আমার কল্পনার রঙে সাজানো ভালবাসার ছড়া-ছড়ি
আজ নির্বাচন। চারিদিকে নির্বাচনী প্রচারণা, স্বভাবতই পথে ঘাটে সবার একই আলাপ । দেশের পত্র পত্রিকা, রেডিও , টেলিভিশন সব কিছুতেই এখন নির্বাচনের আলাপ। সব চেয়ে মজার ব্যাপার দেখলাম সবাই এবার ভোট নিয়ে আগের চেয়ে অনেক সচেতন। ভাল লাগল টিভির কিছু নির্ভিক নির্বাচনী রিপোর্ট দেখে।
জনগণকে এভাবে সজাগ করার জন্য দেশের টি ভি চ্যানেলগুলি এবং সেই সব সাংবাদিকদের অনেক ধন্যবাদ। দেশের গণমাধ্যম গুলি যদি এভাবে সক্রিয় থাকে তবে আশা করা যায় জনগণের উপকার হবে তার ভোটটি কাকে দেবে বা কাকে দেবেনা এ ব্যাপারে সজাগ হতে। বিশেষ করে দেশের রাজাকার , আল বদর বা স্বাধীনাতা বিরোধী যারা এবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে, তাদের চিন্হিত করতে মিডিয়ার ভুমিকা অনেক বেশী।
সাধারণ মানুষ এখন অনেক বেশী সোচ্চার। সব জ়ায়গাতেই দেখছি মানুষ অন্তত একটি ব্যাপারে অনেক বেশী সোচ্চার।
সেটা হল যে কোন মুল্যেই হোক দেশের রাজাকার, আল বদর বা স্বাধীনতা বিরোধীদের তারা কোনভাবেই ভোট দেবে না। প্রয়জনে “না” ভোট দেবে। কদিন আগে একটি টি ভি চ্যানেলের খবরে দেখলাম কোন একটি এলাকার নির্বাচনী প্রচারণার সংবাদ, গ্রামের একজন বৃদ্ধ্য বলছেন যে ক্ষমতা দেশের নেতাদের হাতে না আমাদের হাতে , মানে জনগনের হাতে। আমরা ঠিক করব কে দেশ চালাবে, খুব মনবল নিয়ে বলা কথা গুলি আমাদের নতুন আশা দেখায়। আরও একটা উদাহরণ দেই, একজন রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেশ করলাম ভোট দিবেন নাকি? বলল অবশ্যই দেব।
আগে অনেক ভুল করেছি আর করবো না, দেশের কত গুলি শীর্ষ স্হানীয় রাজনৈতিক দলের নাম নিয়ে বললো এদের কাউকে আর বিশ্বাস হয় না, তাই “না” ভোট দেব। আমি বললাম যে, না ভোট দিলে দেশ চলবে কি ভাবে। বললো আমার কাছেতো কাউকেই মনে হয় না যোগ্য ভাবে দেশ চালাবে, মনে হয় আমাদের টাকায় পকেট ভরবে আর আমরা আরো গরীব হব। আমি না ভোট দিলে পরের বার আরো কোন যোগ্য প্রার্থী আসতে পারে। একজন সাধারণ মানুষের মুখে এমন কথা সত্যিই আমাদের জন্য নতুন দিনের আভাস দিচ্ছে ।
সাধারণ জনগণের এই সোচ্চার হওয়া সত্যিই খুব ভাল লাগছে। অতীত থেকে আমরা আসলে অনেক কিছুই শিখেছি। আজকাল কেউই আর ভোট বিক্রি করার দলে নেই। সবাই নিজের ভোটে সজাগ। সত্যিই আশার কথা।
আসলে এতদিন আমাদের দেশে জবাবদিহিতার বড্ড অভাব ছিল। তাই ক্ষমতায় গেলে আমরা নিজেকে নিয়েই ভাবতাম। কারণ জানি যে এ কয় বছরেই আমাদের পকেট ভরতে হবে। দেশের আসনে উপবেশ ক্ষমতাসীন দল ইচ্ছেমত সব কিছু করে। সাধারণ জনগণ সব দেখে, করার কিছুই থাকেনা তাই পরবর্তিতে আরেক দল কে নির্বাচিত করে।
সেইদলও একই দৃশ্য দেখায় তাদের পাঁচ বছরের ক্ষমতার নাটকে। আমারা সাধারণ জনগণ শুধুই সহ্য করি এসব কিছু। কিছুই করার থাকেনা। সুদিনের আশায় পথ চেয়ে থাকি। বার বার ঘুরে ফিরে এরাই ক্ষমতায় আসে আর একই কাজ করে।
যদি রাষ্ট্রীয় ভাবে জবাবদিহিতা থাকতো তবে এমন হতে পারতো না। দিন বদলাচ্ছে, শিক্ষিতের পাশাপাশি অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত জনগণ সবাইকে এবার দেখছি অনেক সজাগ। অনেক নির্বাচনী এলাকায় যেখানে স্বাধীনতা বিরোধী বা রাজাকার যারা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে, সেসব এলাকার লোকজনের সাথেও কথা বলে দেখেছি তারাও দরকারে “না” ভোট দেবে কিন্ত দেশের শত্রুকে তারা ভোট দেবে না। রাজনৈতিক দলগুলির উচিত ছিল প্রার্থী নির্বাচনে অনেক সজাগ হওয়া, কিন্ত তারা যে যখনই ক্ষমতায় ছিল কেউই চেষ্টা করেনি স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার করতে। কেন যেন মনে হয় সময় এসে গেছে।
