর্ম ভেদে ভাগ হয় না। প্রকৃতির অনিবাযর্তাতেই ভূমির ভাঙ্গন ঘটে। আর মানুষ ভূমি ভাঙ্গে ধর্মের ভিত্তিতে । নাট্যাচার্য সেলিম আল-দীনের একটি উক্তি স্মর্তব্য-তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে সে সকল মানুষের সম্মতিতে নয় বরং ইংরেজ-ফরাসী-স্প্যানিশ ও পোর্তুগিজ শাসকদের ষড়যন্ত্রের ফলে।
আজ এশিয়া আফ্রিকা ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলির দিকে তাকালে বুঝতে পারি রাষ্ট্র সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করেছে।
ভারত উপমহাদেশর ইতিহাস অনুল্লেখ্যই থাক। ফিলিস্তিন-ইসরাইলের ইতিহাসেও সেই বহিরাগতদেরই দেখা যায় ভূমি ভাঙতে রাষ্ট্র দখল করতে । প্রথমে মুসলমানরা তারপর ইউরোপিয়রা। কতো মানুষের হাড়গোড় পাওয়া যাবে ওই ভূমিতে।
অসংখ্য-অগুণতি। তার খবর কেউ দিতে পারবে না-কেবল ইতিহাস বিকৃতি-ধর্মের আর সম্পদ দখলের দড়ি টানাটানি। সেই দড়ি টানতে টানতে ধারালো হয়ে গেলে তাতে কাটা পড়ে মানুষের লাশ আর ভূমি। গুঙিয়ে ওঠে ইতিহাস সিঁটিয়ে যায় মানবতা। আর অট্রহাস্য ভেসে বেড়ায় সেই প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে-সেই আরব সাগরের পাড়ে-ইউরোপে আর যুক্তরাষ্ট্রে।
সেই বুশ সেই ওবামা। বছর শেষের মদাসক্ত রাতে আগুনে পোড়া মানুষওতো পাওয়া যায় পৃথিবীতে। দুই মৃত্যুর কতো তফাত-ওই একজোড়া জুতায় কি নেয়া হবে সমস্ত মৃত্যুর প্রতিশোধ।
১৮৬৭ সালে মার্ক টোয়েন গিয়েছিলেন ফিলিস্তিন ভূমিতে- তিনি দেখেছিলেন সেখানকার ভূমির রুক্ষতা- তার মতে সে যেন এক অন্য পৃথিবী-এখানে কোন বৃক্ষ নেই এমনকি ক্যকটাসও না। মানুষ পাওয়া যায় না অনেক দূর হাঁটলেও।
মার্ক টোয়েন আরেকটি বিষয দেখেছেন কিনা জানা হয়নি- কি এক অমানবিক ইতিহাসের জের টেনে চলেছে এই ভূমির মানুষেরা-দখল আর পাল্টা দখলের ইতিহাস-পাল্টাপাল্টির রাজনীতির আগুনে পুড়েই কি এতোটা রুক্ষ হয়ে উঠেছে তার দেখা সেই ফিলিস্তিন। তারপরও টোয়েনের দেখা সেই ভূমিতে যাদের রক্ত-ঘাম লেগেছিল তার দখল কে নিতে চায়। প্রচন্ড সেই প্রকৃতির কোলে যারা বুনেছিল জীবন যাপনের কাঁথা তার দখল নিতে চায় কারা। ওই নোনা বাতাসে আর শুষ্ক বালিতে যারা পেতেছিল তাদের সংসার আজ তারা দেয়াল ঘেরা। যে দিকে দেয়াল নেই সেখানে মৃত সাগর।
রামায়ণের সেই যম সাগরের কথা মনে হয়। যেখানে ভেস বেড়াবে শুধু লাশ আর লাশ। হায় মানুষ এই তোমার সভ্যতা, তুমি আর তোমার সন্তান ইট-সিমেন্ট লোহায় বন্দি। কেবল একটি পথই তোমার জন্যে খোলা আর তা হচ্ছে মৃত্যু। তুমি যদিও একই সূর্যের আলোয় সংসার কর- তুমিও হয়তো খেতে পাও-সন্তান পালন করো-কিন্তু তোমার ধর্ম ভিন্ন-তোমার ভূমিতে অন্যেরা চাষ করবে- সেখানকার যা সম্পদ তার শক্তিতে সে সবই দখল করবে।
তোমার যদি শক্তি থাকে তবে ঠেকাও। নইলে জমি তার। আর জেনে রাখো এর জন্যে তার কোন আনুশোচনা নেই। কাতারে কাতারে মানুষ মারলেও নিজের সন্তানের লালা মুখে সে কখনোই রক্ত দেখবে না, এটা যেনে রাখো।
ধূধূ মরুতেও প্রানের সঞ্চার ঘটে।
সেই মৃত্যুপুরিতেও একজন কবি জেগে ওঠেন মৃত মানুষের স্বপ্ন আর মৃত্যুকষ্ট ধারণ করে। তিনি মাহমুদ দারবিশ। তার কবিতায় তাই মুক্তির বাণী-মৃতের আর্তনাদ-
এই দুনিয়ায় আমাদের কোন জায়গা নেই এবং আমাদের হাশর-নশর হবে পথের শেষ প্রান্তে
সংকীর্ণ পথটা পার হওয়ার জন্য আমরা তখন খুলে ফেলব আমাদের হাত-পা
দুনিয়াটা আমাদের নিংড়াচ্ছে
আহা ! আমারা যদি হতাম পৃথিবীর গমদানা !
মৃত্যুর পর আবার জন্মাতাম বারবার,
দুনিয়াটা যদি হত আমাদের মা-মমতাময়ী কোনো মা !
যদি আমরা হতাম পাথরের গায়ে আঁকা ছবি, একদিন যা বেড়ে উঠবে আমাদের স্বপ্নের গর্ভে !
সেই কবির প্রতিটি ছত্রের দাবি বন্ধ হোক গণহত্যা, প্রতিটি শব্দ ধেয়ে যাক বারুদ ছোটানো নলের দিকে-বন্ধ করে দিক সমস্ত কামানের মুখ। ওই সমস্ত চুক্তি মানেই নীলনক্সায় আগুন হয়ে উঠুক দারবিশের কবিতা। অস্ত্রধারী ধর্মের উর্দি ছিঁড়ে ফেলুক সেই কিশোরীর ময়লা লাগা নখ যে দুগ্ধবতি হতে পারেনি নিষ্ঠুর বুলেটের আঘাতে।
সন্তানগর্ভা মৃত মায়ের শেষ মুহুর্তের ঘৃণার ঝিলিক ছুটে যাক খুনে বিমানগুলোর দিকে। আর যারা লাশভরা মানবেতিহাসের পাড়ে দাঁড়িয়ে মুখে হতাশা আর করুণা ফুটিয়ে ভবিষ্যতের উষ্ণতায় দিন গুনছিলেন, লাশ দেখে যাদের মুখে থুথু জমেছিল তারাও সেই থুথু ছিটিয়ে চিৎকার করুক- পবিত্র লতার কসম হত্যাকারীদের ক্ষমা নাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।