আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দর্শক শরণে অশরণ

মাহবুব লীলেন
ক্লাসের শেষ দিন ডিরেকশনের টিচার বলছিলেন- মনে রাখবেন পৃথিবীর সব কিছুই ডিরেকটরের শত্রু। কথাটা আমি একেকবার একেক কিসিমে আবিষ্কার করি আর লিখে রাখি। কিন্তু পরেরবার গিয়ে আবিষ্কার করি নতুন নতুন শত্রু কী একটা কুবুদ্ধির কারণে ভাবলাম দুইটা নাটক একসাথে করে নিলে কিছু সুবিধাই হবে। দুই শুটিংয়ের দ্বিতীয়টা অশরণ। শুটিং শুরু করেই টের পেলাম আগের নাটকের তিন দিনের ক্লান্তি কামড়ে ধরেছে আমাকে আর আমার টিমকে অশরণের প্রথম শটেই।

ধরা তাহলে শুরু হলো আমার... আগের রাতে আগে প্যাকআপ করে পরেরদিন সকাল সকাল হাজির হয়ে দেখি হাউজ খালি। চারটা ছেলেই পালিয়ে গেছে। এখন সেট টানবে কে? ডাকো মালিককে। শোনো তার হাজারো যুক্তি। তারপর ধরে আনো লোক।

মাঝখান থেকে বুকে জ্বালা ধরা তিনটা ঘণ্টা নেই। একটু পরেই যাবে কারেন্ট... একটা সেটে কাজ শুরু করে পরের সেটের আর্টিস্টকে আনতে পাঠানো হলো গাড়ি। হেঁটে গেলে লাগে দশ মিনিট। কিন্তু এক ঘন্টা যায়- দেড় ঘন্টা যায়। না আছে গাড়ির খবর না আছে আর্টিস্টের।

অতো দেরি হচ্ছে কেন? ফোন করো আর্টিস্টকে। কিন্তু ফোন করতেই আর্টিস্টের উল্টা ঝাড়ি- গাড়ি কই? গাড়ি কই? গাড়ি দশ মিনিটের রাস্তার মাঝখানে নষ্ট হয়ে বসে আছেন... কারেন্ট যখন নাই তখন হয় যাও রাস্তায় না হয় বারান্দায়। কিন্তু খুটখাট খুটখাট। আশপাশের বাড়িওয়ালারা বাড়ি মেরামতের আর সময় পায়নি। তাই এই ইট ভাঙা আর গ্রিল কাটার আয়োজন।

সুতরাং ফিরে এসে বসে থাকো কারেন্ট আসার অপেক্ষায়... ছোটবেলায় যখন উলু উড়তো তখন ধরে ধরে বোয়ামে রাখতাম দোয়াংয়ে আঠা লাগিয়ে পাখি ধরার জন্য। সন্ধ্যাবেলা ইনারা এলেন শৈশবের হিসাব বুঝিয়ে দিতে। ক্যামেরায় আর্টিস্ট দুইজন তো উলু দুইশো। বন্ধ করো লাইট। বন্ধ করো ক্যামেরা।

চলো বাড়ি যাই। কাল খুব সকাল থেকে শুরু হবে কাজ... সকাল সাতটা। সব ঠিকঠাক শুধু হাউজে কারেন্ট নেই হাউজের ইলেক্ট্রিসিটি প্রিপেইড কানেকশন। লাইন কাটা। নয়টায় অফিস খুললে মালিক গিয়ে বিল দেবেন।

তিনি গেলেন বিল দিতে। ওখানে দীর্ঘ লাইন পার করে তিনি আমাদের জন্য কারেন্ট নিয়ে এলেন দুপুর একটায়। তখন আবার রুটিন লোডশেডিংয়ের সময়... এক আর্টিস্ট শুরু করল পাউলি। মনে মনে বললাম খাড়াও চান্দু। সঙ্গে সঙ্গে প্লান চেঞ্জ।