দেশের যারা শত্রু বা স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের প্রথম বিচার হবে এই নির্বাচনে, সাধারণ জনগণের হাতে। এ প্রার্থীদের ভোট না দিয়ে জনগণ করবে তাদের প্রথম বিচার। আর কোন দিন আমাদের জ়াতীয় পতাকা আমরা তাদের গাড়িতে দেখতে চাই না। দেশের জনগণের প্রায় অর্ধেক নারী। অতীত ইতিহাস সবাই জানে, এদেশের নারীদের সম্ভ্রম লুটেরা আর প্রয়োজনে দেশের নিরিহ নারীদের হায়েনার হাতে তুলে দেওয়া দেশের শত্রুদের অন্তত নারীরা কেউ ভোট দেব না।
আমাদের মা বোনের সম্ভ্রমের প্রতিশোধ নেব আমরা এদের ভোট না দিয়ে। দেখে শুনে মনে হ্য় দেশের অনেক নির্বাচনী এলাকাতে এবার “না” ভোটের সংখা বেশী হবে। গত দুবছরে আমরা দেখলাম দেশের অনেক স্বনাম ধন্য নেতাদের স্বরুপ। খুব লজ্জা লাগে যে দুবছরে খুঁজে পাওয়া অনেক কেলেংকারির নেতারা আবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে এবং নির্লজ্জের মত আবার সাধারণ মানুষের কাছে আসছে তাদের ভোট দেবার আকুতি নিয়ে। দেশ ভুলে যেতে পারে সব, কিন্ত সাধারণ মানুষ ৩৭ বছরের তিলে তিলে পাওয়া কষ্টকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে যায় নি।
যদি সত্যি জনগণ এবার একটা সুযোগ পায়। দেখিয়ে দেবে যে সবার জন্য এদেশে জবাবদিহিতা আছে আর কার কাছে না হোক দেশের সাধারণ জনগণের কাছে।
আগে জনগণের আর কোন উপায় ছিল না। এক দুইটি রাজনৈতিক দল মাত্র, মন মত প্রার্থী না হলেও ভোট দিতে হোত। এবার না ভোটটি সত্যিই আমাদের জন্য আশাব্যাঞ্জক ।
আশাকরি এসুযোগ ভালমত কাজে লাগিয়ে আমরা এ দেশের নির্বাচনে নতুন একদিক উন্মোচন করতে পারবো। ৩৭ বছরের হিসাব নিকাশের সময় এসেছে, এ হিসাব নিকাশ নিজেদের সাথে নিজেদের। এই ইতিহাস থেকে বিচার বিশ্লেষণ করুন, কাকে ভোট দেবেন আর কাকে দেবেন না, কে দেশ চালাবে আর কাকে নেতৃত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া উচিত। আমাদের এই “না” ভোটের সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে দেশে সুযোগ্য কিছু লোককে কাজ করার সুযোগ করে দিতে পারি এবং অযোগ্য দের সরিয়ে দিতে পারি। একটা মাত্র সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তন করা সম্ভব।
একবার যদি সুস্হ ধারার রাজনীতি দেশে প্রতিস্ঠত হ্য়, তবে অনেক সুযোগ্য নাগরিক আসবে এদেশের রাজনীতিতে এবং যারা রাজনীতিটাকে তাদের ব্যাবসানীতি বানিয়েছিল তারাও হয়তো সে পথ থেকে সরে আসবে, কারণ জানবে জনগণই সকল ক্ষমতার অধিকারী এবং জনগণের কাছে একদিন জবাবদিহিতা করতে হবে। এবার নির্বাচনে আমরা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচনী করি। শুধুই আমরাই পারি এ দেশের উদীয়মান গায়িকা সায়ানের একটি গানের কটি লাইন মনে পড়ছে এই নতুন নির্বাচনের “না” ভোট প্রসঙ্গে।
“আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার দিনতো শেষ, নাম আমার জনগণ আমি বাংলাদেশ। "
সত্যি আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গার দিন যেন শেষ হয়, আমরা যেন দেশের সামগ্রিক চিত্র কিছুটা হলেও পরিবতন করতে পারি আমাদের সুচিন্তিত মতামতটি কাজে লাগিয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।