সেই ভোলায় এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘুরা আতংকে আছেন।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে চিহ্নিত রাজাকার ফয়েজ এর নেতৃত্বে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি ও মন্দির দখল করেছে। কেরানীগঞ্জের নির্যাতিত সংখ্যালঘু নারী সবিতা ভট্রাচার্য অভিযোগ করে বললেন, তাকে হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে 'নির্বাচনের পর তোদেরকে দেশ ছাড়া করা হবে'। এধরনের হুমকির পর থেকে এলাকার সংখ্যালঘুরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন।
উপসংহার : বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ওপর চলছে আর্থিক, শারীরীক, মানসিক ও রাজনৈতিক নির্যাতনসহ বহুমাত্রিক নির্যাতন।
এসব নির্যাতনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মদদ রয়েছে। সমসাময়িক বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মানুষ। স্বাধীনতার পর প্রায় সব সরকারের আমলে আমাদের দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের লোকেরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু বিগত ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামাত জোট সরকার মতা গ্রহণের পর থেকে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নির্যাতনে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। অথচ সংবিধানে সকল ধরনের নির্যাতন নিষিদ্ধ।
আজকে আমাদের যে বুদ্ধিবৃত্তিক দীনতা, নীতি ও আদর্শহীনতার যে বিকট চেহারা, ভ্রষ্টাচারের যে দানবীয় মূর্তি, পচনশীলতার যে আগ্রাসন গোটা সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে তার জন্ম আমাদের মধ্য থেকেই। আমরা প্রত্যাখ্যান করতে পারি না। অসততাকে, পচনশীলতাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করতে পারি না। মানুষ আর মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখার মত মানসিকতা আমাদের ক’জনার আছে। ক'জনই বা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকল মানুষকে সমান মনে করতে পারি।
দায়িত্বশীল, সংবেদনশীল সহযোগিতার হাত আমাদের সবাইকে বাড়াতে হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে আমরা অনেকেই ঘটনার পর পরই দু'একদিন মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন করেই দায়িত্ব শেষ করি।
পরিশেষে আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী স¤প্রদায়ের লোকজনকে অনেকেই বিশেষ রাজনৈতিক দলের ভোট ব্যাংক বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু তারাও কি কার্যকর ও যথাযথভাবে নির্যাতিতদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পেরেছেন? বিগত সময়ে ওই বিশেষ রাজনৈতিক দলের যারা নির্বাচিত এমপি ছিলেন এবং এবারের নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে মাঠে নেমেছেন তাদের নির্যাতন বিরোধী উল্লেখ করার মত কি কাজ রয়েছে? যা নিয়ে ভবিষ্যতে ‘ভোট ব্যাংক’ এ হাত দিয়ে নিজেদের ঘরে ক্যাশ করবেন। যারা সংখ্যালঘুদের নিজস্ব ভোটব্যাংক হিসেবে মনে করেন তাদের তরফ থেকেও সংখ্যালঘু নির্যাতন কম হয়নি।
গোপালগঞ্জ-বরিশালে সরজমিন তথ্যানুসন্ধান করলে তার প্রমাণ মিলবে।
পত্রিকায় বিবৃতি ও সমাবেশ, গোল টেবিলের ছবি কিংবা খবর ছাপার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে সৎ ও নীতিনিষ্ঠ আদর্শকে সামনে রেখে কার্যকর আন্দোলন ছাড়া সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা যাবে বলে মনে করিনা। সর্বোপরি আগে জরুরি আমাদের মনোনজগতের অসা¤প্রদায়িকতাকে ঝেঁড়ে ফেলে পরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠা। মানুষকে মানুষের মর্যাদা প্রদান করাই হবে নির্যাতন বন্ধের অন্যতম হাতিয়ার। দেশে কার্যকর গণতন্ত্র, সুশাসন, আইনের শাসন না থাকলে শুধু সংখ্যালঘু নির্যাতনই নয় কোন ধরনের নির্যাতনই বন্ধ করা যাবে না।
নির্বাচন উত্তর ও নির্বাচনপূর্ব সময়ে যাতে কোন ধরনের সংখ্যালঘু নির্যাতন, নিপীড়ন, লুটতরাজ এর ঘটনা না ঘটে তারজন্য প্রশাসনকে বিশেষ কর্মপন্থা এখনই গ্রহণ করে তা কার্যকর করা উচিত বলে মনে করি। #
লেখক : সাংবাদিক, কলামিষ্ট, গবেষক
এবং নির্বাহী পরিচালক, জাষ্টিজ ফাউন্ডেশন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।