প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে সশস্ত্রবাহিনীর বহুমাত্রিক ভূমিকার কথা বিবেচনা করে এই বাহিনীকে বাস্তবসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, বর্তমানে বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন নতুন পরিবর্তনের ফলে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্বে এসেছে বহুমাত্রিকতা। সশস্ত্রবাহিনীর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও পরিবর্তিত সময়ের এই চাহিদার প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন। বাসস।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) স্নাতক ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে সার্টিফিকেট প্রদান করেন।অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মুহাম্মদ এনামুল বারি, স্বরাষ্ট্র বাহিনী বিভাগের পিএসও, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কূটনীতিক, উচ্চপর্যায়ের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্রবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর ওপর ন্যস্ত। এ পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়ও প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছেন। তাদের সাফল্যে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অফিসারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে এ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ কলেজ অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত। তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। আর সে সীমিত সম্পদ দিয়েই আমরা একটি যুগোপযোগী, দক্ষ ও শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তুলতে চাই। সশস্ত্রবাহিনীর ঊধর্্বতন অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, এমআইএসটি, আর্মস ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে অনেক ইউনিট গঠন করা হয়। বর্তমান সরকার জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করতে চায়, কখনই শাসক হিসেবে নয়। আমরা অনিয়ম দুর্নীতির প্রশ্নে কাউকেই ছাড় দেইনি। সর্বাত্দক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস নির্মূল করেছি। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে_ এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে আজ তা ১০৪৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি আয় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের পেশাগত জীবনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে বলেন, কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আপনারা সমরবিজ্ঞানে উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন। আমার বিশ্বাস, এ প্রশিক্ষণ অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন এবং যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনাদের আরও আত্দপ্রত্যয়ী করবে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের সব দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিশ্ব শান্তি রক্ষা এবং সব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট- এই আদর্শকে সামনে রেখে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বন্ধুপ্রতিম দেশের গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমেই গাঢ় হবে। প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত ২৯৬৫ জন বাংলাদেশি অফিসার ও ৩৭টি দেশের ৮০৮ জন বিদেশি অফিসার এ কলেজ থেকে স্নাতক কোর্স করেছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।