আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোটটা যে দেই কাকে-

বৃথা হয়রানি

১. এবার প্রথম ভোটার হলো রাকিব। তার ভেতরে একটা চাপা উত্তেজনা। সামনে ইলেকশন, ও ভোট দেবে। এক সময় এই উত্তেজনাই তার জন্য কাল হলো। সে গেছে এক সাইক্রেটিস্টের কাছে।

স্যার, আমি একটা রাজনৈতিক পরিবারে বড়ো হয়েছি। আমার বাবা বড়ো রাজনীতিবিদ, রাকিব হতাশার সুরে বল্ল। তাঁকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাঁর ভেতরে আমি কোনো ভালো গুণ পাইনি। উনি ক্ষমতায় থাকতে দুহাতে লুটপাট করেছেন, দুর্নীতি করেছেন।

তাই রাজনীতিবিদদের ওপর আমার শ্রদ্ধা উঠে গেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নির্বাচনে কোনো না কোনো রাজনীতিবিদকেই তো আমাকে ভোট দিতে হবে। দ্যাখেন, সাইক্রেটিস্ট খুব শান্ত গলায় বললেন, আপনি শিক্ষিত মানুষ। এভাবে ঢালাওভাবে একটা পেশার মানুষকে খারাপ ভাবা আপনার মানায় না। নিশ্চয়ই দুর্নীতি করেন না এমন রাজনীতিবিদও আপনার পরিবারে আছে।

আছে। আমার ছোট্ট চাচাই তো আছে। রাজনীতি করেন কিন্তু দুর্নীতি করেন না। তবে শুনি, লোকে বলে, উনি নাকি শহরের এক নম্বর চাঁদাবাজ। ডাক্তার একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন।

চাঁদাবাজিও এক রকমের দুর্নীতি। তা এসব করেন না এমন রাজনীতিবিদ নেই আপনার পরিবারে, আপনি তো বলেন আপনাদের রাজনৈতিক পরিবার। থাকবে না কেন আমার বড়ো ভাইয়া। তুখোড় ছাত্রনেতা। তবে তাকে আমি পছন্দ করি না।

কেন? ও নেশা করে। ওর নামে তিনটা মার্ডার কেস। সাইক্রেটিস্ট এবার হতাশ হয়ে বললেন, আচ্ছা আপনার পরিবারে কি একজনও নেতা নেই যিনি খারাপ কাজ করেন না। আছেন। একজনই আছেন।

এবার সোত্সাহে উদগ্রীব হলেন সাইক্রেটিস্ট, কে সে? আমার মেজো খালু। তিনি নিশ্চয়ই খুব সত্ লোক। নি:সন্দেহে। তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারছেন সব রাজনীতিবিদ খারাপ নন। কিন্তু উনি তো রাজনীতি করেন না।

আপনি না বল্লেন নেতা। হ্যাঁ নেতা, তবে জননেতা নন, অভিনেতা। ২. এরশাদের ইলেকশনগুলোই ভালো ছিল। বাবা সকাল সকাল ভোট দিতে যেতেন। ফিরতেন দুপুর নাগাদ।

তারপর এক পেট হেসে নিয়ে বলতেন, যা: এবারো ভোটটা দিতে পারলাম না, দেয়া হয়ে গেছে। এখনকার ইলেকশন হচ্ছে জলে নামবা না ডাঙায় থাকবা তার টস। দু জায়গাতেই সমান ভয়ংকর মাংসাশীদের আনাগোনা। ৩. পৃথিবীর নিকৃষ্ট ৪টি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ৪ প্রতিনিধি গেছেন ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা করতে। তারা যারপরনাই হতাশ তাদের দেশ নিয়ে।

প্রথমে ইরাকের প্রতিনিধি গিয়ে কান্নাকাটি করে জানতে চাইল, কবে নাগাদ আমাদের দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। ঈশ্বর একটু ভেবে বললেন, ২০ বছর পর। পরের জন আফগানিস্তানের। দয়াময় আমাদের কি হবে। কবে আমরা গণতন্ত্র পাবো।

ঈশ্বর ভাবলেন এবং বললেন, ৫০ বছর ধৈর্য্য ধরো বাছা। সোমালিয়ার লোকজন এমনেই কান্নাকাটিতে ওস্তাদ, এর উপর স্বয়ং ঈশ্বরকে কাছে পেয়েছে, সব মিলিয়ে সোমালিয়ার প্রতিনিধিটি একাই মাথায় তুলে নিল নন্দনকানন। ঈশ্বর মুচকি হেসে বললেন, যতই কান্না-কাটি করো না বাছা ১০০ বছরের আগে তোমাদের ওখানে কিসসু হবে না। শেষ প্রতিনিধি বাংলাদেশের। তার কোনো কান্নাকাটি নেই।

নেই কোনো আর্জি-নিবেদন। ও শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল ঈশ্বরের দিকে। ঈশ্বরকে কিছুটা বিব্রত মনে হলো। উনি মাথা নিচু করে তাকালেন মেঝের দিকে। তারপর বললেন, তোমাদের জন্য সত্যিই মায়া হয়।

তোমাদের নেতাদের যে ভাবগতিক তা দেখে মনে হয় আমি জীবদ্দশায় তোমাদের দেশে গণতন্ত্র দেখে যেতে পারব না। ৪. একটি শ্লোগানের বিবর্তন আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেব। আমার ভোট আমি দেবো দেখেশুনে বুঝে দেব। ভোটটা যে দেই কাকে আছি গোলক ধাঁধার পাকে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।