আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গনতন্ত্রের দুষমন জামাতশিবিরকে আমরা কিভাবে মোকাবিলা করবো... [পর্ব দুই]

জীবন্ত মানব সত্তার অস্তিত্বই নিঃসন্দেহে মানবের সকল ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ...

[আকারে বড় হওয়ার কারনে এই পোষ্টটি ৩(তিন) পর্বে শেষ হবে, পর্ব দুই প্রকাশ হলো, শেষ পর্বের জন্য অপেক্ষা করেন] প্রথম পর্বের জন্য ক্লিক করেন-- Click This Link সন্দেহ নাই আমাদের রাজনীতিতে জামায়াত একটা চরম অগনতান্ত্রিক শক্তি- আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তার রাজনৈতিক অবস্থান অতি অবশ্যই গনবিরোধী এবং আজ পর্যন্ত জামায়াত ১৯৭১ সালে নেওয়া তার রাজনৈতিক অবস্থানের কোন ব্যাখা দেয় নাই- এটা সে ঠিক মনে করে না ভুল মনে করে!! ২৫মার্চের রাত্রের নৃশংশতায় তার অবস্থান কি? এই গনহত্যা- মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ কি জায়েজ?? এমনকি পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার জন্য তা হলেও?? এসব প্রশ্নের কোন ব্যাখা জামায়াত আজ পর্যন্ত দেয় নাই-- না তাদের ঘোষনা পত্রে, না তাদের কোন প্রকাশিত পার্টির দলিলে। জানিনা তাদের কর্মীরা এ বিষয়ে তাদের নেতাদের প্রশ্ন করেন কিনা আর করলেও কি ব্যাখা তারা দিয়ে থাকেন। আমাদের দৃশ্যমান রাজনীতিতে জামায়াত সক্রিয় আছে এসব প্রশ্নের সদুত্তর ব্যতিরেকেই। আমাদের যাবতীয় ঘৃনা আর নিন্দাবাদের বিপরীতে। আর যাবতীয় অগনতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে জারীকৃত আমাদের লড়াইয়ের এক অন্যতম প্রধান ফ্রন্ট- আমরা খুলেছি জামায়াতের বিরুদ্ধে।

কিন্ত তবুও জামায়তে ইসলামীর রাজনীতিকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে যে জরুরী প্রশ্নটা আমাকে নাড়া দিয়ে যায়-তা হলো কোন রাজনৈতিক মতবাদকে পরাজিত করার জন্য তাকে প্রতিহত করা, তার কন্ঠরোধ করা, তাকে শারিরীক ভাবে আক্রমন করা কোন কার্যকরী পদ্ধতি কিনা। ক্ষতিকর বিরুদ্ধমত কিংবা আদর্শকে নাকচ করার জন্য যে কোন ধরনের অগনতান্ত্রিক পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া গনতান্ত্রিকতার জন্য ভাল উদাহরন কিনা!! আমার ধারনা এটা ভুল পদ্ধতি- আমাদের রাজনৈতিক চর্চার ভিতর গনতান্ত্রিক পরিবেশ যদি আমরা বজায় রাখতে চাই-- তবে যে কোন ধরনের অগনতান্ত্রিকতার চর্চা করার উদাহরন আমাদের জন্য ভাল ফল বয়ে আনবে না। জামায়াত কে প্রতিহত করার প্রশ্নে আমরা যে ধরনের অগনতান্ত্রিক পদ্ধতির আশ্রয় নেই তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মন্দ উদাহরন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। যে কোন বিরুদ্ধ মত কে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা না করে-তাকে গলা টিপে শেষ করার ক্ষতিকর অভ্যাস এখান থেকেই শুরু হয়। পরবর্তীতে তা এক ধাপ এগিয়ে-- ‘দল যা বলছে তাই ঠিক’ জাতীয় আমাদের সংকীর্ন দলবাজীতে পরিনত হয়।

দলীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে যা তাই বুঝি ভেঙে দেওয়া যায়, রাজনৈতিক ভিন্নমতের জবাব দেওয়া যায়-শক্তির ভাষায়। জামায়াত বিরোধিতায় অগনতান্ত্রিকতার চর্চা, এক সময় আমাদের অজান্তেই আমাদের রাজনৈতিক অনুশীলনের অংশ হয়ে দাড়ায়- ফলাফল বদরুদ্দৌজা চৌধুরী যখন বিএনপি থেকে বের হয়ে বিকল্প ধারা করে--আলাদা রাজনৈতিক দল গড়ে—তখন সেই কাউন্সিলে হামলা করা, রাস্তাঘাটে তাদের নেতৃবৃন্দকে শারিরীক ভাবে লাঞ্ঝনা করা অত্যান্ত জায়েজ একটা কাজে পরিনত হয়। বদরুদ্দৌজা চৌধুরীকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করার আপাত কষ্টকর পথে বিএনপিকে হাটতে দেখিনা- বদলে এক দঙ্গল মাসলম্যান দিয়ে কাজ সেরে ফেলা হয়। রাজনীতির দলে হাজী সেলিম আর পিন্টুদের কদর বেড়ে যায়। একই জিনিশ আমরা দেখি কাদের সিদ্দিকী্ যখন আওয়ামীলীগ ছেড়ে আলাদা দল গড়তে যায়- কিংবা হালের সংস্কারপন্থীদেরকে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা যেভাবে শারিরীক ভাবে মোকাবিলা করে।

বিরুদ্ধ মতের চর্চা কিভাবে করতে হয়, তার কোন ঐতিহ্য আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। দলের বাইরে ভিন্ন ভাবে কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে ভাবতে চাইলে তার জন্য ভয়-ভীতিহীনভাবে রাজনীতিও চর্চার কোন পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করতে পারি নাই। আমাদের সামগ্রিক রাজনীতির জন্য এ এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। অথচ আমাদের জাতীয় রাজনীতি কেন দুইটা দলের হাতে জিম্মি-এ আফশোষ আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা যদি একমত হই যে, কোন ধরনের চিন্তা অথবা মতাদর্শ কখনোই সশরীরে অবস্থান করে না- আমরা যদি মেনে নেই চিন্তার কোন শারিরীক উপস্থিতি নেই এবং তা কোন ব্যাক্তির দেহে অবস্থান করে না- তাহলে কোন ব্যক্তিকে শারিরীক ভাবে নির্মুল করে সেই মতাদর্শকে কি আমরা পরাজিত করতে পারবো? চিন্তাগত মতাদর্শকে পালটা মতাদর্শ দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছাড়া তাকে নাকচ কি করা যায়? জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যেককে আজ যদি রাস্তায় পিটিয়ে মেরেও ফেলি- জামায়াত কি নির্মুল হয়ে যাবে? অথচ রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে জামায়াতের উত্থানের পর থেকে আমরা চেয়েছি তাকে শারিরীক ভাবে নির্মুল করতে, যেখানে যেভাবে সম্ভব তার তৎপরতাকে প্রতিহত করতে- আমরা চেয়েছি তাদের নেতাদের সামাজিক ভাবে লাঞ্ছিত করতে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে – আর তাদের মতাদর্শের সমালোচনা করতে গিয়ে করেছি বিস্তর গালিগালাজ।

আর এভাবেই নিজদের অজান্তেই- আমাদের রাজনীতির ঐতিহ্য হয়ে গেছে-- দলীয় মতের বিরুদ্ধে যা কিছু তার গলা টিপে ধরা। মতাদর্শিক সংগ্রামের কষ্টকর পথে আমরা হাটঁতে চাইনি- বিরুদ্ধ মতকে জায়গা করে দেওয়ার অনুশীলন আমরা করিনি- সে বিরুদ্ধ মতের রাজনীতি ডাঃ বদরুদ্দৌজা চৌধুরী, ডঃ কামাল হোসেন বা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী-যারই হোক না কেন। জামায়াতের বিরুদ্ধে যা করিনি তা হলো তার মতাদর্শের রাজনৈতিক সমালোচনা- তার যুক্তির অসারতা প্রমান করে দেওয়া, তার নৈতিকতার যুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা। রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে মুসলিম লীগ যাদুঘরে ঠাই নিয়েছে- কিন্ত আমরা খেয়াল করিনি একাজটা করার জন্য আমদের অগনতান্ত্রিক ভাবে কাউকে প্রতিহত কিংবা নির্মুল করতে হয়নি। ন্যাপ তথা আওয়ামীলীগের পাল্টা মতাদর্শই তাকে রাজনৈতিক ভাবে নাকচ করে দিয়েছে।

জামায়াতকেও এভাবে নাকচ করে দেওয়া সম্ভব- তার রাজনীতির দেউলিয়াত্ব প্রমান করে দেওয়া যায়, এমনকি গনতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চার ভিতর দিয়েই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.