বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে
নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনেছে। দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের প্রচ্ছদের রং পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্তত ১৩টি ধারায় সংশোধন, কয়েকটি ধারা ও অনুচ্ছেদ সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে।
এমনকি দলের নামটাও পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের গঠনতন্ত্রের প্রচ্ছদে আল্লাহ্ ও আক্বিমুদ্দীন অর্থাৎ তোমরা দ্বীন (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা কর−এই লেখাসংবলিত লোগো ছিল। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে এটি বাদ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের আদর্শিক অবস্থান ত্যাগ করে অমুসলিমদেরও দলে নেওয়ার নীতি নিয়েছে দলটি।
এত দিন জামায়াতের কোনো কমিটিতেই নারী সদস্যদের রাখা হয় নি। কিন্তু নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের শর্ত মেনে সব কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য সম্পৃক্ত করারও ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সবই যে নির্বাচন কমিশনের শর্ত মানার জন্য তা আর কারোরই বুঝতে বাকি নেই। জামাতের এই ভোল পাল্টানো দেখে মনে হলো...আহ! বেচারা....
তবে যে বিষয়টেতে আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে তা হলো দলটির নতুন গঠনতন্ত্রের ভূমিকা। সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ভুমিকাতে একটি অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-
"যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়া বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করিয়াছে; সেহেতু এই মৌলিক বিশ্বাস ও চেতনার ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ গঠনের মহান উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী−এর এই গঠনতন্ত্র প্রণীত ও প্রবর্তিত হইল। "
কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করি-
যেহেতু
১. স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ।
এইটা নিয়ে বেশি কিছু বলার নাই। তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ পরিসংখ্যানগত দিকের বিষয়।
২. বাংলাদেশের জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়া বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করিয়াছে
লক্ষ্য করি এই লাইনটা। বাংলাদেশের জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের কথা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। তাদের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ভাষ্যমতে, এই বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ফলেই, বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করিয়াছে।
তারমানে স্বাধীনতার এতো বছর পরে গঠনতন্ত্রে সংশোধনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে জামায়াতে ইসলামী মহান মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে নিয়েছে।
কিন্তু এই দলটির শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ইমেজ রয়েছে। অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। এই বিষয়টিতে বিস্তারিতভাবে যাওয়ার আগে সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ভূমিকা অংশের বাকি বিষয়গুলো দেখি।
এখানে বলা হয়েছে- সেহেতু এই মৌলিক বিশ্বাস ও চেতনার ভিত্তিতে
লক্ষ্য করি কোন মৌলিক বিশ্বাস ও চেতনার ভিত্তিতে।
এখানে দুইটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে।
১. স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ।
২. বাংলাদেশের জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়া বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করিয়াছে
আগেই বলেছি এক নাম্বার বিষয়টির পরিসংখ্যানগত তাৎপর্য বেশি। যদি তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হয় তাহলে তার জন্য মৌলিক বিশ্বাসের কতোটুকুইবা প্রয়োজন।
দ্বিতীয় বিষয়টার জন্য মৌলিক বিশ্বাস এবং চেতনা পুরোটাই খাটে।
সুতরাং জামায়াতে ইসলামী তাদের সংশোধনী গঠনতন্ত্রে , "বাংলাদেশের জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়া বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করিয়াছে " বিষয়টিকে মৌলিক বিশ্বাস এবং চেতনা বলছে।
শেষ অংশে উদ্দেশ্যে নিয়ে কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দল অনেক ধরনের উদ্দেশ্যের কথাই বলে। সুতরাং এ নিয়ে বেশি কিছু বলার নাই।
ফিরে যাই আগের আলোচনায়।
যেহেতু দলটি তাদের সংশোধিত গঠণতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টিকে মৌলিক বিশ্বাস এবং চেতনা হিসাবে বলছে এখন দেখতে হবে দলটির সদস্যরা, শীর্ষস্থানীয় নেতারা সেই মৌলিক বিশ্বাস এবং চেতনা মানে কিনা।
মৌলিক বিশ্বাস এবং চেতনার কথাগুলো বলা হয়েছে গঠণতন্ত্রের ভূমিকা অংশে। সংবিধানের জন্য প্রস্তাবনা অংশ যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি কোন গঠনতন্ত্রের জন্য ভূমিকা অংশ গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং জামায়াতে ইসলামী নামের দলটির সদস্য কিংবা নেতা হলে যেমন গঠনতন্ত্রের ভিতরের অংশগুলো মানতে হবে ঠিক তেমনি ভূমিকা অংশও মানতে হবে।
কিন্তু দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে যারা আছে তাদের অবস্থান দেখে কি মনে হয় তারা মৌলিক বিশ্বাস এবং চেতনার বিষয়টি মানছে? মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা প্রকাশ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিল, রাজাকার বাহিনী গঠন করেছিল।
দেখতে হবে তাদের বর্তমান অবস্থান। আইন তাদের বর্তমান অবস্থান জানতে তাদের "স্টেট অব মাইন্ড" দেখবে। এই লোকগুলা কখনোই তাদের কৃতকর্মের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়নি। তারমানে তাদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন নেই।
এই বিষয়গুলো কি কথিত মৌলিক বিশ্বাস আর চেতনার সাথে যায়? যেসব সদস্য কিংবা নেতা দলের গঠনতন্ত্রের ভূমিকাই মানে না তাদের কি অধিকার আছে সেই দলের নেতা কিংবা সদস্য হওয়ার?
সুতরাং জামায়াতে ইসলামী দলে কোন রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী সদস্য হতে পারে না তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী।
তাই রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীগুলারে দলটি থেকে বহিস্কার করা হোক।
দলে নারীদের নেয়া হোক, অমুসলিম সদস্য নেওয়া হোক। দেখি দলটির অবস্থান ভোল পাল্টিয়ে আদতে কোথায় দাড়ায়।
তবে বড় দাবিটাই হলো- জামায়াতে ইসলামী'র সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীগুলারে দলটি থেকে বহিস্কার করা হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।