"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
অলৌকিক বোরখা
আঁধারের গা থেকে কুচকুচে কালো বোরখাটা খুলে ফেলতেই, উদোম গায়ে উজ্জ্বল আলোর দেবতা এসে হাত জোড় করে বললো- “হে মানব, এবার আপনি চোখ খুলুন"। আমি বন্ধ দু’চোখ খুললাম। হঠাৎ তীব্র আলোর ঝলকানি! দীর্ঘকাল চার দেয়ালে ঘেরা অন্ধকার ঘরে থেকে অভ্যস্ত হওয়া চোখ দু’টো কেমন যেন ধাঁধিঁয়ে গেল। চারিদিকে এতো আলো ঠিক সইতে পারছেনা। দু’হাতের করতলে চোখ দু’টো ঢেকে ফেললাম।
একটুপর হাত দুটো সরিয়ে আবারো চোখ মেলতে চেষ্টা করলাম। এখন সবকিছু ক্রমশঃ দৃশ্যমান। চারিদিকে আলো আর আলো। সবকিছু আলোয় আলোকময়। এতোসব আলো এতোকাল রহস্যময় এক অলৌকিক বোরখার আড়ালে ঢাকা পড়েছিল।
সেই অলৌকিক বোরখা আজ কোন এক যাদুর স্পর্শে খুলে গেল আর নিমিষেই সব আঁধার ঘুচে গেল।
এতো আলোর মাঝে প্রকৃতি যেন এক বর্ণময় ক্যানভাস। নানা বর্ণের, নানা আকারের নানান সব দৃশ্য। ঈশ্বর যেন তাঁর নিপূণ হাতে নান্দনিকতার ছোঁয়ায় সাজিয়েছেন সবকিছু। আমার চারিপাশে ছড়িয়ে আছে অনুপম শিল্পে সমৃদ্ধ প্রকৃতি।
আমি শুধু দেখছি আর দেখছি। দেখছি- উচ্ছল ঝর্ণার জলে অবিরাম স্নানরত বিবস্ত্র পাহাড়, জলকেলিতে মত্ত রাজহংস-রাজহংসী যুগল, গাঢ় সবুজের আচ্ছাদনে ঢাকা অসংখ্য বৃক্ষরাজি। সূর্যের স্বর্ণালী আভায় আঁকা মেঘের গায়ে বিচিত্র আলপনা। উত্তাল সাগরের বুকে গাংগচিলের উপর্যুপরি নির্মোহ চুমু খাওয়া। শাপলা ফোটা দীঘির জলে মেঘ-রোদের অবিরাম লুকোচুরি, আলো-ছায়ার নিপূণ সব কারুকাজ, আর আহ্লাদি আকাশের বিম্বিত হাসি।
অতঃপর আলোর পথ ধরে পলকহীন দৃষ্টির সমান্তরাল প্রতিসরণ।
গোধূলী ব্যঞ্জনায় বিভাজিত দূরের ঐ দিগন্ত। সাগর কোলে দোল খায় ক্লান্ত মাঝির দূরন্ত শাম্পান। উপকূলে একা দাঁড়িয়ে কালো বোরখায় ঢাকা এক রূপসী ললনা। নেকাববিহীন মুখে তার সলাজ হাসি, চকিত চাহনীতে প্রকৃতির নিষ্পাপ উদারতা।
কনে দেখা আলোয় সে যেন সদ্যফোটা চাঁপাফুল। সবকিছুই দৃশ্যমান। দিনের আলোয় সবকিছু স্পষ্ট। আমিতো এখন আর অবরুদ্ধ নই, অন্ধ নই। তাই অপলক নয়নে চেয়ে চেয়ে সবই দেখি।
গায়ে উপকূলীয় চপল বাতাসের অনুভব। আর সেই বাতাসেই রূপসী ললনা'র মুখ থেকে বার বার কালো নেকাবটা সরে যায়। মুখে এক চিলতে আলো এসে ঠিকরে পড়ে। আমি মনে মনে বলি, “হে রূপসী, কেন নিজেকে অমন করে ঢেকে রাখো কালো বোরখার অন্তরালে? প্রকৃতির সাথে মিশে একাকার হয়ে যাও। প্রকৃতির গায়ে অন্ধকার কখনো চিরস্থায়ী নয়।
আলোর মাঝেই প্রকৃতির আসল রূপ। অন্ধকার পারে কী কখনো চিরতরে ঢেকে দিতে আলোকিত সেই ভূবন? বোরখা চাপিয়ে কেউ কী ঢেকে রাখতে পারে তার রূপের আলো? হে রূপসী ললনা, অন্ধকার থেকে বের হয়ে এসো, এসো আলোর মাঝে, এসো প্রকৃতির মাঝে। আঁধারসম ঐ কালো অলৌকিক বোরখাটা খুলে ফেলো। একাকার হয়ে মিশে যাও এই খোলামেলা প্রকৃতির সাথে”।
হে আলো, তুমি ছাড়া আমার চোখে সবই অন্ধকার, আমি সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন।
কী মূল্য আছে এই প্রকৃতির যদি তুমিই না থাকো, কী হবে চোখের সেই প্রাণহীণ দৃষ্টি দিয়ে- যে দৃষ্টি অলৌকিক বোরখায় ঢাকা থাকে। কী মূল্য আছে সেই প্রকৃতির যদি তা আঁধার ঘিরেই থাকে। হে ঈশ্বর, তুমি সবার শরীর থেকে অলৌকিক বোরখা খুলে নাও। চোখের দৃষ্টিতে আলো জ্বেলে দাও। আমাদের সকল অন্ধত্ব দূর করে দাও।
যা কিছু সুন্দর তা আলোয় নিয়ে এসো। অলৌকিক বোরখার আড়ালে যেন আলোরূপী সুন্দর কখনও ঢাকা না পড়ে। আমাদের অন্তরে সেই দৃষ্টি জ্বেলে দাও।
(কুসংস্কার নয়, চিন্তা-চেতনার সংস্কার চাই। শুধু দেখার দৃষ্টি নয় জ্ঞানের দৃষ্টি চাই।
আলোকিত জীবন গড়তে অন্তরের দৃষ্টি প্রসারিত হোক। পবিত্র মন, পবিত্র আলোর উৎস। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।