https://www.facebook.com/tanvir.mh
সারা -গাড়িটা একটু থামাবেন?
আকিব-গাড়ি কি আদৌ চলছে? যাও নেমে পড়ো।
-না সেটা না। আপনি এতক্ষন ধরে ড্রাইভ করছেন তাই ভাবলাম আপনার একটু রেস্ট দরকার।
-গাড়ি ড্রাইভ করছি আমি আর টায়ার্ড হলে তুমি। প্রেমে টেমে পড়ো নাই তো?
-কি যে বলেন না।
আকিবের এটা দ্বিতীয় মুভি। ভালো একটা ভৌতিক মুভি করার চেষ্টা করছে। তবে প্রথমটি তেমন সফলতার মুখ দেখেনি। ব্যর্থতা জীবন থামিয়ে দিতে পারেনা। তাই এই মুভিটা নিয়েও সে খুব মনোযোগী।
গ্রামের একটি পুরাতন কবরস্থানে দিন রাত যাপন করা একটি মেয়ের জীবনযাপন নিয়ে গল্পটা। চরিত্রের জন্য মেয়ে খুজতে অনেক সময় যায়। কিন্তু ফেসবুকে পরিচয় হয় টিভিতে কয়েকটি অ্যাড করা “সারার” সাথে। আজ সারাকে নিয়ে একটি গ্রামে যাচ্ছে শুটিং লোকেশান দেখতে। মাঝরাতে কবরের পরিবেশ দেখবে।
-আপনি হটাত ভূতের মুভি বানাচ্ছেন যে?
-কে বলল ভূত? মানুষ জানে ভূতের মুভি। কিন্তু হতে পারে সেই ভূত আবার প্রেম করছে আরেক ভূতের সাথে। তাইলে একদিক থেকে তো এটা প্রেমের মুভিও হল।
-এ ধরনের মুভি চলবে?
-নাহ।
আকিবের কাছ থেকে “না” শুনে একটু অবাক হল সারা।
এই লোক আসলে কি? নিজেই কি ভূত নাকি?
হটাত মায়ের ফোন আকিবের ফোনে। মা ঢাকায় আসতেছে হুট করেই। তার ফ্ল্যাটেই উঠবে। এভাবে না বলে মা চলে আসাতে একটু ভয়ই পেল আকিব। তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থামিয়ে বাসায় তার কেয়ারটেকার কে ফোন দিয়ে বলল সব পরিষ্কার করতে।
বাসার এক কিলোমিটার আশেপাশে যাতে কোন সিগারেট না থাকে সেটার উপর জোর দিল।
-সারা আজ আর যাওয়া হবেনা। রাতের বেলায় শুটিং স্পটটা দেখার সৌভাগ্য হলনা। হুট করে মা ঢাকায় চলে এলেন। এখন আমার মৃত দেহ হলেও মাঝরাতের আগে ঢাকায় পৌছতে হবে।
-এত ভয় পান?
-হা।
হাইওয়েতে গাড়ি চলছে ৮০ কিলো বেগে। “সারা” গাঁ এলিয়ে হতাশ ভঙ্গীতে মনে মনে বলছে এই ছিল আমার কপালে।
এই রকম ডিরেক্টরই ছিল!
আকিব একটা সিগারেট ধরিয়ে সারাকে বলল স্ক্রিপ্টটা দেখো। চরিত্রটা বুঝার চেষ্টা করো।
শুধু শুধু মন খারাপ করে বসে থেকে কি হবে। ঠিক তখনই রাস্তার একটু দূরে এক মেয়ে ইশারা দিচ্ছে গাড়ি থামাতে। “সারা” বলে যাচ্ছে না থামাবেন না। কিন্তু আকিব থামাল।
-আমাকে ঢাকা নিয়ে যান প্লিজ আমাকে ঢাকা নিয়ে যান।
আকিবঃ-আপনি ছিনতাইকারী না তো?
সারাঃ-(আস্তে করে) গাড়ি চালিয়ে যান। এটা ফান করার টাইম না।
আকিবঃ-আচ্ছা উঠুন। পেছনের ৩ টা সিটই খালি। তবে ১০০ টাকা দিতে হবে।
মেয়েটি বলল তার কাছে কোন টাকা নেই।
-নেই তো কি? ঢাকায় গিয়ে দিবেন।
সারা মেজাজ খারাপ করে বসে আছে। এই লোকের সাথে ঘুরলে বিপদ, আরও বাড়বে। ঢাকা যে কখন যাবো।
মেয়েটির নাম হল “মোনা”।
-কি ব্যাপার বলুন তো এভাবে এই রাতে রাস্তায় আপনি?
-আপনার কাছে পানি আছে?
-খাদ্যদ্রব্যের মাঝে শুধু সিগারেট আছে। সারার কাছে মনে হয় আছে।
সারার কাছ থেকে পানির বোতল নিয়ে এক ঢুকে অনেক খানি পানি খেয়ে নিলো। অতঃপর বলতে শুরু করলো তার বিপদের কথা।
জীবনের বাকা পথে তার জীবন আজ বিপথে। নিজেকে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে ফেলে প্রতিনিয়তই এ ধরনের বিপদে ফেলে।
আকিব বলল “আপনি এ কথা গুলি তো লুকিয়েও রাখতে পারতেন”।
মোনাঃ-আপনারা আমাকে বিশ্বাস করে গাড়িতে তুলেছেন। আমার আর কিসের ভয়।
বিশ্বাসীদের সামনে আমি ভয় পাইনা। ভয় হয় সমাজের মুখোশধারী মানুষদের।
আকিব সারার দিকে তাকিয়ে একটা চাহনি দিল যাতে বুঝা গেল আকিব গাড়িতে পূর্ণিকে তুলে সারাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। কিছুক্ষনের মাঝেই মোনা ঘুমিয়ে গেল।
-সারা একটা গান গাও।
-এখন মুড নেই। আর নায়িকাদের কি গায়িকা বানাতে চান নাকি?
