আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ।

"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
১. কুরবানী শব্দের অর্থ উৎসর্গ । যারা আল্লাহপাকের একত্ববাদে বিশ্বাসী । যারা উনাকে পালনকর্তা, লালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা হিসেবে অন্তরের অন্তঃস্হলে পরম যত্নের সাথে স্হান দিয়েছে, তারাই উনার ইবাদতকে পরম সৌভাগ্যের বিষয় হিসেবে বরণ করে নিয়েছে । সেই আল্লাহর নামে নিজের অধিকারের কোন বস্তুকে উৎসর্গ করা । মনে রাখতে হবে , এই উৎসর্গের মূল্যায়ন আর্থিক ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না ।

হয় একমাত্র আল্লাহ ভীরুতার উপর । কুরবানী একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্যই হতে হবে । কুরবানী শব্দটি 'কুরব' থেকে এসেছে , যার অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তী হওয়া । কুরবানীর মাধ্যমে কোন কিছু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া । ২. মানবজাতির পিতা হযরত আদম (আঃ) এর সময় থেকেই এই কুরবানী চালু হয়ে এসেছে ।

সেই সময় কুরবানীর অন্য নিয়ম প্রচলিত ছিলো । কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট বস্তু বা জন্তুকে কোন একটি উঁচু স্হান বা পাহাড়ে রেখে আসা হতো । যার কুরবানী আল্লাহ পাক কবুল করতেন, সেই বস্তু বা জন্তুটিকে আকাশ থেকে একটি আগুনের ফুলকি এসে জ্বালিয়ে দিত । আর যে কুরবানীটি আল্লাহপাক কবুল করতেন না, সেটি সেভাবেই পড়ে থাকত । তখন কুরবানী মাংস খাওয়া যেতনা , সমপুর্ণটাই উৎসর্গ , সুতরাং পুড়ে যেত ।

পরে আল্লাহ পাক এই নিয়ম বাতিল করেন এবং কুরবানীর পশুর মাংস খাওয়া জায়েজ করেন । ৩. হযরত আদম (আঃ) এর সন্তান জন্ম নিত জোড়ায় জোড়ায় । একটি মেয়ে ও একটি ছেলে । তাদের মধ্যে বিয়ে হতো এক জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের । কিন্তু কাবিলের ক্ষেত্রে যে মেয়ে ছিলো সে সুন্দর না হওয়ায় আর তার সাথের মেয়েটি সুন্দর হওয়ায় সে জিদ ধরল , সে তার জোড়ার মেয়েকেই বিয়ে করবে ।

এই নিয়ে হাবিল আর কাবিল এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল বিবাদ । এই বিবাদ মীমাংসার জন্য পিতা হযরত আদম (আঃ) বললেন, তোমরা আল্লাহপাকের দরবারে কুরবানী পেশ কর । আল্লাহপাক যার কুরবানী কুবল করবেন, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে হবে । পিতার সিদ্ধান্তে একমত হয়ে হাবিল একটি দুম্বা আর কাবিল কিছু ফল-ফসল একটি পাহাড়ের চূড়ায় রেখে এলো । তখন আসমান থেকে একটি আগুনের ফুলকি এসে হাবিলের কুরবানীটি ছাই করে দিল ।

আর কাবিলের কুরবানী অবিকল পড়ে রইল । এতেই প্রমাণিত হল যে , কাবিলের সাথে আকলিমার বিয়ে হতে পারে না । কুরআনে কারীমে কউমে আদ এবং অন্যান্য কউমের কুরবানীর কথাও বলা আছে । আমি আমার পুর্বের পোষ্টে "বণী ইসরাইলের কাহিনী"তেও কুরবানীর বর্ণনা উল্লেখ করেছি । আগ্রীহরা পড়ে দেখতে পারেন ।

৪. তবে আমরা মুসলমানরা মূলতঃ মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নত অনুসরণ করি । আল্লাহ পাক ওনাকে অনেক ভাবে পরীক্ষা করেছেন , যা আমি আমার আগের একটি কুরবানী সংক্রান্ত ব্লগে উল্লেখ করেছি । আল্লাহ উনাকে ৯০ বৎসর পর্যন্ত কোন সন্তানাদি দেয় নাই । তারপর উনাকে আল্লাহ একটি সু-সন্তানের সু-সংবাদ দান করেন । হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং উনার স্বী সম্পুর্ণ অবাক হয়ে যান ।

ফেরেশ্তাদের দ্বারা এই সংবাদ পেয়ে তারা প্রশ্ন করেন তা কি করে সম্ভব ? তখন ফেরেশ্তা জীবরাঈল (আঃ) উত্তর দেন, আপনার পালন কর্তার কাছে এটা অসম্ভব কিছু না । তারপর সন্তান হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) অত্যন্ত আবেগআপ্লুত হন এবং সন্তান কে খুব ভালবাসতেন । আল্লাহ তখন পরীক্ষা করতে চাইলেন, ইব্রাহীম আমাকে বেশী ভালবাসে না তার সন্তানকে । তাই তিনি উনাকে স্বপ্ন দেখান উনার প্রিয় জিনিষ কুরবানী দিতে । ইব্রাহীম (আঃ) অনেক পশু কুরবানী দেয়ার পরও একই স্বপ্ন বার বার দেখার পর বুঝলেন আল্লাহ পাক উনার ছেলেকে কুরবানী দিতে বলছেন ।

