আমার বিবেক আজ নিজেকে প্রতি ক্ষণে ধিক্কার দেয় যখন খুনি(জানোয়ার) প্রদীপরা হত্যা করে মানবতা কিন্তু মিজানরা দেখেও হয় অণ্ধ।
দেশব্যাপীসমালোচনার ঝড় বয়ে গেলেও গতকালের হরতালেও পিকেটারদের দমাতে ওসি প্রদীপ কুমারের ঔদ্ধত্য দেখেছেন চট্টগ্রামবাসী। মঙ্গলবারের পর গতকালও তিনি পিস্তল হাতে পিকেটারদের দাবড়ে বেড়িয়েছেন দিনভর। চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, ছাত্রজীবনে ওসি প্রদীপ কুমার চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি আমলে নিয়োগ পান। এছাড়া একই সরকারের আমলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পান তার আরও দু’ভাই।
অপর দু’ভাইয়ের একজন স্বদীপ কুমার দাশ কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত), অন্যজন দিলীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের এসপি।
মঙ্গলবার হরতাল চলাকালে শিবির কর্মীদের গায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছিলেন ওসি প্রদীপ। এ খবর ছবিসহ গতকাল আমার দেশ-এ ছাপা হলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় দেশজুড়ে।
গতকালের হরতাল চলাকালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গতকালও ছিলেন বেপরোয়া। সকাল-সন্ধ্যার এ হরতালে মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, পাঁচলাইশ, মেডিকেল, প্রবর্তক, চকবাজার এলাকায় খোলা পিস্তল হাতে দাবড়ে বেড়িয়েছেন দিনভর।
এক কথায় হরতালের দু’দিনে নগরজুড়ে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
বিরোধীদলীয় নেতাদের অভিযোগ, শুধু ওসি প্রদীপ একা নন, তার সহোদর কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) স্বদীপ কুমার দাশও বিরোধী দল দমাতে সিদ্ধহস্ত। গত দু’দিন নয়, কয়েক বছর ধরেই তারা সিএমপির বিভিন্ন থানায় অবস্থান করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে বিরোধীদলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছেন।
সিএমপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জেলার বাঁশখালী এলাকার চিহ্নিত আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান সহোদর দিলীপ কুমার দাশ, প্রদীপ কুমার দাশ ও স্বদীপ কুমার দাশ। ছাত্রজীবনে উগ্রপন্থী হিসেবে ছাত্রলীগে সক্রিয় থাকার পরও বিএনপি আমলে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে তিন ভাই-ই পুলিশে নিয়োগ পান।
রহস্যজনকভাবে তিনজনই বর্তমানে চট্টগ্রাম রেঞ্জে কর্মরত আছেন।
সিএমপির তালিকায় যেসব অতিউত্সাহী পুলিশ সদস্যের কারণে আন্দোলন-সংগ্রামে সহিংসতার সৃষ্টি হয়, সে তালিকার শীর্ষে রয়েছে এই দু’সহোদর প্রদীপ-স্বদীপ। ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, পাঁচলাইশ, মেডিকেল, প্রবর্তক এলাকায় আতঙ্কের নাম ওসি প্রদীপ। গত অক্টোবর মাসে পাঁচলাইশ থানায় যোগদানের আগে পতেঙ্গা থানায় কর্মরত থাকাকালে একাধিক জমিদখলসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের মধ্যেই বড় ধরনের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন ওসি প্রদীপ।
তিনি যখন যে থানায় যান, কয়েক দিনের মধ্যে ওই থানায় আরও কয়েকজন এসআই ও এএসআইকে তদবির করে বদলি করিয়ে আনেন। তারপর সবাই মিলে শুরু করেন বাণিজ্য। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে ৫৪ ধারা, সিএমপি অ্যাক্ট-৮৮ ধারাসহ বিভিন্ন পেন্ডিং মামলায় গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে নির্যাতনের মাধ্যমে স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। গত ২৪ জানুয়ারি ওসি প্রদীপের একটি মামলায় রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করায় এক আইনজীবীকে লালদীঘিরপার থেকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের শিকার ওই আইনজীবী সুস্থ হয়ে ২৯ জানুয়ারি আদালতে পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ওসি তদন্ত আজিজুর রহমান, এসআই মাসুদ পারভেজসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে ইন্টার্ন ডাক্তারসহ ৩৯ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে তাদের অভিভাবকদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন প্রদীপ। টাকা না দেয়ায় অস্ত্র, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ একাধিক মামলার আসামি করে আদালতে পাঠান। স্পর্শকাতর মামলা হওয়ায় প্রায় তিন মাস ধরে কারাগারে আছেন মেধাবী এসব শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওসি প্রদীপকে মদত দিচ্ছেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন অভিযোগের পরও ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় তদন্ত ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন বলেন, দেশের একজন নাগরিকের ওপর পুলিশের এ ধরনের অমানবিক আচরণ কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পুলিশকে নিজেদের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করে বিষাক্ত স্প্রে, স্প্রিং লাঠির মতো নিত্যনতুন মারণাস্ত্র হাতে তুলে দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উত্সাহিত করছেন।
চার বছর ধরে চট্টগ্রামে বিরোধী দলের আন্দোলন দমাতে পুলিশি ভূমিকার সমালোচনা করে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কিছু পুলিশের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, একমাত্র বিরোধী দলকে দমাতেই সরকারের একটা পর্যায় থেকে তাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এসব পুলিশ কর্তারা জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে গিয়ে পুলিশ বাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল একটি বাহিনীর নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এতে জনগণ পুরো পুলিশ বাহিনীর ওপর থেকেই আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
আটকের পর কাছ থেকে গুলি করা প্রসঙ্গে সিএমপির কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি এখনও তার নজরে(?) আসেনি। পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখার পর তদন্ত করে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ওই খুনি প্রদীপকে প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার করে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হোক । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।