নগরের কেন্দ্রস্থলে পার্কিং নিষিদ্ধ ও সীমিত আকারে সঠিক মূল্যে পার্কিং প্রদান করতে হবে
প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ না করে ঢাকা শহরের যানজট নিরসন সম্ভব নয়। নগরের কেন্দ্রস্থলে পার্কিং নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সঠিক মূল্যে পার্কিং এর জন্য সীমিত আকারে জায়গা প্রদান করলে প্রাইভেট কারের ব্যবহার হ্রাস পাবে। আজ সকাল ১১.০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এবং ডাবি্লউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে "সুষ্ঠু পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে করণীয়" শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা একথা বলেন। সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলের মাঝে প্রসত্দাবিত খসড়া পার্কিং নীতিমালা মতামতের জন্য প্রদান করা হয়, যা সভার সুপারিশসহ সরকারের নিকট উপস্থাপন করা হবে।
সভায় বুয়েটের ইউআরপি বিভাগের প্রধান ড. রোখসানা হাফিয এর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আনত্দর্জাতিক পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. মাহাবুবুল বারী।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের উপাচার্য ড. এএমএম শফিউল্লাহ। আলোচনা করেন বুয়েটের ইউআরপি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব-উন-নবী, প্রভাষক শাকিল-বিন-কাশেম, স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শায়ের গফুর, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য ড. এম আর কবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহাবুবুল আলম, শিক্ষাবার্তা এর সম্পাদক এএন রাশেদা, রাজনীতিবিদ রাজেকুজ্জামান রতন, বাস মালিক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। সঞ্চালনা করেন পবা এর চেয়ারম্যান জনাব আবু নাসের খান।
বক্তারা বলেন, দ্রুতহারে প্রাইভেট গাড়ী বৃদ্ধি পাওয়ায় পার্কিংয়ের জন্য বেশি বেশি জায়গা প্রদানের প্রয়োজন পড়ছে। যানজট নিয়ন্ত্রণ, সম্পদ ও জায়গার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পার্কিং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বের করা জরুরী।
সেক্ষেত্রে পার্কিং ফি বৃদ্ধি এবং প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। নিশ্চয়ই মার্কেট বা বাড়ী ভেঙ্গে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা দেয়া সম্ভব হবে না। রাসত্দা ও ফুটপাত পার্কিং মুক্ত করার জন্য পার্কিং এর জন্য যতই জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হোক না কেন প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ না করলে রাস্তায় পূনরায় গাড়ী পার্কিং হবে। প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণ না করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ঢাকা জনবহুল একটি শহর, জনসংখ্যা অনুপাতে ভূমির পরিমাণ খুবই কম।
এখানে মানুষের আবাসন, কর্মসংস্থান, শিশুদের খেলাধূলার সুযোগ, উন্মূক্ত স্থান, জলাশয়, কৃষিজমি ও শিল্প-বানিজ্যের জন্য জায়গার চাহিদা পূরণ কঠিন হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে পার্কিং এর জন্য সীমিত আকারে জায়গা নির্দ্দিষ্ট করা প্রয়োজন। বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে পার্কিং সুবিধা প্রাইভেট গাড়ী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় সর্বত্রই বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে সারাদিন ধরে গাড়ি পার্কিং করে রাখা যায়। যা মানুষকে প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহারে উৎসাহিত করছে।
পার্কিংয়ের স্থান কমিয়ে দিলে এবং পার্কিং ফি বৃদ্ধি পেলে মানুষ প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে।
বক্তারা আরো বলেন, ইমারত নির্মান বিধিমালায় আবাসিক ও বানিজ্যিক ভবনে পাকিং এর জন্য যথাক্রমে ১২ ও ২৫ ভাগ জায়গা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এতে গাড়ি ক্রয়ের প্রবণতা বাড়বে এবং সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে। সবার জন্য ঢালাওভাবে পার্কিং বাধ্যতামূলক করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন প্রয়োজন।
ভবনে পার্কিং করে সড়কের পার্কিং সাময়িকভাবে বন্ধ করা গেলেও গাড়ি বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন করে পার্কিং সমস্যা তৈরি হবে। এটি দুষ্টচক্রের মতো মানুষের দৈনন্দিন সুযোগ-সুবিধাগুলিকে গ্রাস করবে। পার্কিং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে পার্কিং এর চাহিদা কমানো প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে মানুষকে পাবলিক পরিবহণ, হেঁটে ও সাইকেলে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এতে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার হ্রাস পাবে।
যা বেশি বেশি সড়ক ও পার্কিং অবকাঠামো তৈরি করা থেকে রক্ষা করবে।
মতবিনিময় সভায়, পার্কিং সমস্যা সমাধানে যথাযথভাবে পার্কিং নীতিমালা প্রণয়ন ও বাসত্দবায়ন করা; প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পার্কিং চাহিদা কমানো; সর্বত্র জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে পার্কিং ফি নেয়া; অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা; পার্কিং হতে প্রাপ্ত অর্থ পাবলিক পরিবহণের মানোন্নয়নে ব্যয় করা; প্রাইভেট গাড়ির লাইসেন্স সীমিত করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে প্রাইভেট গাড়ির পরিবর্তে পাবলিক পরিবহণের ব্যবস্থা করা; প্রাইভেট গাড়ি নির্ভর অবকাঠামো (ফ্লাইওভার, পার্কিং এর স্থান তৈরি) নির্মাণ না করা; এবং পাবলিক পরিবহণ, জ্বালানীমুক্ত যান ও পথচারীদের সুবিধা বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।