মহলদার
আপনি যদি খুলনা-যশোর কিংবা কখনো কখনো এর আশে পাশের কোন অঞ্চলের সব্জি বাজারে কিংবা হাটে ঢোকেন তাহলে দেখবেন বাজারের কোথাও কেউ গাছের ডালের মত কিছু সাজিয়ে বসে আছে। অথবা, আপনি যদি এই অঞ্চলের কোন বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান, খাওয়ার সময় আপনি হয়ত আপনার পাতে/খাবারের প্লেটে (গ্রামাঞ্চলে কোন খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন থাকলে আগে কলা পাতা কিংবা পদ্ম পাতায় খাবার পরিবেশন করা হত, সম্ভবতঃ সেখান থেকেই পাত শব্দটি এসে থাকতে পারে। কলা পাতা কিংবা পদ্ম পাতায় খাওয়ার প্রচলন না থাকলেও পাত শব্দটি খুলনা অঞ্চলে এখনো প্রচলিত) দেওয়া ঘন ডাল, আলুর দম, মাছের ঝোল, কিংবা মাংসের মধ্যে দেখতে পাবেন গাছের ডালের মত কি যেন দেওয়া হয়েছে। এই ডাল দেখে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এটি হল এক ধরনের মসলা যা চুই বা চুই ঝাল বা চই নামে পরিচিত।
খুলনা-যশোর অঞ্চলে বিশেষ করে হিন্দু পরিবারের রান্নায় এই চুই ঝালের যেন বিকল্প নেই। মাংস ও ডাল রান্না তো যেন চুই ছাড়া সম্ভবই নয় তাদের কাছে। আপনি খুলনার কোন কোন খাবারের দোকানে খেতে গেলেও পেতে পারেন এই চুই ঝালের স্বাদ। নামেই বোঝা যায় এটি স্বাদে ঝাল, কিন্তু এই ঝাল একটু আলাদা। এর রয়েছে একটি আলাদা গন্ধ যা তরকারি বা রান্না মাংসে আনে আলাদা এক আমেজ।
আরো মজার ব্যাপার হলো খাওয়ার পর এই ঝাল বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়না অর্থাৎ এটা খেয়ে যদি আপনার ভীষন ঝাল লেগে যায়, মাত্র কিছুক্ষন পরেই সেটা চলে যাবে।
চুই গাছ
চুই ঝালের গাছ দেখতে অনেকটা পান গাছের মত। এর পাতাও খানিকটা পান পাতার মত। খুলনার গ্রামাঞ্চলের বিয়েতে বর পক্ষকে বোকা বানাতে কনে পক্ষ কখনো কখনো পানের পরিবর্তে চুই গাছের পাতা দিয়ে পান সেজে দেয়। বিক্রেতাদের তথ্য মতে, যশোর অঞ্চলে এর চাষ হয় বেশী।
এই চুই গাছ লাগানো হয় ক্ষেতে কিংবা কখনো কখনো কোন বড় গাছের গোড়ায় চারা লাগিয়ে একে গাছেও তুলে দেওয়া হয়। মসলা হিসাবে এর শাখা, শেকড় উভয়ই ব্যবহার করা হয় তবে পাতার ব্যবহার নেই। শাখার চেয়ে শিকড়ের ঝাল বেশী। এজন্য শিকড়ের চুইয়ের দাম ও বেশী। আগে বাজারে চুইয়ের দাম কম থাকলেও এখন এর দাম বেশ চড়া।
প্রতি কেজি শাখা চুই ২০০-৩০০ টাকা, শেকড় বা গোড়ার দিকের প্রতি কেজি চুইয়ের দাম ৩০০-৪০০টাকা পর্যন্ত। এই চড়া দামের কারনেই এই অঞ্চলের অধিকাংশ গরীব মানুষের মসলার তালিকা থেকে চুই ঝাল ও বাদ পড়তে শুরু করেছে।
চুই-রাজ হাঁসের মাংস
(সবগুলো ছবি নিজের তোলা)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।