এই ব্লগের যাবতীয় কর্মকান্ড জুনায়েদ খানের অনুর্বর মস্তিষ্কের অহেতুক পাগলামি ! বৈ কিছু নয়।
পাড় থেকে চিরাচরিত যে নদীটিকে দেখি, মাঝ নদীতে সে হঠাৎ অপরিচিত হয়ে যায়। পালটে যায় তার মরফোলজি; বাড়তে থাকে নদীপাড়ের সৌন্দর্য। ঘটে অনুভূতিরও পরিবর্তন। এ অনুভূতি অন্যসব অনুভূতি থেকে আলাদা।
কেবল মাঝ নদী থেকেই তা অনুভব করা যায়।
নৌকা ভ্রমণ! বাকৃবি তে ভর্তি হবার আগ পর্যন্ত ব্যাপারটা শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ভৌগলিক কারণেই হোক আর যে কারণেই হোক বিষয়টার সাথে আমার প্রত্যক্ষ পরিচয় ছিল না। বাকৃবি পরিচয় করে দিল ব্রহ্মপুত্রের সাথে। তারপর আস্তে আস্তে নৌকায় চড়াটা নেশার মত হয়ে গেল।
বার্থ ডে পার্টিতে একটা ইভেন্ট যুক্ত হল। পার্টি শেষে নৌকা ভ্রমণ করতেই হবে!
আজো এক ফ্রেন্ডের বার্থ ডে ছিল। ধানসিঁড়িতে লাঞ্চ সেরে সবাই মিলে চলে এলাম ডিসি পার্কে। যায়গাটা সুন্দর। পাশেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সংগ্রহশালা।
দেখার ইচ্ছে থাকলেও সাপ্তাহিক ছুটির থাকায় গেট থেকে ফিরে আসতে হল। অতঃপর পার্কে ঘোরাঘুরি এবং এক যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত! ‘আমরা নৌকায় ফিরব’! নৌকা ভ্রমণ! পুরো পাঁচ কিলোমিটার! ডিসি পার্ক টু বাকৃবি!
ব্রহ্মপুত্রে বহুবার নৌকায় উঠেছি। উদ্দেশ্যহীন ভাবে নির্দিষ্ট একটি যায়গায় ঘন্টার পর ঘণ্টা ঘুরেছি। কিন্তু কোন গন্তব্য ছিল না। আজ গন্তব্য আছে।
এটা ভিসি স্যারের বাসার আশেপাশের নির্দিষ্ট কোন জায়গাও না। সম্পুর্ণ নতুন এক পরিবেশ! তাই ভালোলাগাটাও নতুন!
আমরা পনের জন। ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকা। নদীর দু’পারের ভীন্নতা চোখে পড়ার মত। একপাশে ছোট ছোট টিনের ঘরের পাশে বড় বড় অট্টালিকার সাড়ি আর অন্যপাশে সবুজের সমারোহ; ভাঙনের কবলে পরা ধইঞ্চা গাছের টিকে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা, জানা-অজানা গাছ থেকে ভেসে আসা পরিচিত পাখির কিচির-মিচির শব্দ।
বন্ধুদের প্যারোডি গানের সাথে পাখির কিচির-মিচির মিলে ভালো লাগার পরিমাণটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিল। বহুরূপী নদী এ ব্রহ্মপুত্র। গিরগিটির মত পরিবর্তিত হয় এর মরফোলজি! কোথাওবা ভটভট শব্দ করে ড্রেজিং এর নাম চলছে রমরমা বালু ব্যাবসা, আবার কোথাওবা চলছে দল বেঁধে গোসলের প্রস্তুতি। পাঁচ বছরের শিশুটিও মাঝ নদীতে সাঁতার কাটছে! দেখে লজ্জ্বা পেলাম! ‘হায়! আমি কি করিলাম’! নদী পাড়ে দেখা মিলল একঝাঁক চিলের! কেউবা স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে, কেউবা পাখা ঝাপ্টাচ্ছে আবার কেউবা শিকারের খোঁজে উড়াউড়ি করেছে। এক সাথে এতগুলো চিল দেখার সৌভাগ্য আগে কখনো হয়নি।
শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ দেখা যাচ্ছে। পাশেই ঐতিহাসিক ব্রীজ মোড়! আমার দেখা বাজে যায়গা গুলোর একটি। নদীপথের এ ব্রীজ মোড়কে দেখে বোঝার উপায় নেই যে কুসুমেও কিট থাকে! সেতুর নিচে নৌকা। উপরে প্যাঁ-পোঁ ভ্যাঁ-ভোঁ শব্দ! একটা বাসকে চিৎকার করে উঠলাম। ব্রীজে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এল! বাস শুনলো না! শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ পাড় না হতে হতেই দেখা মিলল লাল রঙের সেই বিখ্যাত রেলব্রীজ টির।
যে ব্রীজটিকে এতদিন শুধু দূর থেকে দেখেই এসেছি। অনেকবার আসি আসি করেও আর আসা হয়নি। ইটের পিলারের ব্রীজটি সত্যিই অসাধারণ!
নৌকা চলছিল স্রোতের টানে। কাজেই পৌঁছতে বেশিক্ষণ লাগার কথা না। লাগলোও না।
বাকৃবির এক লাখ গ্যালনের পানির ট্যাঙ্কটি ক্রমে ক্রমে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে এল। বৈশাখী চত্বরে অবতরণের মধ্য দিয়েই সপাপ্তি ঘটলো স্বাপ্নিক এক অধ্যায়ের। স্বাপ্নিকই বটে! সবার চোখ তো তাই বলছিল!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।