অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
সুশীল সমাজ নামে অদ্ভুত একদল জন্তুদের সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশে। যারা নিজের তাগিদেই গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল ধাঁচে বাংলাদেশের রুচি, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং এই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করেই যাচ্ছে। তারাই এইসব সুনাগরিক বোধের ধারক-বাহক এবং রক্ষক। তাদের এই রক্ষণশীল প্রবনতায় আমজনতার জীবন ওষ্ঠাগত।
সমাজে অনেক ধরণের ভাবনার স্রোত বইতে থাকে সব সময়ই।
কোনো বিশেষ মতবাদই সমাজস্বীকৃত একমাত্র মতবাদ হয়ে উঠে না। বরং বিভিন্ন সাংঘর্ষিক মতবাদের সম্মিলনেই একটা সমাজ টিকে থাকে। সেখানে প্রতিটা ব্যক্তি নিজস্ব একটা মতামত ধারণ করে- সম্মিলিত ঐক্য গড়ে উঠে কিংবা কোনো গোষ্ঠীভিত্তিক মতবাদ গড়ে উঠে পারস্পরিক লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে। এর চেয়েও বড় পরিসরে হয়তো কোনো একটা মতবাদ প্রচলিত হওয়া সম্ভব, তবে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত অনুভুতি ও স্বাচ্ছন্দ্যের বোধের বাইরে গিয়ে তেমন কোনো মতবাদ গড়ে উঠে না।
মানুষ মাত্রই স্বাধীন এবং যেকোনো মতামত গ্রহন করতে পারে এই অনুভবও অনেক সময় সামাজিক স্থিরতার শর্তকে ধ্বংসপ্রবন করে তুলতে পারে।
সাদ- ফ্রান্সের রক্তাক্ত বিপ্লবের আগে জন্মানো একজন মানুষ ঠিক একই রকম ভাবেই স্বাধীনতার অর্থ নির্মান করেছিলেন।
মূলত মর্ষকামীতার ইংরেজি স্যাডিজম এসেছে তারই নাম থেকে। বিকৃত যৌনাচার কিংবা সোডোমির বাইরে নির্যাতনপ্রবণ যৌনতৃপ্তি পাওয়ার পন্থা হয়তো সমাজে পূর্বে প্রচলিত ছিলো, তবে সাদ-এর কল্যানে সেটা একটা স্বীকৃতি পেয়ে যায়।
তার বিকৃত যৌন নির্যাতনের শিকার পরিচারিকারা তার নামে মামলা করলে সাদের যৌনতৃষ্ণার বিষয়টা ফ্রান্সের বিচারক মহলের নজরে আসে। একজন ব্যক্তি হিসেবে সাদ যদি এমন নির্যাতনপ্রবন হয়ে উঠেই নিজের যৌনতৃপ্তি খুঁজতে চায়- সেটা ব্যক্তিগত অভিরুচি হিসেবে কোনোভাবেই অগ্রহনযোগ্য বিবেচ্য হতে পারে না, কিন্তু সাদ নিজের উপরে নির্যাতন করে যৌনতৃপ্তি পাচ্ছে না, তার নির্যাতনের শিকার মেয়েগুলো সেটাকে নিজেদের যৌনতৃপ্তির মাধ্যম ভাবতে পারছে না।
সুতরাং সাদ-কেই অন্তরীণ করে রাখা হলো।
যদি সমাজ অসংখ্য মানুষের জটিল কোনো গ্রন্থিল আবাসন না হতো তবে হয়তো সাদ-এর বিষয়টা তেমন ভয়ংকর প্রমাণিত হতো না। নির্যাতন করে মানসিক তৃপ্তি পাওয়ার অভিজ্ঞতা সমাজে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষদের অভিজ্ঞতা হয়তো ভিন্ন তবে নির্যাতন প্রবণতা দেশকালনিরপেক্ষ। তাই ধর্মীয় উৎসবের নামে কিশোরিদের উপরে যৌন নির্যাতন করা যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় কিংবা সম্পূর্ণ অহেতুক বর্ণবিদ্বেষী মনোভাব কিংবা অতিসম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া অঘটনটিকে আশ্চর্য ব্যতিক্রম বলে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।
ক্যালিফোর্নিয়ার কোনো এক শহরে মানবতাবদী বিবেচিত একজোড় দম্পতি নিজেদের বাসার বেসমেন্টে এক কিশোরকে আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছে- এবং এই কিশোরের দাবি শুধুমাত্র এই দম্পতিই নয়, এর আগে সে যে বাসায় আশ্রিত ছিলো- সেই বাসার দম্পতিও এমন নির্যাতনপ্রবণ ছিলো।
