যা তুমি আগামিকাল করতে পার, তা কখনো আজ করতে গিয়ে ভজঘট পাকাবে না...
এক বছর আগেও শহরটির লোকজন বারাক ওবামা নামে কেউ যে এ পৃথিবীতে আছেন তাই জানতেন না। অথচ সে শহরটিই এখন ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আসছে ৫ নভেম্বর (আমেরিকান ইলেকশনের পর দিন) বিজয় উৎসব পালন করার জন্য। মজার ব্যাপার হলো এটি খোদ আমেরিকার কোনো শহর নয়, এটি জাপানের এক ছোট্ট জেলে শহর। তার নাম ওবামা।
হ্যাঁ, নামের মিলের জন্যই জাপানের ওবামা শহরের ৩২,০০০ অধিবাসী মনে করছে বারাক ওবামা তাদের শহরের পালক ছেলে।
জাপানি ভাষায় ওবামা শব্দটির মানে হলো ছোট্ট সৈকত।
ওবামার সমর্থনে টি শার্ট
এ বছরের শুরুতে খুব ছোট করেই এখানকার দু-একজন নগরবাসী স্লোগান তোলেন, ওবামা ফর ওবামা বা ওবামার জন্য ওবামা। পরে এটিই হয়ে ওঠে গোটা শহরের একক মত। ফলে, এখন আমেরিকার ইলেকশন বিষয়ে আমেরিকার বাইরে সবচেয়ে বেশি মিডিয়ার নজরে আসা শহর জাপানের এ এলাকাটি। এখন এ শহরে গেলে আপনার নজরে আসবে রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট জুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন আর নানা রকম প্রচারণা।
এমনকি বারাক ওবামার একটি প্রমাণ সাইজের ভাস্কর্যও দেখতে পাবেন সেখানে অভিনন্দন জানাচ্ছে নগরবাসীকে।
এ শহরের ৫০ জন অধিবাসী এখন হাওয়াই দ্বীপের হুলা নাচ শিখছে। তাদের পরিকল্পনা হলো ৫ নভেম্বর তারা ওই নাচটি দেখাবেন হাওয়াই দ্বীপের অধিবাসীদের। এ দ্বীপটি বারাক ওবামার জন্মস্থান। ইতিমধ্যে ওবামা শহরের মেয়েরা হনুলুলুতে চলে গেছে একটি নাচের কম্পিটিশনে যোগ দেয়ার জন্য।
যে ৫০ জন হাওয়াইয়ান নাচ শিখছে, তাদের একজন হলেন কিয়োমি তাকাহাসি। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের শহরের নামে তার নাম ফলে স্বভাবতই আমি তার প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে তাকে সমর্থন করার আরো কারণ আছে। এ কথাগুলো যখন তিনি বলছিলেন, তখন তার পরনের টি শার্টে লেখা ছিল ‘আই লাভ ওবামা’।
নাচের দলে যে অল্প কয়েকজন পুরুষ আছেন, তাদের একজন সাতোরু ওয়াদা।
তিনি বলেন, আহা, কার্ডবোর্ডের বানানো ওবামার বদলে যদি আসল ওবামার সামনে নাচা যেত। এমনকি আমি অরিজিনাল ওবামার সঙ্গেই নাচতে চাই। তার পরনে ছিল হাওয়াই দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী টি-শার্ট।
বারাক ওবামা নিজেও এ শহরটি সম্পর্কে জানেন। এক জাপানি রিপোর্টারের কাছে ওবামা বলেছিলেন, তিনি যখন জাপান সফর করেন, তখন জাপানের এয়ারপোর্টে এক পাসপোর্ট অফিসার জানান, ওই অফিসারের জন্ম জাপানের ওবামা নামের এক শহরে।
সমস্যা হলো, এতো উচ্ছল সমর্থক থাকা সত্ত্বেও বারাক ওবামা তার এ ভিনদেশি বন্ধুদের কাছে ভোট চাইতে পারবেন না। অবশ্য তিনি এ বছরের গোড়ার দিকে এ শহরের অধিবাসীদের কাছে ধন্যবাদ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন। সে বার্তায় তিনি বলেন, আমি সেই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি যখন আমাদের এই দুই মহান দেশের বন্ধুত্বের কথা সবাই বলবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই যেন এ পৃথিবী আরো ভালো আরো মুক্ত হয়ে ওঠে। সে বার্তার শেষে বারাক ওবামা জাপানি ভাষায় ‘আপনাদের বন্ধু’ লিখে নাম স্বাক্ষর করেন।
সে চিঠিটি তিনি পাঠিয়েছিলেন ওবামা শহরের সে সময়ের মেয়রের কাছে। মেয়রও ওবামাকে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে পাঠিয়ে দেন একজোড়া চপস্টিকস। জাপানে এ শহরের চপস্টিকস ও ম্যাকারেল (টুনা জাতীয় মাছ) সবচেয়ে বিখ্যাত। সাবেক সে মেয়র কোজি মাৎসুকজি (৫০) বলেন, এ শহরের লোকজন কেবল নামের জন্য নয়, একাধিক কারণে বারাক ওবামাকে পছন্দ করে। তিনি বলেন, বারাক ওবামা (৪৭) এবং আমি একই জেনারেশনের লোক।
এবং বারাক ওবামা যেমনটা বলেছেন- আমাদের সময় আসছে। তার এ কথাটি আমি বিশ্বাস করি। তিনি একই সঙ্গে যোগ করেন, আমি আশা করি বারাক ওবামা তার দেশের বিষয়গুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিষয়েও সচেতন হবেন। যেমন ’৭০ ও ’৮০-এর দশকে উত্তর কোরিয়া কর্তৃক ওবামা শহরের জেলে অপহরণের মতো বিষয়।
ওবামা শহরের একটি রেস্টুরেন্ট
ওবামা শহরে বারাক ওবামা প্রচারাভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ও স্থানীয় সিকোমিয়া হোটেলের মালিক সেইজি ফুজিহারা বলেন, আমি আশা করি প্রেসিডেন্ট ওবামা এ শহরের সঙ্গে তার বন্ধনকে দৃঢ় করার লক্ষ্যে এ শহর সফর করবেন।
ফুজিহারা অবশ্য তার দিক থেকে বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ জানুয়ারির ২০ তারিখে ওয়াশিংটনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। আমেরিকার সংবিধান অনুসারে ওই তারিখে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করবেন।
সূত্র : বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।