আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনে সেই গডফাদার প্রার্থীরা

অজানা গন্তব্যহীন পথে হঠাৎ নানা ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ উদ্দ্যেশ্যের জন্ম হয় নিজের মাঝে, । সেই গন্তব্যহীন পথে নানা নতুন নতুন উদ্দ্যেশ্যের পিছনে আমার ছুটে চলা, আমার বিরামহীন পথ চলা।

রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে যারা নিজ এলাকায় এমনকি দেশজুড়ে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ লালনকারী, জঙ্গি মদদদাতা ও গডফাদার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার প্রত্যয় নিয়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলেও আগামী ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সেই বর্ণচোরারা অনেকেই প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকার পর আবার কেউ কেউ জেল খেটে বের হয়ে অতীতের সবকিছু ছাপিয়ে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে আবার ভোট চাইছেন। বিএনপি-জামাত নেতৃত¦াধীন চারদলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া এসব সন্ত্রাসী গডফাদারদের যারা আইনি মারপ্যাঁচে এবার প্রার্থী হতে পারেননি তাদের পরিবার থেকে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হয়েছে! সূত্র মতে, পুরান ঢাকায় সন্ত্রাসীদের মহাগুরু হিসেবে পরিচিত, কারাগারে ডেপুটি জেলারকে পিটিয়ে হালে আলোচিত সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ঢাকা-৭ আসনে পেয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন।

জোট সরকারের ৫ বছরে পিন্টু ও তার ক্যাডাররা ছিল পুরান ঢাকার এরুছত্র অধিপতি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ড, বোমাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে ছিল তাদের একক নিয়ন্ত্রণ। একইসঙ্গে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে নির্যাতন ও মামলা দিয়ে হয়রানির এন্তার অভিযোগ ছিল পিন্টুর বিরুদ্ধে। এমনকি তাদের সরকারের সময়ই চাঁদাবাজি মামলায় পিন্টুকে কারাবাস করতে হয়েছে। এদিকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আলোচিত সাবেক ¯¦রাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ¯¦তন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

সরকারে থাকার সময় বসুন্ধরা গ্র“পের আইটি বিভাগের কর্মকর্তা সাব্বির হত্যা মামলা থেকে বসুন্ধরা গ্র“পের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান শাহআলমের পুত্র সানবীর সোবহানকে বাঁচিয়ে দিতে ২০ কোটি টাকা ঘুষ নেন এই বাবর। তার নির্দেশেই ২০০৪ সালেল ২১ আগ¯ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলা, সিলেটের হযরত শাহ জালাল (রহ) মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা মামলা, রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলা ধামাচাপা দেয়ার সব আয়োজন স¤পন্ন হয়। টঙ্গীর সাবেক সাংসদ আহসান উলাহ মা¯টার হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সচিবালয়ে তার কক্ষ থেকে কথিত ঘুষদান নাটকে গ্রেপ্তার করা হয় সিআইডির এএসপি আব্দুল বাতেনকে। ¯¦াধীনতাযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকাসহ সন্ত্রাসী গডফাদার হিসেবে পরিচিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চট্টগ্রাম-২ ও ৬ আসনে। তার বিরুদ্ধে প্রাইভেট বাহিনী গঠন, সন্ত্রাসী লালন ও খোদ নিজ দল এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।

ফেনী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল। জোট সরকারের ৫ বছরে সন্ত্রাস ছিল তার ছায়াসঙ্গী। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঘর-বাড়িছাড়া করে তিনি ছিলেন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তার বাহিনীর চাঁদাবাজিতে ৫ বছর অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। বগুড়ায় সংখ্যালঘুদের কাছে রীতিমতো এক আতঙ্কের নাম শোকরানা।

গত ৫ বছর দাপিয়ে বেড়ানো এই শোকরানা যৌথ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ছাড়া পেয়েছেন। ৫ বছরে স্থানীয় প্রশাসনকে জি¤িম করে রাখা এই শোকরানার প্রার্থিতায় জনমতে ক্ষোভ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের ত্রাস হিসেবে পরিচিত সাবেক সাংসদ সারোয়ার জামাল নিজাম জোট সরকারের ৫ বছরজুড়েই ছিলেন আলোচনায়। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিনকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুমের ঘটনায় তার নাম ছিল শীর্ষে। এছাড়া অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা অভিযোগে তিনি ছিলেন টক অব দ্য টাউন।

ঢাকার শ্যামপুরে পানি-বিদ্যুতের দাবিতে নাগরিক আন্দোলনে স¤িমলিত জনতার বিপক্ষে অবস্থা নিয়ে দৌড় সালাউদ্দিন হিসেবে পরিচিত সাবেক সাংসদ সালাউদ্দিন আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-৫ আসনে। তার ছেলে রাসেলের প্রাইভেট বাহিনীর চাঁদাবাজিতে সেখানকার ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ বলে গণমাধ্যমে একাধিকবার খবর বেড়িয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে আলোচিত শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কুমিলার একটি আসনে। শরিয়তপুরের একটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সন্ত্রাসীদের প্রশয়দাতা হিসেবে জোট সরকারের সময় যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক সাংসদ হেমায়েত উলাহ আওরঙ্গ। পটুয়াখালীর একটি আসনে প্রার্থী সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত শহিদুল আলম তালুকদার।

জোট সরকারের সময় ¯¦রাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসীদের গডফাদার ও ভূমিদস্যু হিসেবে চিহিপ্তত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুম প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-১০ আসনে। সন্ত্রাসীদের মদদদান ও দুর্নীতির বটবৃক্ষ হিসেবে আলোচিত বরিশালের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সারোয়ার বরিশাল-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী। অপরদিকে সন্ত্রাসীদের গডফাদার, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জের মুকুটহীন সম্রাট হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি নেতা নাসিম ওসমান মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জের একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া টাঙ্গাইল-২ আসনে ২১ আগ¯ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে জঙ্গি গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বদলে তার ছোটভাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। সাজাপ্রাপ্ত এবং আত্মগোপনে থাকায় জঙ্গি মদদদাতা বলে পরিচিত জোট সরকারের মন্ত্রী ব্যারি¯টার আমিনুল হকের বদলে রাজশাহী-২ আসনে তার ভাই ড. এনামুল হক, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও সন্ত্রাসীদের মদদদাতা হিসেবে চিহিপ্তত সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মু›সীর স্থলে তার স্ত্রী মাজেদা আহসানকে কুমিলা-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে টঙ্গীর জনপ্রিয় সাবেক সাংসদ আহসান উলাহ মা¯টার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুরুল ইসলাম সরকারের ভাই হাসানউদ্দিন সরকার এবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হাসান সরকারের বিরুদ্ধে জোট সরকারের সময় প্রাইভেট বাহিনী গঠন করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ছিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.