তিন পার্বত্য জেলা'র প্রতিটি যেন সৌন্দর্যের অপরুপ ভাণ্ডার। বহুকাল ধরে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ এখানে বসবাস করে আসছে। যদিও বসবাসকারী জনসংখ্যার অধিকাংশই পাহাড়ী তবুও এখানে রয়েছে বাঙ্গালীরও বসবাস। আর তাই এই অঞ্চলের পাহাড়ী-বাঙ্গালী উভয় জনগোষ্ঠীই একে অপরকে পরম আত্মীয় হিসেবে বরণ করে নিয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরেই সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আসছে এই অঞ্চলে।
পূজা-পার্বণ, ঈদ, নববর্ষ বরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একে অপরকে ছাড়া যেন কোন কিছুই কল্পনা করতে পারে না। একজন যেন আরেকজনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করলে তাদের মনে হয় কিছু যেন অসম্পূর্ণ রয়ে গেলো। সবাই যেন একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতেই ভালোবাসে, একই সুরে গান গাইতে চায়, নেচে বেড়াতে চায় যদিও প্রত্যেকেরই এসকল ক্ষেত্রে নিজস্বতা আছে। কিন্তু তারপরও তারা যেন সবাই একেই পথে হাঁটতে চায়। তারা যেন তাদের সম্পর্কের মাঝে এমন একটি রং খুজে পেতে চায় যেটি রং ধনুর সাত রংকে একটি রং-এ পরিণত করে।
কিন্তু আজ পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে । কোথায় এই অঞ্চলের সেই মানুষগুলো, যারা একসাথে পথ পাড়ি দিতে চেয়েছিল। তাদের সেই বিশ্বাস আজ কোথায়? কেন সেই বিশ্বাসে আজ প্রতিনিয়ত ঘুণেধরছে? আজ কেন কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না? কেন আজ একে অন্যকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে? এর কারণ কি পার্বত্য অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি (হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি)। যদি তাই হয় তাহলে এর পিছনের গল্প কী, এর পিছনে কার ইন্ধন আছে? আর তা যদি না হয় তাহলে কেন বেশ কিছুদিন পর পর পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসছে এবং তা প্রতিনিয়ত পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাসে আঘাত করছে।
বিষয়টির স্পষ্টতার জন্য ছোট একটি উদাহরণ দিচ্ছিঃ গত ২২শে আগস্ট রাঙ্গামাটি জেলার কলেজগেট সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাসে টমাস বড়ুয়া নামে এক কিশোরের লাশ গাছের সাথে ঝুলে থাকা অবস্থায় দেখা যায়।
স্বাভাবিকভাবেই এই ঝুলন্ত লাশটি দেখে মানুষের মনে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। কিন্তু পুলিশের একনিষ্ঠ কর্মীরা এই কৌতূহলকে যেন আরো বাড়িয়ে দিল। মানুষের ভীড়ের মধ্যে থেকে দুই-একজন লাশটি নামানোর জন্য অনুরোধ করলেও পুলিশ তাদের বড়কর্তা আসার নাম দিয়ে সেইদিকে কর্ণপাত করল না। ঝুলন্ত লাশটি নামানোর ক্ষেত্রে নিল অনেকক্ষণ সময়। কিন্তু এতোক্ষণ লাশটি ঝুলিয়ে রাখার কারণ কী ছিল ? লাশটি কি কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন হিসেবে এতোক্ষণ ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছিল নাকি এর কারণ ছিল যে যতক্ষণ লাশটি ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে ততক্ষণ মানুষের ভীড় বাড়বে আর এই ভীড়ের মানুষদের মধ্যে নানান প্রশ্নের জন্ম নিবে।
প্রশ্নগুলো হয়তো এরকমই, ১) পাহাড়ীরা হত্যা করেছে ২) বাঙ্গালীরা হত্যা করে পাহাড়ীদের দোষ দিচ্ছে ৩) পাহাড়ি দুই গ্রুপের মধ্যে যেকোনো একটি হত্যা করে একে, অন্যের উপর দোষ চাপাচ্ছে ইত্যাদি। কিন্তু এই সকল প্রশ্ন উদ্রেকের মূল হোতা কারা, কারা মানুষের মধ্যে এই সকল প্রশ্নের উদ্রেক ঘটাচ্ছে। শুধুই কি পুলিশরা, নাকি এর পিছনে আরো পর্দা আছে। আর যারা এইসব প্রশ্ন জনগণের মনে সৃষ্টি করছে তাদের মূল উদ্দেশ্যে কী ? এই সকল প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আজ খুবেই জরুরী। তা না হলে দেশের মধ্যে থেকে অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার মত হারিয়ে যাবে এই পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্য।
আর আমরা ধীরে ধীরে পরিণত হব নশ্বর জাতিতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।