কবি প্রিয় সুকনী বিলের প্রান্তরে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়। যার নামকরণ করা হয়েছে দুখু মিয়ার নামে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাসের ন্যাচারাল লেক, চুরুলিয়া মঞ্চ, নন্দন চত্বর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন নজরুল ভক্ত অনুরাগীসহ প্রকৃতিপ্রেমীরা। এ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে পর্যটকদের চারণভূমি।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, আগামীতে ত্রিশালের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হবে ভারত ও বাংলাদেশের নজরুলপ্রেমিক গবেষক ও পর্যটকদের অন্যতম গবেষণাগার। কবি নজরুলের অবদানকে মূল্যায়ন করতে ভারত ও বাংলাদেশের নজরুলপ্রেমিক গবেষকদের সমন্বয় ঘটাতে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুরুর কথা : ২০০৫ সালের পহেলা মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরে ২০০৭ সালের ৩ জুন মাত্র ২০ একর জমি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে আরও ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
৫ অনুষদে ১২ বিভাগ : শুরুতে মাত্র দুটি অনুষদের চারটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা করলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট অনুষদ ৫টি। এগুলো হচ্ছে_ কলা, বিজ্ঞান, ললিত কলা, সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ। মোট বিভাগ ১২টি_ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, সংগীত, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, চারুকলা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, নাট্যকলা, অর্থনীতি, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইলেকট্রনিঙ্ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কমিউনিকেশন, হিসাববিজ্ঞান ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট (এইচআরএম)। এসব বিভাগের মোট শিক্ষার্থী সাড়ে ৪ হাজার। সম্ভাবনা রয়েছে সাংবাদিকতা ও চলচিত্রসহ ২১টি নতুন বিভাগ চালুর।
উপাচার্য বদল : কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এম শামসুর রহমান। দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। শেষ উপাচার্য ছিলেন কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন। দায়িত্বপ্রাপ্তির মাত্র ৪১ দিনের মাথায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. আবুল বাশার ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষার্থীদের কথা : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে দুখু মিয়ার প্রিয় নামাপাড়া গ্রাম এখন ক্রমশ উপ-শহরে পরিণত হয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক ও মনোরম পরিবেশ। এ মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীদের দৃপ্ত পদচারণায় সব সময় মুখর থাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র সাংবাদিক এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, 'এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমরা নজরুলকে বোঝার ও জানার সুযোগ পেয়েছি। নজরুলের আদর্শ, চেতনা, ভাবনা, সাহিত্য, সংগীত, নাটক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।' বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহাবুল ও সাদেকুল ইসলাম বলেন, 'নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত।'
নন্দন চত্বর : অত্যাধুনিক অথচ একেবারেই ন্যাচারাল লেক রয়েছে ক্যাম্পাসের এক পাশজুড়ে। বিজ্ঞান ও কলা ভবনের মাঝখানেও একই কায়দায় করা হয়েছে ভিন্ন আরেকটি লেক। গাহি সাম্যের গানসহ মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের যাবতীয় সব অনুষ্ঠানমালা হচ্ছে এই নন্দন চত্বরে। ক্যাম্পাসে ঢোকার পথেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন চুরুলিয়া মঞ্চ। বাঙালির বর্ষবরণের পহেলা বৈশাখ আর অমর একুশের নাটক মঞ্চস্থ হয়ে আসছে এই মঞ্চে।
শিক্ষকের কথা : কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. ইমদাদুল হুদা বলেন, 'নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা, কৃষ্টি, আচার, আচরণ নতুনরূপে উদ্ভাসিত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল চর্চাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আলোকিত মানবসম্পদ গড়ে তুলতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।' কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবির বলেন, 'কৌতূহলী পর্যটকরা আসছেন কবি নজরুলের বাল্য স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে। কবির নানা সব স্মৃতিকে তার ভক্ত-অনুরাগীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে মনোরম করে সাজানো হবে।'
*সৈয়দ মাহফুজুর রহমান নোমান
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।