আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কারণে এক সেকেন্ড দেরিতে শুরু হল ২০০৯ সাল

অজানা গন্তব্যহীন পথে হঠাৎ নানা ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ উদ্দ্যেশ্যের জন্ম হয় নিজের মাঝে, । সেই গন্তব্যহীন পথে নানা নতুন নতুন উদ্দ্যেশ্যের পিছনে আমার ছুটে চলা, আমার বিরামহীন পথ চলা।

নতুন ইংরেজি বছর শুরু হয়েছে এক সেকেন্ড পরে। কিন্তু এবার কি এমন ঘটনা ঘটলো যে চিরাচারিত নিয়ম ভেঙ্গে এক সেকেন্ড দেরি করে নতুন বছরের প্রথম প্রহরের স্পর্শ পেতে হল। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার কারণেই এমনটি করতে হয়েছে।

ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর সঙ্গে তাল মেলাতে বিশ্বের সময় নিয়ন্ত্রণ (আইইআরএস) কর্তৃপকে এ উদ্যোগ নিতে হয়েছে। চিরাচরিত নিয়মে ২৪ ঘন্টায় এক দিন। তবে পৃথিবী যে কাঁটায় কাঁটায় ২৪ ঘন্টায় নিজ কপথে ঘুরে আসছে, এমনটিও এখন আর সঠিক নয়। দিনে দিনে সময় গণনার প্রযুক্তি (পারমানবিক ঘড়ি) খুবই নিখুঁত হওয়ায় সঠিক হিসেব এখন আনায়াসে বের করা সম্ভব। তাই প্রায়ই দেখা যায় কোন কোন বছর এক সেকেন্ড বেশি স্থায়ী থাকে।

প্রচলিত সময়ের সঙ্গে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময় ঠিক রাখতে ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারে›স সিমেস সার্ভিসকে (আইইআরএস) কয়েক বছর পর পরই বাড়তি সেকেন্ড যোগ করতে হচ্ছে। ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সময় বেড়েছে ২৩ সেকেন্ড। শেষ ২০০৫ সালে এধরনের সময়ের পরিবর্তন করতে হয়েছিল। সময়ের তারতম্য নির্ণয়ে পারমানবিক ঘড়ি আবিষ্কারের আগে কারো পইে সময়ের তারতম্য জানা সম্ভব ছিল না । আর এই পারমানবিক ঘড়িতে সিজিয়াম, হাইড্রোজেন কিংবা রুবিডিয়ামের মত পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা ওসিলেসন ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহৃত হয়।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব স্টার্ন্ডাড টেকনোলজির (এনআইএসটিতে) ইঞ্জিনিয়ার এন্ড্রু নোবিক এর মতে, বর্তমানে তিন ধরনের পারমানবিক ঘড়ি ব্যবহার হয়। প্রাইমারি স্টান্ডার্ড ঘড়ি, যা শুধুমাত্র ব্রিটেন, জার্মানী এবং আমেরিকায় ব্যবহার হয়, বাণিজ্যিক ভাবে পাওয়া যায় রেক মাউন্টেড ভার্সন যার বর্তমান বাজারমূল্য চল্লিশ হাজার ডলার এবং রেডিওÑকন্ট্রোল্ড ঘড়ি, যার একটি আছে এনআইএসটিতে। সময়ের এমন পরিমাপ কোন ক্রমেই সম্ভব হত না যদি পারমানবিক ঘড়ির ব্যবহার না হত। এই পারমানবিক ঘড়ি সময়ের সু¥ হিসেব করা ছাড়াও আরো বেশ কিছু কাজে ব্যবহৃত হয়। ইন্টারনেটের ডাটা প্রসেস কিংবা জিপিএস নেভিগেশন কোন কিছুই সম্ভব হত না এই পারমানবিক ঘড়ি ছাড়া।

এটা নিঃসন্দেহে বলতে হয় পারমানবিক ঘড়ি বিজ্ঞানের এক অনন্য জয়যাত্রা। পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে যদি সময়ের তারতম্য করা না যেত তবে হয়ত দেখা যেতো অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই নিজের ঘড়িতে দুপুর ৩ টা বাজছে কিন্তু মনে হত সবে সূর্য উঠেছে। তাই এই পরিবর্তনটা যথার্থই করা হয়েছে বললেন ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির কর্মকর্তা। তা না করা হলে হয়ত দিনে দিনে আমাদের পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সময়ের গতির মিল খুঁজে পাওয়া সম্ভব হত না। এবারের থার্টিফাস্ট নাইটে লন্ডনের গ্রিনিচ মান নিয়ন্ত্রণ ঘড়িতে ১১টা ৫৯ মিনিট ৬০ সেকেন্ডের পর মুহূর্তেই নতুন বছর শুরু হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু কারিগরি পরিবর্তন এনে সময় এক সেকেন্ড দীর্ঘায়িত করা হয়। তাই ২০০৯ সাল শুরু হয় এক সেকেন্ড দেরিতে। বিশ্বের বহু প্রতিষ্ঠানই আজ গ্রিনিচ মান সময় (জিএমটি) ও কো-অর্ডিনেটেড ইউনিভার্সাল টাইমের (ইউটিসি) সঙ্গে সময়ের হিসাব করে মিলিয়ে নেবেন তাদের ঘড়ির কাঁটা। তবে ব্যতিক্রমও থাকতে পারে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে। তবে ব্রিটেনের সময় নজরদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির পিটার হুইবারলে পরবর্তী প্রজন্মের স¦ার্থে হলেও সবাইকে নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

সহকর্মীদের নিকট ‘টাইম লর্ড’ বলে খ্যাত পিটার বলেন, কয়েক বছর পরপর এক সেকেন্ড পিছিয়ে পড়াটা কোনো ব্যাপার নয়। তবে এভাবে কয়েক শ বছর চলতে থাকলে দেখা যাবে ভরদুপুরে ঘড়ির কাঁটায় হয়ত মধ্যরাত দেখাচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.