আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবতাবিরোধী বনাম পদ্মা সেতু

মানুষ যখন তার কাঙ্খিত কোন কিছু না পায় বা হারিয়ে ফেলে তখন উচিৎ-অনুচিৎ, মুলক-অমুলক, ন্যায়-অন্যায় অনেক কিছুই চিন্তা করে। এই মূহুর্তে গোটা জাতি তথা বাঙালী একটি জিনিস হারিয়ে ফেলেছে, তা হলো সরকারের উপর আস্থা, আর তা হলো মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায়। সমগ্র জাতি যেখানে আশা করেছিল তার ফাঁসির রায় হবে, সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ঘোষনা করলো তার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায়। অথচ আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো ছিল পূর্বে ঘোষিত আর একজন মানবতা বিরোধী অপরাধী আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকেরর চেয়ে ভয়াবহ এবং যার ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত। তাহলে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হলে কোন যুক্তিতে আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়।

এখন সকলের প্রশ্ন- কতগুলো বা কতটা খুন করলে বিচারের কাঠগরায় একটা মানুষের ফাঁসির রায় হতে পারে এবং একটই দাবী আব্দুল কাদের মোল্লা সহ অভিযুক্ত সকল মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি। মিটিং-মিছিল তো দূরের কথা কিছুদিন আগেও যেখানে জামাত-শিবির ঘরোয়া কোন বৈঠক করতে পারতো না, সেখানে কোন যাদুর কাঠির স্পর্শে বা নির্দেশে বা সমঝোতায় তারা পুলিশি সহযোগিতায় মতিঝিলের মতো ব্যস্ত এলাকায় হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ করে, দেশের বিভিন্ন স্থানে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে পুলিশকে শুভেচ্ছা জানায়। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে গত কয়েক মাসে যা হয়ে গেল তা তো এদেশের সকল জনগন জেনেছেন এবং দেখেছেন। এক আবুল-কে বাঁচাতে আমরা ষোল কোটি মানুষের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিতেও দ্বিধা বোধ করিনি। তাহলে তো এটাই প্রমানিত হয় যে ষোল কোটি মানুষের থেকে ঐ আবুল অনেক বেশী গুরত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ।

একটা সময় আমরা একটু বোকা বা কম বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে ডাকতাম “আবুল” বলে। এ ঘটনার পর সেই সংগাও পালটে গেছে। আবুল এখন অনেক ক্ষমতাধর ও মর্যাদার প্রতীক। পদ্মা সেতুর অর্থায়নের ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংকের চুড়ান্ত বৈঠক ও সিদ্ধান্তের ঠিক আগের দিন ক্ষমতাসীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরিয়ে নিলো তাদের অর্থায়নের অনুরোধ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন বা কাদের আশায় সরকার এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করলো।

আর এর পরপরই পালটে যেতে দেখলাম জামাত-শিবিরবের প্রতি সরকারের আচরণ ও আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায়। যেখানে অর্থের উৎসের কোন সুরাহে নেই সেখানে সরকার কিভাবে বলে যে মার্চ মাসের মধ্যে সেতর দুই পাসের এপ্রোচ রোড এবং অক্টোবর মাসের মধ্যে মুল সেতর কাজ শুরু করা হবে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নাকচ করার পর বলা হলো রেল লাইন বাদ দিয়ে নতুন নকশায় কাজ হবে, আবার তার পর দিনই বলা হলো নতুন নকশা নয় আগের নকশা অনুযায়ীই কাজ হবে। আর মাননীয় অর্থমন্ত্রী বললেন বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার অর্থায়নে হবে পদ্মা সেতু। কিন্তু বললেন না সেই বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার নাম।

তাহলে কি আমরা ধরে নেব সেসব দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো হচ্ছে জামাত-শিবির যুদ্ধপরাধীদের বন্ধু ও সাহায্যকারী ? যাদের সাথে হয়তো আঁতাত হয়েছে এই শর্তে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে অভিযুক্ত সকল অপরাধীকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিলে তারা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে। প্রথমেই বলেছি মানুষ যখন তার কাঙ্খিত কোন কিছু না পায় বা হারিয়ে ফেলে তখন উচিৎ-অনুচিৎ, মুলক-অমুলক, ন্যায়-অন্যায় অনেক কিছুই চিন্তা করে। তাই এ মুহূর্তে মাথার মধ্যে এসব লিংক কাজ করছে। জানিনা কোনটি সঠিক। শুধু জানি এবং একটাই দাবী সকল মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি চাই।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.