-নায়িকা বল কেন? আমার মুভিতে নায়ক ফায়ক থাকেনা। প্রতিটি চরিত্রই দামি। ফুটবলের ১১ টা প্লেয়ারের মতো। যে কেউ ভালো করতে পারে।
আর গান না গাইলে আমি কিন্তু এমন এক গান ছাড়বো যেটা তোমাকে সোজা নাক কান গলা বিশেষজ্ঞর কাছে নিয়ে যাবে।
সারা গাইতে শুরু করলো
“শুনো গো দখিন হাওয়া প্রেম করেছি আমি……….”
মেয়েটা ভালো গান গায়। নায়িকা হওয়ার জন্য নিজের অনেক প্রতিভাকেই কবর দিয়েছে সে। তার গান শুনে ঘুম থেকে উঠে মোনা।
উঠে সামনে তাকাতেই দেখেই পুলিশ চেকপোস্ট।
“মোনা” হুট করে ভয়ার্ত চোখ নিয়ে বলতে থাকে গাড়ি থামাবেন না গাড়ি থামাবেন না। এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়ি থেমে যায় যায়।
পুলিশ গাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজে অনেকগুলি ইয়াবার ট্যাবলেট খুঁজে পায়।
আকিব নিজেকে ডিরেক্টর বলে পরিচয় দিচ্ছে আর মোনার ব্যাপারটা বলে যাচ্ছে। কিভাবে তার সাথে পরিচয়।
এগুলা তার জিনিশ নয়। কিন্তু পুলিশ মানতে নারাজ।
-গাড়ি আপনার তো?
-জী আমার।
-তো এর দায়ভার কি রহিম উদ্দিন নিবে?
আকিবের সব চিন্তা সারাকে নিয়ে। ওর তো কোন দোষ ছিলনা।
পুলিশের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করে সারাকে তার চাচার হাতে দেয়া হয়। এই কলঙ্কের একটুও দাগ ও যাতে মেয়েটির শরীরে না লাগে তাই সে করে গিয়েছে।
মোনাকেও জেলে যেতে হয়। কিছুদিন জেলে থাকার পর আকিব ছাড়া পায়। ততদিনে মিডিয়ায় তার নামে যা প্রকাশ পেয়েছে তাতে তার দাড়া আর কিছু করার সম্ভবনা খুবই কম।
পরিবারের কেউ তার পাশে নেই। মা চেয়েছিল ছেলে বড় সরকারী অফিসার হবে কিন্তু হয়েছে নেশাগ্রস্ত চিত্রপরিচালক। একা সারাদিন আকিব এখন লেখালেখি করে। কলম ভেঙ্গে আসে খাতা ছিড়ে যায়। সে লিখতে লিখতেই শেষ হয়ে যাবার প্ল্যান নিয়ে নিয়েছে।
ঘর থেকে একদমই বের হয়না। কতদিন আগের প্রাণচঞ্চল মানুষটি আজ নিস্তেজ এক জর পদার্থ।
রাত ২ টার দিকে আকিবের দরজায় কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। দুর্বল শরীর নিয়ে দরজার কাছে যেতেই সে পরে যাচ্ছে। দরজা খুলতেই দেখে সেই মোনা মেয়েটি।
দরজা খুলেই আবার বন্ধ করে দিতে যাবে তখন মোনা জোর করে ঘরে ঢুঁকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
-এই বাসার ঠিকানা কই পেলে?
-পুলিশ দিয়েছে। পুলিশ আপনাকে নজরে রাখে।
-তুমি কেন আসছ?
-জানিনা।
-তোমার উপর আমার কোন রাগ নেই।
চলে যাও।
-রাগ মানুষ ভালোবাসার মানুষের উপর করে। আপনি আমার উপর কেন করবেন?
-জাস্ট গেট আউট।
একটু চেঁচিয়ে কথা বলাতেই আকিবের মাথা ধরে এলো। অনেকদিন ধরে শরীরে নানা রোগ সৃষ্টি হয়েছে।
মোনা পানি আনতে গিয়ে অগোছালো বাসায় খেউ হারিয়ে ফেলে। আমি এই মানুষটাকে কি করে দিলাম। এগুলা ভাবতেই গ্লাস জোরে দেয়ালে ফেলে দিয়ে জোরে চিৎকার শুরু করে।
আকিব কি হল দেখতে যেতেই মোনা তার পায়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।
-কি কাঁদছ কেন?
-ঐদিন আমি আসলে স্বাভাবিক ছিলাম না।
আমার খেয়ালই ছিল না আমার সাথে ওগুলা ছিল। আমি আমার জীবন থেকে পালাতে চেয়েছিলাম। আমি পালাতে গিয়ে আপনাকে শেষ করে দিলাম। আপনাকে আপনার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম।
সকাল হয়ে আসছে।
আকিব তার কাঁধের ব্যাগটা নিয়ে বের হচ্ছে। এভাবে থাকা যায়না। মোনার মত একটা মেয়ে নতুন জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। আর আমি এভাবে কেন মারা যাবো?
স্বপ্নগুলি আবার নতুন করে সাজাতে হবে। শত বাধা বিপত্তি পারি দিতে হবে।
অনেক মুভি বানাতে হবে। চারদেয়ালে স্বপ্নগুলিকে আটকে রাখা যাবেনা।
তানভীর মাহমুদুল হাসান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।