আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কে ছিলেন শার্লিমেন?

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

Charlemagne. মধ্যযুগের ইউরোপের শাসক শার্লিমেন আজও ইউরোপের রাজাদের আর্দশ হয়ে রয়েছে। মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপ এবং দক্ষিণে স্পেন অবধি ছড়িয়ে ছিল তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য। হয়েছিলেন রোমান সম্রাট।

তাঁর সময়েই লাতিন ভাষাভিত্তিক কারোলিনজিয়ান সংস্কৃতির বিকাশ হয়েছিল ইউরোপে। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্যটি অখন্ড থাকেনি। তবে তাঁর সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম ফ্রান্সিয়া নামে যে দুটো অঞ্চলের উদ্ভব হয়েছিল পরে সেখানেই গড়ে উঠেছিল দুটি ইউরোপীয় রাষ্ট্র। পশ্চিম ফ্রান্সিয়ায় হয়েছিল ফ্রান্স; এবং পূর্ব ফ্রান্সিয়া প্রথমে হোলি রোমান সাম্রাজ্য পরে জার্মানী। পোপ ও সম্রাটের ঐক্য আমরা লক্ষ করি শার্লিমেনের সময় থেকেই।

ফ্রাঙ্কসরা ছিল জার্মানিক ট্রাইব। বাস করত রাইন নদীর পাড়ে। সময়টা? ধরা যাক ২৫০ খ্রিস্টাব্দ। ২৫৩ সালের দিকে এরা রোমানদের সীমানায় পৌঁছে যায়। এদের দুটো দল ছিল।

ক) সালিয়ান। খ) রিপুয়ারিয়ান। রাইন নদী ঘেঁষেই এরা থাকত। তারপর রোমানরা একদিন সালিয়ান ফ্রাঙ্কসদের পরাজিত করে। এরপর এরা হয়ে ওঠে রোমান-ঘেঁষা।

৫ম শতকে রোমানরা রাইন উপত্যকা ছেড়ে চলে গেলে সালিয়ানরা সেখানে বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। ২ আপনারা মেরোভিনজিয়ান রাজবংশের কথা শুনে থাকবেন। সালিয়ান রাজা প্রথম ক্লোভিস গড়ে তুলেছিলে মেরোভিনজিয়ান রাজবংশ। যাহোক। শার্লিমেন ছিলেন ফ্রাঙ্কসদের রাজা।

সময়কাল? ৭৪২-৮১৪। খ্রিস্টাব্দ। অবশ্য রাজত্ব করেছেন-৭৬৮-৮১৪। খ্রিস্টাব্দ। ৮০০ থেকে ৮১৪ খ্রিস্টাব্দ তক ছিলেন রোমান শাসক।

৩ শার্লিমেনের বাবার নাম ছিল পেপিন দ্য শর্ট। পেপিন দ্য শর্ট ছিলেন ফ্রাঙ্কসদের একজন ডাকসাইটে নেতা। মেরোভিনজিয়ান রাজবংশের সঙ্গে সর্ম্পকিত ছিলেন পেপিন দ্য শর্ট। যা হোক। যথা সময়ে পেপিন নিজেকে ফ্রাঙ্কসদের রাজা ঘোষনা করে।

সেই সময় তিনি রোমের পোপের সমর্থন চান। রোমের পোপ তখন ২য় স্তেফান। পোপ বললেন, ইতালিতে বর্বরেরা আক্রমন চালাচ্ছে, আমাকে সাহায্য কর। পেপিন দ্য শর্ট তাই করে। ৭৫৪ সালে পোপ তখন ২য় স্তেফান এক অনুষ্ঠানে পেপিনের মাথায় রাজার মুকুট পরিয়ে দেন।

৪ লোমবার্ডসরা ছিল জার্মানিক জাতি। স্বাধীনচেতা। তারা পোপের অধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়ছিল। স্থান? উত্তর ও মধ্য ইতালি। পিতার আদেশে তরুন শার্লিমেন ফ্রাঙ্কবাহিনী নিয়ে বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায়।

