নেশাগ্রস্থ ও পরবর্তীতে অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত এক খুনি ছেলেকে যখন আদালতে আনা হল তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছেলেটির মা অকোপটে খুনের দায় স্বীকার করে বললেন,
“ছেলেটিকে গর্ভে ধারণ করেই আমি আমার দায়িত্ব শেষ করে দিয়েছিলাম, শৈশবে তার দেখাশোনার সার্বিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল কাজের মেয়ের উপর, কৈশরেও আমি আমার ব্যাস্ততম জীবন থেকে কোন সময় তার জন্য বরাদ্ধ রাখতে পারিনি। তাই সে বন্ধুত্ব খুঁজতে ছুটে বেড়িয়েছে পথে প্রান্তরে, খুজে পেয়েছে আগে থেকেই নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু বন্ধু। মায়ের ভালোবাসা হীনতায় তার মধ্যে যে অসীম শুন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই হাহাকার ভুলতে সে কাছে টেনে নিয়েছে নেশাকে। আজ যৌবনে তাই সে খুনি হয়েছে। আমিই উপহার দিতে পারতাম মা ও মাতৃভূমির মুখ উজ্জ্বলকারী এক নক্ষত্র কিন্তু আমার অবহেলা, উদাসীনতা ও ভালোবাসা হীনতায় দেশমাতা পেল এক নতুন খুনীকে! “একটি নিস্পাপ শিশু থেকে খুনী” আমিই এই প্রবন্ধের রচয়িতা, আমিই প্রকৃত খুনি।
”
জজ সাহেব প্রত্যুত্তরে বললেন, আমি এমন এক মায়ের সন্তান যে মায়ের স্বীকৃতি মেলেনি। কিন্তু সেই মা একটি নিগৃহীত পল্লীতে বাস করে, পাহাড়সম বাঁধা পেরিয়ে আমাকে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। “মা” এমন একটি শব্দ যাকে কলংকিত করা যায় না, আবার এর সঙ্গে অন্য কোন বিশেষণ যোগ করেও এর মর্যাদা বৃদ্ধি করা যায় না। কোন স্থানের বায়ু শুন্যতা যেমন পরবর্তীতে প্রচন্ড ঘুর্নীঝড় হয়ে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে, মাতৃ স্নেহের শুন্যতা তার থেকেও লক্ষ-কোটিগুন ভয়াবহ। কোন সন্তানই এই শুন্যতা নিয়ে বিশ্ব মাঝে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারে না, বরং নিজেকে খুঁজে পায় কোন ধ্বংস কাব্যে।
আমি এক মায়ের বিচার করে, আমার বুকে “মা” শব্দটির জন্য যে অসীম শ্রদ্ধা ও মহিমাগাঁথা রয়েছে তাকে খুন করতে পারবো না। মা কখনো হারে না। আমি আপনাকে মুক্তি দিলাম, মুক্ত করে দিলাম আপনার সন্তানকে। আপনার মত অন্য কোন মায়ের অনাদরে যদি কোন সন্তান পথভ্রষ্ট হয়, আপনার উপলব্ধি তাদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছিয়ে দেবেন। আমি সেইদিনের জন্য অপেক্ষা করবো যেদিন আপনি আপনার সন্তানটিকে প্রকৃত মানুষ ও দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান রুপে প্রতিষ্ঠিত করে ফিরে আসবেন।
তাহলে এটিই হবে আমার শ্রেষ্ঠ বিচার।
জজ সাহেব যে মাকে মুক্ত করে দিয়েছেন ইনিই হচ্ছেন আমার স্বপ্নের মা। আমি আমার কল্পিত জজ সাহেবকে দিয়ে এই মাকে মুক্ত করে দিয়েছি যেন তিনি তথাকথিত মায়েদের “মা” নামের প্রকৃত মর্মার্থ বোঝাতে সক্ষম হন। বাংলা মায়ের সোনার সন্তান গড়বে দেশ, মৃত্যু আসবে সব শেষ হবে কিন্তু এই প্রত্যাশার হবে না শেষ।
[ একজন মা একটি পৃথিবীর সমান বা তার চেয়েও বড়।
মা শব্দটি ছোট হলে একজন সন্তানের অস্তিত্ব থাকে না তাই দুকলম লিখেছি। মায়ের প্রতি সামান্যতম অশ্রদ্ধা প্রকাশ পেলে আমি অত্যন্ত বিনীতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।