স্বপ্নের নানাবিধ ব্যাখ্যা নানাজন দিয়ে থাকেন। কোনও কোনও ব্যাখ্যা আমাদের মনঃপুত হয় আবার কোনটি হয়না। তবে এতে করে আমাদের স্বপ্নদেখা কিন্তু থেমে থাকে না। নিরন্তর স্বপ্নের জালে জড়িয়ে আমরা প্রবেশ করতে থাকি অন্তহীন গহীন এক মায়ালোকে। যে স্বপ্নটির বর্ণনা আমি এখানে দিতে যাচ্ছি তা একটি কার্টুনের স্বপ্ন।
অনামা এক কার্টুনিস্ট-এর আাঁকা এই কার্টুনটির মোটাদাগের একখানি চিত্র আমি বর্ণনা করার চেষ্টা করব।
একটি সেকেলে রান্নাঘর। বিশাল মুখের একটি উনুন। উনুনের গনগনে আগুনের উপর বসানো রয়েছে একটি বিশাল আকৃতির কড়াই। কড়াইয়ের টগবগে তেলে ভাজা হচ্ছে কাটা নরমুণ্ডু, হাত, পা, ধর - এসব।
ফুটন্ত তেলে এগুলো ভাজা ভাজা হযে উঠছে। যিনি উনুনের পাশে পরম যত্নে এ রন্ধনকার্য সমাধা করছেন তিনি তামাটে বর্ণের কুৎসিৎ-দর্শন এক পঞ্চাশোর্ধ মহিলা। মহিলার দাঁতের উজ্জ্বলতা বেশ চোখে পড়ার মতন। তিনি দাঁত বের করে হাসছেন আর উনুনের আগুনে খড়-কুটো গুঁজে দিচ্ছেন। রান্নাঘরের দেয়ালে পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে দুটো পোট্রেট, একখানি পুরুষের অপরখানি একজন মহিলার।
পুরুষের পোট্রেটখানির উপর আবার একটি শুকনো মালা জড়ানো, আর অপর পোট্রেটের ভদ্রমহিলার ঠোঁটের কোণের মৃদু হাসিটি কারো নজর এড়াবে না। রান্নাঘরের দরজা পেরিয়ে একটি বেশ প্রশস্ত রাস্তা চোখে পড়ে যে রাস্তায় তিনদিক থেকে তিনটি সরু রাস্তা এসে মিশেছে।
তিনটি রাস্তার ১মটির শেষ প্রান্তে দেখা যাচ্ছে কালো পোশাক পরিহিত দুজন লোক। তারা চোখ বাঁধা এক ব্যাক্তিকে সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজেদের মধ্যে কি নিয়ে যেন কথা বলে যাচ্ছে। নিকটেই পরে আছে বড়সড় একটি ট্রলি।
ট্রলির ভেতর আলু পটলের মতন স্তূপ করে রাখা আছে নিঃসার নিথর মানবদেহ। বেশ বোঝা যাচ্ছে এ ট্রলির গন্তব্য হয়তোবা সেই রান্নাঘর।
২য় রাস্তার শেষ প্রান্তে একটি বহুতল ভবন যার পুরোটা রাত্রির অন্ধকারে ঢাকা হলেও একটি কক্ষে কেন যেন আলো জ্বলছে, সেই আলোর কারণে জানালার পর্দায় একটি ছায়া পড়েছে এবং তা হল একটি উদ্যত হস্তের ছায়া। সেই উদ্যত হস্তে ধরা আছে বিশালাকৃতির একখানি ছোরা। ১ম রাস্তার অনুরূপ এখানেও ভবনের পাশে একখানি ট্রলি রাখা আছে এবং তাতে আবারও নিঃসার মানবদেহের স্তুপ দেখা যাচ্ছে।
৩য় এবং সর্বশেষ রাস্তাটি যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে রয়েছে বিশাল একটি ব্যস্ত রাস্তা অর্থ্যাৎ ৩য় রাস্তাটি আসলে একটি বড় রাস্তায় গিয়ে মিশেছে। দুই রাস্তার সংযোগস্থলে পাঁচ-ছয়জন ব্যাক্তি অত্যন্ত সাধারণ পোশাকে নিপাট ভদ্রলোকের ন্যায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এই লোকদের পাশেও রয়েছে একটি ট্রলি কিন্তু ট্রলির ভেতর নানা ভঙ্গিমায় পরে আছে মুখ বাঁধা বেশ কয়েকটি কালো রঙের বস্তা। ভালোভাবে খেয়াল করলে বোঝা যাবে প্রতিটি বস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় একটি মানবদেহের দৈর্ঘ্যরে সমতুল্য।
কার্টুনটি আরও বিশদভাবে দেখার পূর্বমুহূর্তেই আমার ঘুম ভেঙে যায় এবং রাতের বাকি অংশ একরকম না ঘুমিয়েই কাটে।
পরদিন স্বপ্নটির আদ্যোপান্ত চুলচেরা বিশ্লেষণ করেও এর কোনও ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারলাম না। তবে যে একটি ব্যাপারে সন্দেহ দানা বাঁধছে তা হল স্বপ্নটি দেখার সময় আমি কি আদৌ ঘুমিয়ে ছিলাম না জেগে ছিলাম। আমি শতভাগ নিশ্চিত নই যে আমি তখন ঘুমিয়েই ছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন দেখার জন্য কি ঘুম অত্যাবশ্যক ? জাগরণে কি স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয় ? সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।