সকালের সংবাদপত্র পড়ে স্থানু বসে থাকলাম অনেক ক্ষণ। মানুষের নৃশংসতার তুলনা মানুষ নিজেই। প্রাণিজগতে অনেক নৃশংস ঘটনা ঘটে, বাঘ হরিণ শিকার করছে, হায়েনা হরিণের অবশিষ্ঠাংশ খুবলে খাচ্ছে, মাংশাসী আর ত্বণভোজীর সংঘর্ষ নিত্যদিনের । তবে কোনো প্রজাতি অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজন ব্যতিত নিজের স্বজাতিতে গণহত্যা চালাচ্ছে এমন ঘটনা ঘটে না।
একটি প্রজাতি নিয়মতান্ত্রিক গণধর্ষণে একটি জনগোষ্ঠিকে হত্যা করবার জন্য আয়োজন করে ধর্ষণ ক্যাম্প খুলেছে এবং সেখানে নিয়মিত উৎসবের মতো ধর্ষণ চলছে, এমন নৃশংসতা মানুষ ব্যতিত অন্য কোনো প্রজাতি ঘটাতে পারে না।
তবে গতকালের ঘটনাটি এমন যুদ্ধকালীন নৃশংসতা নয়, বরং একজন মানসিক বিকলাঙ্গ মানুষ খুব ঠান্ডা মাথায় একজনকে জবাই করে তার ছিন্ন মস্তক নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে ২ কোটি মানুষের ঢাকা শহরে, বাসার সামনের চায়ের দোকানে গিয়ে সেই ছিন্ন মস্তক কুপিয়েছে।
বিষয়টার ভয়াবহতা এবং ব্যক্তির নিরাসক্ত নিষ্ঠুরতার বিবরণ পড়ে মনে হলো এই মানুষটি এমন ঘটনা ঘটাতে পারে এর কোনো আগাম সংবাদ কি পাওয়া সম্ভব না।
একজন মানুষ সামনের দোকানির কাছ থেকে ধারালো দা নিয়েএসে এমন ভয়াবহ একটি কাজ করে ফেললো, আতঙ্কিত মানুষের যে যার মতো ছিটকে পালাচ্ছে, মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, এবং সম্পূর্ণ বিষয়টার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো এই উন্মাদ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে দোষারোপ করাও সম্ভব নয়।
নিহত মেয়েটিকে দুর্ভাগ্যবতী বলা যায় বড়জোর। মানুষের অভিধান এইসব অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে সম্পূর্ণ প্রকাশ করবার মতো যথেষ্ট এবং উপযুক্ত শব্দ ধারণ করে না।
মানুষের সীমিত শব্দপরিসরে এইসব ঘটনাকে ব্যখ্যা করবার উপযুক্ত শব্দ নেই। আমার নিজের হৃতবাক কিংবা বাকরুদ্ধ অবস্থার কারণ এটাই। অনেক খুঁজেও শব্দ পেলাম না যা এই ঘটনাকে তার সম্পূর্ণ ভয়াবহতাসমেত তুলে ধরতে পারে, কিংবা অনেক সময় ভেবেও এমন কয়েকটা শব্দ খুঁজে পেলাম না যা সেই হতভাগ্য মেয়েটার অনাকাঙ্খিত জীবনাবসানের তুল্য হতে পারে।
মানুষ প্রজাতিগত ভাবেই নৃশংস হয়তো, ডিনার ডেলিক্যাসি হিসেবে শীতের আগমন হওয়ার আগেই অতিথি পাখীর পায়ে রশি বেধে উল্টো ঝুলিয়ে বিক্রী করছে শেরাটনের সামনে, প্রকাশ্য, যদিও রাষ্ট্র এই পাখিনিধন এবং পাখিভক্ষণের বিরুদ্ধে শক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেছে।
প্রকাশ্যে জীব হত্যা দেখছে শিশুরা, দেখছে এখানে প্রাণীর জীবন সস্তা, অতিথি ডাহুক আর ভবঘুরে চড়াই, সবাই ডিনারের ডেলিক্যাসি।
সুতরাং প্রাণের মাহত্ব্য এখানে নেই।
কেনো এই অঘটন ঘটলো সেটা হয়তো উল্লেখিত মানসিক বিকলাঙ্গ ব্যক্তি কখনও প্রকাশ করতে পারবে, তবে এই মানসিক বিকলাঙ্গ মানুষটির উপযুক্ত কোনো শাস্তি এখনও পৃথিবীর কোনো আইনের কেতায় নির্ধারিত হয় নি। হবেও না। আমরা যতটুকু নৃশংসতাকে আমলে আনতে পারি আইন প্রণয়নের সময় মানুষ এরচেয়েও ঢের বেশী নৃশংস সত্ত্বা।
তবে আশ্চর্য ঘটনা হলো, স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো এই ঘাতকের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে, সেই সাথে ভিডিও ফুটেজে কবন্ধ লাশ দেখিয়েছে, ইনসেটে ছিন্ন মস্তকের ছবি।
বাণিজ্যিকতার কারণে যেই চ্যানেলগুলো এই নৃশংসতা প্রচার করলো নির্বিকার ভাবে তাদের উপযুক্ত শাস্তির প্রয়োজন। একজন মানসিক বিকলাঙ্গ মানুষ তার নৃশংসতা প্রকাশ করেছে, তবে স্যাটেলাইট চ্যানেলের নিউজ প্যানেলের মানুষগুলোতো মানসিক ভারসাম্যহীন উজবুক নয়? তারা এই নৃশংসতার প্রচার করলো কিভাবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।