সফল হয়। অ্যাকুইটাইনেও (বর্তমান দক্ষিণ ফ্রান্স) সামরিক অভিযান চালায় শার্লিমেন। সমরকৌশল আয়ত্ম হয় যুবকের। ৫ তারপর পেপিন দ্য শর্ট মারা যায়। শার্লিমেন ছাড়াও তাঁর আরেক ছেলে ছিল।

কার্লোমান। সে শার্লিমেনের সঙ্গে যুগ্নভাবে ফ্রাঙ্কদের রাজা হয়। ৩ বছর চলে যৌথ শাসন। ৭৭১ সালে কার্লোমান মারা গেলে শার্লিমেন এককভাবে রাজা হন। রোমে যান।

এবং রোমান জনগনের সমর্থন লাভ করেন। Despite the unprecedented scope of his military successes, it is uncertain that Charlemagne purposely set out to reestablish the Roman Empire in the West. The attempt to revive the empire was more likely the result of the pope’s desire to win independence from the Byzantine, or Eastern Roman, emperor in Constantinople, who still claimed Italy as part of his empire. The pope was also motivated by his opposition to certain religious doctrines of the Eastern Orthodox Church (the dominant church in the Byzantine Empire), particularly the doctrine of iconoclasm, which forbade the worship of images. যাহোক। সামরিক অভিযানে বের হন শার্লিমেন। ৬ এখন যেটা উত্তরপূর্ব জার্মানী-সে সময়ে ওই অঞ্চলটাকে বলা হত স্যাক্সনি । ওখানে বাস করত স্যাক্সনরা।

তারা ছিল পৌত্তলিক ও অখ্রিস্টান । দীর্ঘদিন ধরে ফ্রাঙ্কসদের প্রতি তারা বৈরি ছিল। শার্লিমেন ওদের খ্রিস্টান করতে চাইলেন। ৭৮২ সালে স্যাক্সনি দখল করে শার্লিমেন। ওখানে গির্জা নির্মান করেন।

যদিও খ্রিস্টীয় আগ্রাসনে বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ চলছিল পৌত্তলিকদের। শার্লিমের বহু স্যাক্সনদের নির্বাসিত করলেন স্যাক্সনি থেকে। যা হোক। ৮০৪ সাল নাগাদ স্যাক্সন বিদ্রোহ দমন করতে সফল হলেন শার্লিমেন । এরপর নিজের সাম্রাজ্যের সঙ্গে বাভারিয়া যুক্ত করলেন।

তারপর স্লাভভূমির দিকে চোখ ফেরালেন। স্লাভদের বশ করলেন। এখন যেটা স্পেন, ৭৭৮ সালে সেখানে আক্রমন করলেন শার্লিমেন। উত্তর আফ্রিকার মুসলমাননের ইউরোপে মুর বলা হয়। মুররা তখন স্পেন শাসন করত।

শার্লিমেন সসৈন্য এগিয়ে যাচ্ছেন স্পেনের দিকে। সারাগোসায় তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হল। পরে অবশ্য উত্তর স্পেনের কিয়দংশ দখলে আনলেন শার্লিমেন। ফেরার পথে, ৭৭৮ সালে বাস্করা (স্পেনীয় আদিবাসী) শার্লিমেনের বাহিনী আক্রমন করে বসে। এ নিয়েই পরে লেখা হয়েছিল “রোল্যান্ডের গান।

” ৭ ৭৯৯ সাল। রোমে তখন বিদ্রোহ চলছিল। পোপ ৩য় লিও ছিলেন পোপ আড্রিয়ানের উত্তরসূরী। অসন্তোষ তার বিরুদ্ধেই। লোকে তাকে মানছে না।

শার্লিমেন রোমে পৌঁছলেন। দমন করলেন বিদ্রোহ। এর ফলও ফলল। ৮০০ সালের খ্রিস্টমাসের দিনে শার্লিমেনের মাথায় রোমান সম্রাটের মুকুট পড়িয়ে দিলেন পোপ ৩য় লিও । এই ঘটনা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিল।

