নিরব যোদ্ধা।
কুয়াকাটার অপর নাম সাগর কন্যা যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান হিসাবে পরিচিত। কুয়াকাটা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার লটাচাপলি ইউনিয়নে অবসি'ত ও এর বীচটি ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ। জেলা সদর হতে ৭০ কিলোমিটার, ঢাকা হতে ৩২০ কিলোমিটার দুরে।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, রাখাইনদের মাতৃভূমি হিসেবে খ্যাত বার্মার আরাকান রাজ্য এক সময়ে বর্মী রাজা দখল করে নেয়।
রাজার সৈনিকদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে রাখাইরা দল বেঁধে বড় বড় নৌকায় করে সাগরে ভাসতে থাকে। ভাসতে ভাসতে এক সময় একটি দ্বীপে নৌকা আটকে গেলে তারা সেখানে নেমে পড়ে। ওই দ্বীপটি ছিল পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী দ্বীপ। এরপর তারা সেখানে বসবাস শুরু করে। এর মধ্যে কিছু রাখাইন পরিবার ওই স'ানে বসবাস না করে তারা বনাঞ্চলের মধ্যে ঢুকে বনের গাছপালা কেটে সেখানে বসবাস শুরু করে।
বনাঞ্চলে বসবাস করার উদ্দেশ্যে ছিল সহজভাবে খাবার সংগ্রহ করা। যে বনাঞ্চল কেটে তারা বসবাস শুরু করে সেটিই হচ্ছে বর্তমান কুয়াকাটা।
তখন ওই বনের কোন নাম ছিল না। থাকলেও রাখাইন সমপ্রদায়ের লোকজন তার নাম জানত না। যার ফলে সাগর পাড়ি দিয়ে ওই স্থানে বসবাস শুরু করায় রাখাইন ভাষায় তারা নামকরণ করে কানশাই।
কানশাই শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ভাগ্যকুল। কিন্তু রাখাইন লোকজন এখানে বসবাস করলেও তাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় পানি। সাগরের পানি লবণাক্ত হওয়াই তা খাওয়া সম্ভবপর ছিল না। এজন্য তারা নিজ উদ্যেগে একটি কুয়া খনন করে তা থেকে মিঠা পানি পান করত। মিঠা পানির কুয়ার নামানুসারে নামকরণ হয় কুয়াকাটা।
রাখাইন সমপ্রদায়ের লোকজন কুয়ার মিঠা পানি শুধুমাত্র পান করত। বাকি কাজ হতো সাগরের পানিতেই।
কুয়ার সন্নিকটেই তারা স্থাপন করে ৩৭ মণ ওজনের ধ্যানমগ্ন অষ্টধাতুর বৌদ্ধ মূর্তি। মন্দিরের নির্মাণ সৌন্দর্যে ইন্দ্র চীনের স্থাপত্য অনুসরণ করা হয়। দেখলে মনে হবে থাইল্যান্ড, লাওস বা মিয়ানমারের কোন মন্দির।
প্রায় সাড়ে তিন ফুট উঁচু বেদির উপর মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের আড়াই হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৮৩ বছর পূর্বে অষ্টধাতুর ওই মূর্তিটি ওই স্থানে স্থাপন করা হয় বলে রাখাইন সমপ্রদায়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়। প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার এ বৌদ্ধ মূর্তিটি স্থাপন করেন উপেংইয়া ভিক্ষু। তখন মন্দিরের দায়ক (পরিচালক) ছিলেন বাচিন তালুকদার। এ অঞ্চলের রাখাইন সমপ্রদায়ের তেজস্বী নেতা হিসেবে পরিচিত বাচিন তালুকাদার ১৯৯৯ সালে মারা যান।
তার ছেলে অং সুমিং তালুকদার মন্দিরের দায়িত্ব পান। তিনিই এখন মন্দির ও কেরানীপাড়ার দায়িত্বে আছেন। মন্দিরের পাশেই ইন্দ্র চীন স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মাণ করা হয়েছে শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহার। সেখানে বসে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্ম সভা করতেন। মন্দিরের নীচেই হচ্ছে ঐতিহাসিক কুয়াটি।
বর্তমানে সেই কুয়ার পানি খাওয়ার অনুপোযোগী অর্থাৎ পরিত্যক্ত। তারপরও কুয়াকাটার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুয়াটিকে নতুনভাবে সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় অপূর্ব স্থাপত্যকলার সমন্বয়ে মন্দিরটি পুনঃ নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর চারদিক পাকা ও উপরে ছাদ দেয়া হয়েছে। কায়াকাটায় আসা পর্যটকরা যাতে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ওই কুয়ার দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সেখানে প্লাষ্টিক টিন দিয়ে একটি লন তৈরি করা হয়েছে।
পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সী-বিচের অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো কঠিন যা শুধু দেখলেই উপভোগ করা যায়। তখন মনে হবে বিরাট এক অগ্নিকুন্ড আস্তে আস্তে সাগর ভেদ করে আসমানের উপরে দিকে উঠে যাচ্ছে আবার সূর্যাস্তের সময় সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় সূর্যটা। মনে হয় সাগরের মধ্যেই সূর্যের বাড়ি ঘর।
পূর্ণিমার রাতে সী বিচ হয় দেখা মত। চাঁদের আলোয় বিশাল বিশাল ঢেউগুলো যেন কাছে ডাকে।
আর আমাবশ্যায় অন্ধকার রাতে দেখা যায় আরেক দৃশ্য ফসফরাসের মিশ্রণে সাগরের ঢেউগুলো থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ছড়ায়। কুয়াকাটার সী বিচের সৌন্দর্য লিখে শেষ করা সিত্যই খুব কঠিন ব্যাপার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।