মহলদার
জীবন জীবিকার জন্য মানুষ কত বিচিত্র পেশাই না বেছে নেয়। হঠাৎ করে সেদিন এমনই একটা পেশা চোখে পড়ল - “কেঁচো ধরা” যা আমার আগে জানাই ছিলনা। আমরা অনেকেই জানি যারা মৎস্যজীবি তারা কেঁচো খোঁড়েন মাছ ধরার জন্য। রাস্তার আশেপাশে লোহার আংটা দিয়ে কেঁচো খুঁড়তে দেখা যায় তাদের। কিন্তু মাটি না খুঁড়ে বিশেষ কায়দায় কেঁচো ধরার পদ্ধতিটি দেখলাম কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রামে।
দেখলাম একজন বৃদ্ধ তার নাতিকে নিয়ে কেঁচো ধরছেন। দুজনকে কেঁচো ধরতে দেখে থামলাম। দেখি মাটির ভেতর থেকে কেঁচো বের হয়ে আসছে আর দু’জনে সেগুলো ধরে সিমেন্টের খালি বস্তায় রাখছে। জিজ্ঞেস করলাম চাচা কিভাবে কেঁচো বের করলেন। চাচার জবাব, দাঁড়ান সিস্টেম দেখাচ্ছি।
সবগুলো কেঁচো ধরার পর একটু পাশে সরে গিয়ে কেঁচোর নির্গত মাটি দেখে ঠিক করলেন নূতন একটি জায়গা। সেখানে পাশের একটা খাল থেকে এক টিন পানি আনলেন। পানির মধ্যে শুকনা কয়েকটি ফল ভিজিয়ে তা হাত দিয়ে কচলিয়ে কচলিয়ে ফলের কষ বের করতে থাকলেন। টিনের পানিকে তখন মনে হতে লাগল যেন হুইল পাউডার গোলানো হয়েছে কাপড় ধোয়ার জন্য। কি ফেনা! অবাক হলাম দেখে।
চাচা বললেন এটা দিয়ে কাপড় ও ধোয়া যায়। জানতে চাইলাম ফলের নাম কি? বললেন রিটা ফল। কোথায় পাওয়া যায় জানতে চাইলে জানালেন দোকানেই পাওয়া যায়, ১০ টাকা শ (১০০ গ্রাম)।
এরপর সেই পানি ঐ জায়গায় ঢেলে দিলেন। আর যায় কোথায়, মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে মাটি ফুড়ে বের হয়ে আসলে লাগল গাদা গাদা কেঁচো আর দ’জনে ধরে ভরতে থাকল বস্তায়।
দেখলাম অল্প একটু জায়গা থেকে বের হলো প্রায় আধা কেজির মতো কেঁচো। জিজ্ঞেস করলাম কত গুলো বড়শী আপনার? বললেন নিজের নৌকা, বড়শী কিছুই নাই, আমরা এগুলো বিক্রি করি। বুড়ো মানুষ, কামলা দিতে পারিনা, জাল নৌকা ও নাই, এই কাজ করতে তো ভাল লাগেনা কিন্তু কি করবো?
এই পেশাটি নাকি সুনামগঞ্জ অঞ্চলে নুতন নয়। কিন্তু আমার চোখে পড়ল নুতন। তবে এই পদ্ধতিতে অনেক মৎস্যজীবি নিজেরা মাছ ধরার জন্যও কেঁেচা ধরে থাকে, সবাই বিক্রি করে না।
চাচার সিস্টেম দেখে আবারও রওনা দিলাম, ভাবতে লাগলাম, পেশা, কত বিচিত্র!
(কেঁচো ধরার ছবি দেখে লোকে কি কইবে তাই চাচা কোথাও ছবি ছাপাতে নিষেধ করেছিল, তার কথা রক্ষার্থে পূর্ণাঙ্গ ছবি দেওয়া হল না)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।