সেট চেঞ্জ করে নিয়ে যাওয়া হলো স্টোর রুমে। জানালা নেই। ফ্যান নেই। ওই গুদামেই সিদ্ধ করব হালাকে শট আমি আর ওকে করি না। টানা দুই ঘণ্টা গরমে প্যাদানি দিয়ে আধমরা করে হিসাব করে দেখি আমার নিজের হিসাবের তিন তিনটা ঘণ্টা নেই... আড়াই দিনের দিনের শুটিং গড়ালো চারদিনে।

দিনে দুইবার লোডশেডিং বাদ দিলেও রাত দশ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু আটটার দিকে এলেন ঝড়। এদিকে ওল্টান সেদিনে ওল্টান আর শেষমেশ টান দেন কারেন্টের কানে ধরে। আর সেই কারেন্ট উনি ফিরিয়ে দেন রাত দশটায়। কিন্তু যা লণ্ডভন্ড করে দিয়ে গেছেন তা ঠিক করতে করতে এগারোটা... সিন করা হলো একটা।

এখনও দুইটা বাকি। অত রাত পর্যন্ত কি লোকজন না খেয়ে কাজ করবে? সুতরাং খাবার বিরতি। খাও- গ্যাজাও- রেস্ট নাও তারপর আবার শুটিং... রাত সাড়ে তিনটায় শুরু হলো শেষ সিন শুটিং। প্রথমেই ক্লোজগুলো নিয়ে নেবো? কিন্তু এ কী? সবগুলো আর্টিস্টে চোখ ফোলা। কারণ কী? কারণ ক্লান্তি আর ঘুম... ক্লোজআপ বাদ।

মিড শটে সংলাপ বলো। কিন্তু এই কী সংলাপ? এই সংলাপতো আমি লিখি নি? তাহলে? তাহলে আর কী? আর্টিস্ট বলে যাচ্ছে তার আগে শুটিং করা কোনো এক নাটকের সংলাপ। কারণ মাথা আউলা। কারণ ঘুম আর ক্লান্তি... আচ্ছা সই। এইবার ধরে ধরে করো।

কিন্তু শটের মাঝখানে আর্টিস্টের চিৎকার। ধাম করে কিছু একটা এসে পড়েছে তার মাথায়। কী পড়লো? হ্যান্ডবোর্ড হ্যান্ডবোর্ড যে ধরে রেখেছিল সে ঘুমিয়ে পড়েছে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শেষ শট শুরু হলো রাত সাড়ে চারটায়। মিউট শট। ক্যামেরার কিছু কাজ আছে শটটা শুরু হবার পরে।

আমি ক্যামেরা থেকে আড়ালে মনিটরে বসা। শট শুরু। কিন্তু ক্যামেরাতো নড়ে না। ভাবলাম ক্যামেরাম্যান দুয়েক সেকেন্ড সময় নিচ্ছে। নিক।

কিন্তু এ্যাকটিং শেষ হয়ে যাচ্ছে ক্যামেরা স্থির। শট কেটে দিয়ে ডাক দিলাম- মানিক... মানিক কই? ক্যামেরাম্যান মানিক ক্যামেরার নিচে ফ্লোরের মধ্যে ঘুমে... এই অশরণটা যাচ্ছে আজ রাত সাড়ে আটটায় বিটিভিতে। এডিটিংয়েও এর কাহিনী অনেক। আমার খাইসলতের দোষে সমস্যাগুলোতো আছেই। বেশি বকবক করার মতো করে লিখিও অনেক বেশি।

তারপর সেটে বসে কাটতে কাটতে দরকারি সিনও কেটে ফেলে দেই... .............................................. অশরণ কাহিনীসূত্র: বাণী বৈশাখী নাটক ও নির্মাণ: মাহবুব লীলেন অভিনয়: আনিসুর রহমান মিলন- নাজনীন হাসান চুমকি- চৈতালী সমদ্দার- ওয়াহিদা মল্লিক জলি- রহমত আলী প্রচার: ৫ অক্টোবর- রাত সাড়ে আটটা। বিটিভি
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।