জীবন্ত মানব সত্তার অস্তিত্বই নিঃসন্দেহে মানবের সকল ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ...
[আকারে বড় হওয়ার কারনে এই পোষ্টটি ৩(তিন) পর্বে শেষ হবে, এর আগে প্রথম এবং ২য় পর্ব প্রকাশ হয়েছে, এবার প্রকাশ হলো শেষ পর্ব]
১ম পর্বের ৩য় প্যরাগ্রাফটি এডিট করা হয়েছে
১ম পর্বের জন্য Click This Link
২য় পর্বের জন্য Click This Link
জামায়াতের বিরুদ্ধে আমরা যা করিনি তা হলো তার মতাদর্শের রাজনৈতিক সমালোচনা- তার যুক্তির অসারতা প্রমান করে দেওয়া, তার নৈতিকতার যুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা। রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে মুসলিম লীগ যাদুঘরে ঠাই নিয়েছে- কিন্ত আমরা খেয়াল করিনি একাজটা করার জন্য আমদের অগনতান্ত্রিক ভাবে কাউকে প্রতিহত কিংবা নির্মুল করতে হয়নি। ন্যাপ তথা আওয়ামীলীগের পাল্টা মতাদর্শই তাকে রাজনৈতিক ভাবে নাকচ করে দিয়েছে।
জামায়াতকেও এভাবে নাকচ করে দেওয়া সম্ভব- তার রাজনীতির দেউলিয়াত্ব প্রমান করে দেওয়া যায়, এমনকি গনতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চার ভিতর দিয়েই।
মুখে আমরা বলি জামায়াত ৭১ এর পরাজিত শক্তি- কিন্ত অন্তরে সেই বিশ্বাসের পক্ষে আমাদের আস্থা কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই যায়।
আমরা জামায়াতকে অবাধ রাজনৈতিক অনুশীলনের অধিকার দিতে চাই না- সম্ভবতঃ এই আশংকা থেকে যে- জামায়াতকে রাজনৈতিক ভাবে নাকচ করার মত শক্তিশালী রাজনৈতিক মতাদর্শ আমাদের নাই অথবা জামায়াতের রাজনীতি জনপ্রিয় হওয়ার জন্য সামাজিক বাস্তবতা এখনও রয়ে গেছে। অথচ সুর্যসেন হলের যুদ্ধবন্দী তরুন সেই সব শিবির কর্মী যারা জামায়াতের রাজনীতির ভিতর তার মুক্তি খোঁজে -- তার সঙ্গে আমাদের মতাদর্শিক সংগ্রাম অনেক কার্যকর হতো- অবাধ রাজনৈতিক অনুশীলনের ভেতর দিয়ে সেই সব কর্মীদের কাছাকাছি যদি আমরা যেতে পারতাম। যে তরুন শিবিরের রাজনীতিকে দেখে তার স্বপ্ন পুরনের হাতিয়ার হিসাবে- যে সত্যিই বিশ্বাস করে যে জামায়াত শিবিরের রাজনীতী তাকে একটা ইনসাফের সমাজে নিয়ে যাবে- তাকে কি আমি নিজামী-মুজাহিদের হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকব? ইনসাফ চাওয়া তো দোষের নয়- কিন্ত নিজামী-মুজাহিদের রাজনীতি যে তাকে ইনসাফ দিতে পারে না- একথাটার প্রমান দেওয়ার জন্য তো তার কাছাকাছি আমি যেতে পারি নাই। তার ইনসাফের স্বপ্ন দেখার ন্যয্যতা- তার রাজনীতি করার অধিকার মেনে নিয়ে তো তার সাথে আমি বাহাসে যাই নাই। যদি যেতাম তবে আমার কথা তার কাছে নেহাৎই এক নাস্তিকের কথা হিসাবে রয়ে যেত না।
আমরা তার সাথে বাহাস শুরু করার আগেই তাকে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছি। আমরা ভেবেছি শিবির বুঝি শুধু অই শরীরটা যাকে আমি এইমাত্র লাশ বানালাম-তার মাথার ভিতরে থাকে যে চিন্তা যে আদর্শ সেটা বুঝি শিবির নয়- আর যদি হয়ও-লাশের সাথে সাথে বুঝি সেও ইন্তেকাল করলো……। ইন্নালিল্লাহে ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলাদেশে সক্রিয় ইসলামিক দলগুলো সম্পর্কে আমদের ধারনাও খুব পরিস্কার নয়। মোটা দাগে ধর্ম নিয়ে যে কোন রাজনৈতিক তৎপরতাকেই আমরা জামাতের নামে চালিয়ে দেই।
