বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। গতকাল সকালে রাজাকার কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পর থেকেই মনের ভিতর একটা চাপা আগুন জ্বলছিল। সারাদিন অফিসের কাজের ফাঁকে যতটুকু পেরেছি ফেসবুকে, ব্লগে এই রায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছি। গতকাল সন্ধ্যায়ই খবর পেয়েছিলাম যে ঢাকার শাহবাগে হাজারো মানুষের ভীড় জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে, রাতভর অনেকেই ছিলেন শাহবাগে। চট্টগ্রামে থাকার কারণে শাহবাগের মানুষের সেই আন্দোলনে শরীক হও/য়ার কোন সুযোগ আমার নেই, এই কথাটি আজ সারাদিন মনের ভেতর কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলছিল, অফিসে বসেই খবর পেলাম চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবের সামনে কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবীতে গণজমায়েত হচ্ছে।
অফিস শেষ করে আর এক মুহুর্ত দেরী করিনি, সাথে সাথে ছুটে গিয়েছিলাম সেখানে। অফিসের এক সহকর্মী আমার সাথে ছিল আজকে রিকশা করে প্রেস ক্লাব যাওয়ার সময়, ও আমাকে বলছিল, "নাঈম ভাই, দেখেন ৩০/৪০ জন মানুষ হয় কিনা। " উত্তরে আমি বললাম, "৩০/৪০ জনও কম কি, ক্ষুদ্র থেকেই তো বড় কিছুর সৃষ্টি। "
জামালখানের কাছাকাছি গিয়ে দেখি পুলিশ প্রেস ক্লাব অভিমুখী সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে যানবাহন চলাচলের জন্য। আমাদের রিকশা ঐখানেই রেখে আমরা প্রেস ক্লাবের দিকে হেঁটে যেতে থাকলাম।
যতই কাছাকাছি যাচ্ছিলাম ততই উত্তেজিত জনতার বিভিন্ন স্লোগান কানে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে গিয়ে দেখি ৩০/৪০ জন তো অনেক নগন্য, কমপক্ষে এক হাজার মানুষ আজ ঐখানে উপস্থিত ছিল; সারা রাস্তা জুড়ে নানা স্লোগান লেখা, নানান রকমের ব্যানার ফেস্টুনে সকল রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবী, নানান রকমের ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন এসব। সারা রাস্তাজুড়ে সারিতে সারিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে মৌন প্রতিবাদের এই দৃশ্য আমি আমার জীবনে আর দেখিনি।
সকলের মুখে একটাই স্লোগান রাজাকার কাদের মোল্লার ফাঁসী।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইলের ক্যামেরায় আন্দোলনের অনেক ছবি তুললাম।
উত্তাল আন্দোলনের ঐ ময়দান ছেড়ে কিছুতেই ফিরে আসতে মন চাইছিলনা, কিন্তু পারিবারিক বাধ্যবাধকতার কারণে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও একসময় ঐ এলাকা ছেড়ে চলে আসলাম, রাজাকার/যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বুকে একবুক ঘৃণা নিয়ে। ফিরে আসতে আসতে গোলপাহাড়ের মোড় এলাকায়ও দেখলাম অনেক তরুনেরা গোল হয়ে বসে মাঝখানে মোমবাতি জ্বালিয়ে সংগ্রামী গান গাইছে, “তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে, আমরা কজন নবীন মাঝি হাল ধরেছি, শক্ত করে রে..........”
আজকের চট্টগ্রামের সমগ্র আন্দোলনের মূল ব্যাপারটা ছিল, আন্দোলনকারীদের বেশীরভাগই ছিল তরুণ বয়সী, তাদের এই বিক্ষোভ দেখে বারবার শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছিল, বাঙ্গালী এখনও অনেক কিছুই পারে, বাঙ্গালী পারে রুখে দাঁড়াতে। নিজেদের অস্তিত্বে যখন আঘাত আসে, তখন বাঙালীরা সবসময়ই দুর্বার গতিতে তা প্রতিহত করেছে। রাজাকার,যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী বাংলাদেশী জনগণের প্রাণের দাবী, এটা কোন অবস্থাতেই রাজনৈতিক কোন দাবী নয়। বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতির সাথে আজকের তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের কোনই সম্পর্ক নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের ধ্বংসযজ্ঞ,হত্যা,লুন্ঠন,ধর্ষণ ১৯৭১ সালে যারা নিজের চোখে দেখেছেন বা যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভুক্তভোগী ছিলেন শুধু তারাই বুঝতে পারবেন এর বেদনা। এই সীমাহীন কষ্টকে যারা আজ রাজনৈতিক রঙ দিয়ে নোংরা ফায়দা লুটতে ব্যস্ত আছে, তারা কখনোই এই জাতির কাছে ক্ষমা পাবেনা। কারণ বাঙালী জাতি নিজের অস্তিত্বের সাথে কাউকে ছেলেখেলা করতে কখনো দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবেনা।
মোট ৪৭টি ছবি তুলেছি আজকে, সব ছবি এখানে দেয়া সম্ভব হলোনা। যারা ফেসবুকে আমার বন্ধুতালিকায় আছেন, তারা ওখানে সব ছবি পাবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।