তিনি ঈসমাঈল (আঃ) নিয়ে রওনা হলেন , তখন পথে শয়তান ঈসমাইল (আঃ) কে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করে , কিন্তু তিনি পাথর ছুড়ে মারেন । ইব্রাহীম (আঃ) যখন তার ছেলেকে উনার অভিপ্রায়ের কথা জানালেন, তিনি উত্তর দেন , পিতা আপনাকে আল্লাহ যা আদিষ্ট করেছেন আপনি তা পালন করেন , আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অর্ন্তগত হিসেবে পাবেন । হযরত ইব্রাহীম (আঃ) উনাকে শক্ত করে রশি বেধে নিজের চোখ কাপড় দিয়ে বন্ধ করে ধারালো ছুরি দিয়ে ছেলেকে কুরবানী করার চেষ্টা করেন । ওদিকে আল্লাহ পাক ছুরিকে নিষেধ করে দেন ইসমাঈল (আঃ) কে কাটতে । ফলে এত ধারালো ছুড়ি দিয়েও তিনি বার বার চেষ্টা করেও কাটতে পারেননি ।

তখন মনের দূঃখে ছুরি ছুড়ে মারেন। ছুড়ি পাথরের উপর পড়ে পাথর খন্ড বিখন্ড হয়ে যায় । আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ) এর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং বেহেশ্ত থেকে ফেরেশ্তা দ্বারা দুম্বা পাঠিয়ে দেন কুরবানী করার জন্য আর বলেন, ইব্রাহীম তুমি তোমার দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ আর আমি তোমার কুরবানী কবূল করেছি । তুমি ঈসমাঈল এর বদলে দুম্বা কুরবানী কর । ইব্রাহীম (আঃ) এর অপূর্ব আত্নত্যাগের কারণে আল্লাহ পাক উনাকে জাতি সমূহের নেতা করেছেন এবং আমরা প্রতি নামাজে দরুদের মাধ্যমে উনার প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করি ।

আল্লাহ পাক এটা বাইবেলে উল্লেখ করেছেন যে, আমি তোমার সন্তানদের মধ্য থেকে একটি উত্তম জাতি সৃষ্টি করব এবং তোমার সন্তানের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের সমগ্র জাতিকে পথ দেখাব । যারা ইবাদতে তোমার নিকট সালাম পোছাবে তার উপরও আমার রহমত নাযিল করব । আমরা জানি মহানবী (সঃ) উনার বড় ছেলে ইসমাঈল (আঃ) এর বংশধর আর ঈসা (আঃ) ছোট ছেলে ইসহাক (আঃ) এর বংশধর । মহানবী (সঃ) দুনিয়াতে এসে চলে গেছেন , ঈসা (আঃ) দ্বিতীয় বার এসে সমগ্র মানব জাতিকে ইসলামের পথ দেখাবেন এবং দুনিয়ার বুকে আল্লাহর নামকে বুলন্দ করবেন । ৫.প্রাচীন যুগ হতে প্রত্যেক ধর্মে কুরবানী বা উৎসর্গ চালু আছে , প্রত্যেক ধর্মের লোকেরা যুদ্ধ বিগ্রহ এবং পশু কুবানী করেছে ।

যেমন - হিন্দু ধর্মের ইতিহাস বলে- * কুরবানীর সময় এলে শ্রী-কৃষ্ঞ পশু কুরবানী করেছেন । এর মধ্যে একটি গাভীও ছিলো । (ভগবত, দশম স্কন্দ, অধ্যায়-৫৮) * একদা আলমুক ঋষি অষ্টমুনিকে দাওয়াত দেন, দাওয়াতে অনেক ঋষি, রাণী এবং সম্ভ্রান্ত হিন্দুরাও ছিল, তাদেরকে দুটি গরুর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিলো (আতরাম চরনর) । * পুন্য অর্জনের জন্য গাভীর মাংস খাওয়ানো সর্বোত্তম পন্হা । (অপথিনব গজনথা, সুত্র নং -১, পৃষ্ঠা-৫, অধ্যায়-১৭) * শ্রাদ্ধের দাওয়াতে যদি কোন ব্রাক্ষণ গো-মাংস খেতে ঘৃণা করে তবে সে ঐ পশুর শরীরে যতগুলো লোম আছে ততদিন নরকে জ্বলবে ।

(কর্ম পুরাণ, অযোধ্যা খন্ড, সুত্র-৪০) ৬. সুতরাং আমাদেরকেও আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করতে হবে । কুরবানী করার জন্য নির্দেশ রয়েছে সূরা কাউসারে । আল্লাহ বলেছেন, "আপনি রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ৃন এবং কুরবানী করুন " । কুরবানী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, 'কুরবানী দিনের পছন্দনীয় আল্লাহপাকের নিকট অন্য কোন দিন নয় । উক্ত দিনে কুরবানী করা সমস্ত নেক কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ।

কুরবানীর জন্তুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার পূর্বেই তা আল্লাহ পাকের নিকট কুবল হয়ে যায় । ' তিনি আরও বলেন, 'কুরবানীর জন্তুর শরীরে যত লোম আছে প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকি তার আমলনামায় লিখে দেয়া হয় । ' রাসূলে পাক (সঃ) আরও বলেন, 'যে ব্যাক্তি সামর্থ্য থাকা সত্বেও কুরবানী করে না , সে যেন আমার মুছল্লায় (ঈদের জামাত) না আসে । ' প্রতিটি সামর্থ্যবান লোকরে উপর কুরবানী ওয়াজিব । যাকাত পরিমাণ মাল থাকলে কুরবানী দিতে হবে।

মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয় না । সুত্র- দৈনিক ইনকিলাব ৪ঠা ডিসেম্বর -২০০৮ ।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.