মানে- পোপের ইচ্ছেয় রোমের রাজা নির্বাচন হওয়া। ৮ তো কেমন ছিল শার্লিমেনশাসন? শার্লিমেন অভিজাতদের আনুগত্যের বিনিময়ে ভূমি দান করতেন । ট্রাইবাল নেতাদেরও জমি দান করতেন একই কারণে। বিশাল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে নিযুক্ত করতেন ফ্রাঙ্ক কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তারাই ছিলেন প্রশাসনের মূল ; এরা সম্রাটের নানা ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করত।

গির্জায় বিশপ ও স্থানীয় কাউন্টরাও ছিল রাজার প্রতিনিধি। সব দেখাশুনা করত মিসি দোমিনিসি নামে একজন পর্যবেক্ষক। সে অর্থনৈতিক ও আইনগত দিকগুলি দেখত। প্রতিবছর বিশপ ও কাউন্টরা শার্লিমেনের দরবারে উপস্থিত হয়ে কৈফিয়ত দিত। শার্লিমেন তাদের নির্দেশ দিতেন।

নানাবিধ অর্থনৈতিক সংস্কারও করেছিলেন শার্লিমেন। যেমন করের পরিমান নির্ধারন করেছিলেন, পরিমাপ নির্ধারন করেছিলেন। এতে সাম্রাজ্যে বানিজ্য গতির সঞ্চার হয়েছিল। তাছাড়া সাম্রাজ্যজুড়ে সড়ক ও সেতু নির্মান করিয়েছিলেন শার্লিমেন। রাইন ও দানিয়ুব নদীর মাঝে খাল খনন করতে চেয়েছিলেন।

অবশ্য ব্যর্থ হয়েছিলেন। রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। ৯ বিভিন্ন গোত্রের আইন সংকলন করেছিলেন শার্লিমেন। গ্রহনও করেছিলেন শাসনকার্যে। ফ্রাঙ্কদের নিজস্ব বিধিবিধানও পর্যালোচনা করেছিলেন।

পর্যালোচনা করেছিলেন ধর্মীয় বিধিবিধানও; সেসব সঙ্কলনও করেছিলেন। তাঁর আমলেই কারোলিনজিয়ান সংস্কৃতি রেনেসা সম্পন্ন হয়েছিল। যাযকদের ট্রেনিং-এর জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। লাতিন ভাষা ব্যাপক প্রচলন করেছিলেন। বিশাল সাম্রাজ্যে লাতিন হয়ে উঠল লক্ষাধিক মানুষের অভিন্ন ভাষা।

আধুনিক বর্ণমালা সে সময়ই গড়ে উঠেছিল। জ্ঞানীগুণীদের ডেকে নিতেন রাজদরবারে। প্যাগান কিংবা খ্রিস্টান- সবাই কেই পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন শার্লিমেন। এরা গ্রিক ও রোমান ধ্র“পদী গ্রন্থের অনুবাদ করেছিল। ১০ শার্লিমেনের বিশাল সাম্রাজ্যটি পরে ঠিক মতো পরিচালনা করা হয়ে উঠল দুস্কর।

একে মুদ্রা অর্থনীতি ছিল না, রাজার ব্যাক্তিত্বের ওপরই নির্ভর করত সব। কাজেই ধীরে ধীরে ভাঙ্গন ধরল ফ্রাঙ্কসদের সাম্রাজ্যে। সীমান্তে পৌত্তলিক ট্রাইবাল গোষ্ঠীর বিদ্রোহ তো চলছিলই। ৮১৪। মারা গেলেন শার্লিমেন।

ধ্বংসে গেল তার সাম্রাজ্যটিও। ১১ মধ্যযুগে, এমন কী আধুনিক কালেও শার্লিমেনই হচ্ছেন যোদ্ধাসম্রাটের আদর্শ। আজও অবধি তিনি সকল ইউরোপীয় রাজাকে অনুপ্রানিত করে আসছেন। রাজা বলতে লোকে যা বোঝে শার্লিমেন তাই ছিল। আধুনিক জার্মান রাষ্ট্রের ভিতটি তারই গড়া।

ইউরোপের রাজনৈতিক বিভাজন তার সময় থেকেই স্পস্ট হতে দেখি। তথ্যসূত্র: Harrington, Joel F. "Charlemagne." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved.

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.