জে এম বি’র রাজনীতিও জামাত কর্তৃক সৃষ্ট, ইসলামিক শাসনতন্ত্র বলতেও বুঝি জামায়াত-হরকাতুল জিহাদও হলো জামায়াত- লালনের মুর্তি উপড়ে ফেললেও জামায়াত- বিচারকদের ওপর বোমা মারলেও তা জামায়াত- ইসলামিক দল গুলো কোনটা কি পর্যায়ের র্যাডিকেল --তার চরম পন্থার মাত্রা কি- আমাদের সে বিষয়ে পরিস্কার কোন জ্ঞান নাই……
জামায়াতের বিরোধিতায় আমাদের এই বালখিল্যতা প্রমান করে আমরা আমাদের শত্রু সম্পর্কে কত কম ধারনা রাখি। আমাদের ঘৃনার বিপরীতে একজন জামায়াত কর্মী/সমর্থক তার নৈতিক মনোবল জড়ো করে আমাদের এই বালখিল্যতা থেকেই। সে জানে আমাদের অনেক সমালোচনাই গড্ডালিকায় গা ভাসানো, আমাদের অনেক মন্তব্যই ঢালাও।
বিএনপি সরকারে থাকার সময় জে এম বি’র তৎপরতা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে জে এম বি’র বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযানের সময় শেখ হাসিনা শ্লেষের সাথে বলেছিলেন- জে এম বি’কে খুজতে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? জে এম বি আছে আপনার ঘরে-আপনার মন্ত্রিসভায়…… হায় আমাদের নেত্রী-আমরা জামায়াতও চিনি না- জে এম বি ও চিনি না।
মোহম্মদপুরের কোন এক রোডের একপ্রান্তে থাকে আমার এক বন্ধু তারেক হাসান(নামটা বদলে দিয়েছি)।
গত ২০/২২ বছর ধরে আমি এই পরিবারটিকে চিনি…… পরিবারের প্রধান এক সময় মুসলিম লীগ রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে তার মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন আরও পরে তাদের ছোট ভাই আমার বন্ধু যে র্যাডিকেল মার্ক্সবাদের চর্চার মধ্যে যুক্ত ছিলেন।
গতমাসে এক সন্ধ্যায় তারেক আমাকে ফোন করে, সে একটা সমস্যায় পড়েছে- আমার কাছে পরামর্শ চায়। সমস্যাটি তার ভাগ্নেকে নিয়ে… লিখাপড়ায় ভাল রেজাল্ট করা, ক্রিকেট-ইন্টারনেট পাগল এই ভাগ্নেকে আমিও চিনি, জানা গেছে সে নাকি হিজবুত তাহরীর একজন সক্রিয় সদস্য!!!
খুবই স্পর্শকাতর একটা সমস্যা- একজন তরুনের কাছে তার আদর্শ- স্বপ্ন অনেক সময়ই তার নিজের পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পর্কের উর্দ্ধে মহান একটা বিষয় হিসাবে বিরাজ করে। আমার কাছে যেটা সঙ্গত মনে হয়েছে-আমি সেই পরামর্শই তাকে দিয়েছি……ধৈর্য্য নিয়ে তার সাথে কথা বলতে বলেছি, তার যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে আক্রমন করতে বলেছি।
বারবার বলেছি কোন জোরাজুরি না করতে-কোন ধরনের শাস্তিমুলক পদ্ধতি আরোপ না করতে।
শেষে রসিকতা করে বলেছি-ভাল প্রস্তুতি নিয়ে- রেডী হয়ে তাকে নিয়ে আলোচনায় বসবা-নাইলে দেখা যাবে তুমিই উলটা কনভিন্স হইয়া আগামী সপ্তাহে হিজবুত তাহরীতে যোগ দিচ্ছ- হাঃহাঃ হাঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।