বড়সড় ধাক্কা খেল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। বেআইনি ও অসাংবিধানিক মন্তব্য করে সরকারের ইমাম ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি প্রণব কুমার চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি মুরারী মোহন শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার বলেন, সংবিধানের তোয়াক্কা না করেই ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল এই মেমোরেনডাম চালু করে সরকার। আদালত জানায় যে, সরকার যে জনস্বার্থের যুক্তি দিচ্ছে তা এখানে খাটে না। সংবিধানের তোয়াক্কা না করেই সংবিধানের ১৬৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেই এই ইমাম ভাতা দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। উল্লেখ্য, ক্ষমতায় আসার পরই ২০১২ সালে এপ্রিল মাসে রাজ্য সরকার এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
রাজ্যের ইমামদের মাসে ২ হাজার ৫০০ রুপি এবং মোয়াজ্জিনদের প্রতি মাসে ১ হাজার রুপি করে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু রাজ্য সরকারে এই সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে চার চারটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই রায় দিলেন আদালত। এই রায় অবিলম্বে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম কারণ হিসেবে আদালত জানায়, সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই ইমামভাতা সাম্যের ধারণার পরিপন্থী। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে আদালত বলে সংবিধানের ১৫/১ ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। তৃতীয়ত সরকার কোনো পাবলিকার ইমামদের ভাতা জনস্বার্থে নয় বলে জানিয়ে দিল হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত জানায় মোয়াজ্জিন ভাতার জন্য কোনো নির্দেশিকা জারি হয়নি, তাই এটি বেআইনি। যদিও ইমাম ভার জন্য বিধানসভায় ব্যয় বরাদ্দ পাস করানো হয়েছে সরকার আইনজীবীর যুক্তি দিলেও তা খারিজ হয়ে যায় হাইকোর্টে।
এদিকে ইমাম ভাতা নিয়ে আদালতে সরকারের ধাক্কা খাওয়া নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও সরব হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেন 'বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভোট কিনবার নিমিত্ত মাত্র, কিছু পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির মাধ্যমে সরকার এই জিনিসটি করেছে'। মোয়াজ্জিন ভাতা একটি তুঘলকি উপায়ে দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আদালতের এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআইএম নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মমতা ব্যানার্জির সরকারের প্রতিটি কাজই বেআইনি, আইনবিরোধী, সংবিধানবিরোধী। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কখনো সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট কখনো মানবাধিকার কমিশনে ধাক্কা খাচ্ছে। সরকার এরকম ভাবে কোনো কাজ করতে পারে না, একমাত্র ওয়াকফ বোর্ডের মাধমেই এই ভাতা ঠিক করা যায়। কিন্তু সরকার যদি গায়ের জোরে এই কাজ করতে যায় তাহলে তো ধাক্কা খেতেই হবে।
ইমাম ভাতা নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়কে মুসলিম সমাজের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ইমামদের মতো ধর্মগুরুদের একটা সম্মান আছে, মানুষ তাদের শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু ইমামদের সেই সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন মমতা। এ জন্য সরকার তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।