একই সময়েই বাংলাদেশের একজন কিশোরী গৃহপরিচারিকার উপরে বর্বর নির্যাতন চালায় তার মনিব। যদিও মনিব শব্দটি দাস ব্যবস্থার কথাই স্মরণ করায় তবে নির্যাতনের মাত্রা এবং নৃশংসতা বিবেচনা করলে এই মনিব-ভৃত্যের সম্পর্কের ভেতরে ভাত দিয়ে শরীর কিনে নেওয়ার মতো অসভ্য একটা অনুভুতি রয়েছে।
সমাজ এইসব সামাজিক বিকৃতিকেও ধারণ করে- এবং আমাদের সভ্যতা- ভদ্রতা- সংস্কৃতি- রুচি- এইসব রক্ষা করছে যারা তারাও কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে এমনই নির্যাতন প্রবন সামাজিক মানুষ হয়ে উঠবার ক্ষমতা ধারণ করেন। এরও কিছু নিদর্শন চোখে পড়ে।
মানুষ মাত্রই ভালো মন্দের মিশেলে গড়া। যে মানুষটা মুখে সভ্যতার সংকট নিয়ে বিস্তর বক্তৃতা দিচ্ছে, সে তার নিজের মানসিক সংকট নিয়ে বিপন্ন। তার ভেতরে যে সভ্যতার বসবাস, যা পূঁথির পাতা থাকে তার চোয়াল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে সেই সভ্যতার জগতটাও ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে তার মানসিক সংকটে। সে নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে নিজেই নির্যাতন প্রবন হয়ে উঠছে- এমন মানসিক সংকট নিয়েও অনেকে জীবনযাপন করছে বাংলাদেশে।
তবে সমস্যা হলো এই বুদ্ধিজীবি-সুশীল প্রত্যয়টি যুক্ত হয়েছে এমন একদল মানুষের পেশার সাথে যারা শিক্ষক এবং সৃষ্টিশীল কাজের সাথে যুক্ত।
আমলা কিংবা সামরিক কর্মকর্তারা অবসর গ্রহনের আগ পর্যন্ত সুশীল হয়ে উঠতে পারে না। কিংবা বুদ্ধিজীবি হয়ে উঠতে হলে একজনকে অবশ্যই সাবেক আমলা কিংবা সামরিক কর্মকর্তা হয়ে উঠতে হবে। এইসব সাবেক আমলা এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তারা চাকুরিরত অবস্থায় বুদ্ধিজীবি বিবেচিত হন না- এখানেই একটা চরম সত্য লুকিয়ে আছে- সরকারী কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী এবং সেনা কর্মকর্তা হয়ে উঠবার জন্য বুদ্ধির কোনো প্রয়োজন নেই।
মূলত কবি- সাহিত্যিক- শিল্পী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- এবং অবসরপ্রাপ্ত মানুষেরাই বুদ্ধিজীবি বিবেচিত হন। এর বাইরে বুদ্ধিজীবি হয়ে উঠেন সাংবাদিকেরা।
তারাই সমাজের শুভ- অশুভ, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি নির্মাণ, মূল্যবোধ নির্মানের দায়িত্ব গ্রহন করেন অহেতুক। তারাই বিভিন্ন মতামতের থুতু ছিটাচ্ছেন চারপাশে।
বাস্তব সত্য হলো পৃথিবীতে শুধুমাত্র পতিতাবৃত্তি ছাড়া অন্য যেকোনো পেশায়ই বুদ্ধির প্রয়োজন। নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা না থাকলে কেনো পেশাজীবিই টিকে থাকতে পারে না। ছোটো সিদ্ধান্ত হোক, বড় সিদ্ধান্ত হোক, ব্যক্তিগত জীবনে নিজের অভিজ্ঞতা ও পরিপার্শ্ব বিবেচনা করে মানুষকে ক্রমাগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করতেই হয়।
সমাজের বর্তমান কাঠামোর ভেতরেই এর উপাদান রয়েছে। কায়িক শ্রমজীবি কিংবা মানসিক শ্রমজীবি উভয়েই নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে জীবনধারণ করছে- পরস্পরের উপকারে আসে এমন ভাব ও ভাবনা বিনিময় করছে- এরপরও বিশেষ কিছু মানুষকে যখন বুদ্ধিজীবি তকমা দেওয়া হয় তখন বিষয়টা বিশিষ্ট হয়ে উঠতে চায়।
তবে যাদের বর্তমানে বুদ্ধিজীবির ভুমিকায় উজ্জ্বল দেখি তাদের দেখে অন্তত এই ভাবনাটা এসেছে আমার
যদিও বলছি পতিতাবৃত্তি করতে কোনো বুদ্ধির প্রয়োজন নেই, তবে তাদের আচরণ দেখে মনে হয়েছে আদতে তাদের সাথে পতিতাদের কোনো পার্থক্য নেই- সুতরাং বাংলাদেশে সব পেশাজীবিই বুদ্ধিজীবি ঘোষিত হতে পারে।
কিংবা অন্য ভাবে দেখতে গেলে বাংলাদেশে পতিতারাই সর্বশ্রেষ্ট বুদ্ধিজীবি বিবেচিত হতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।