আসুন সত্য ইসলামকে জানি এবং অন্যদেরকে জানাই ...
আমরা এটা জানি যে, নবী (সা.) হচেছন আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলার শেষ নবী৷ তাঁর পরে, কাল কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী আসবে না৷ তবে তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীন যা ইসলাম নামে পরিচিত তা অবশ্যই কাল কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে৷ আর তা টিকে থাকার জন্য অবশ্যই তাঁর আনিত সব কিছুই যেমন: কোরআন, শরিয়ত, সুন্নত ইত্যাদি সব কিছুই সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা হবার একান্ত প্রয়োজন রয়েছে৷ কেননা কোন জাতি যদি তার সত্যতা হারিয়ে ফেলে তবে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তা মুখ থুবড়ে পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই৷ তবে প্রশ্ন হচেছ উক্ত বিষয়গুলোকে কে বা কারা ব্যাখ্যা করবে? আমরা হয়তো এ প্রশ্নের উত্তরে বলবো যে, কেন নবী (সা.)-এর সাহাবগণ৷ উত্তর সঠিক কিন্তু যখনই সাহাবগণ বলছি তখন সব সাহাবাগণকেই বুঝাচিছ৷ কেননা নির্দিষ্ট করে কোন সাহাবার নাম বলছি না৷ আর যেহেতু বলছি না তাই তখনই আমাদের মত ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী নগন্য বান্দাদের মাথায় যে প্রশ্নটি বিশেষভাবে উত্থিত হয় তা হচেছ: সাহাবাগণের বর্ণনায় কি ভুল থাকতে পারে না৷ কারণ তারা তো আর মা'সুম (পবিত্র) নন যে, যা বলবে তার সবই সঠিক৷ আবার এমনও তো হতে পারে যে, তারা নবী (সা.)-এর কাছ থেকে যা কিছু শিখেছে, দেখেছে তার কিছু কিছু ভুলে গেছে৷ হয়তো আপনারা বলবেন না তা হতে পারে না৷ আবারো প্রশ্ন তুলে ধরছি যে, তাহলে বর্তমানে আমরা মুসলমানরা কেন বিভিন্ন পদ্ধতিতে নামায পড়ছি? নবী (সা.) নিশ্চয়ই বিভিন্ন পদ্ধতিতে নামায পড়েন নি! বা পড়তে পারেন না৷ কেননা নবী (সা.) সিরাতুম মুসতাকিমের নির্দেশক, আর সিরাতুম্ মুসতাকিম হচেছ একটি, না কয়েকটি৷ অতএব সিরাতুম্ মুসতাকিমকে সোজা-সরল অবস্থায় কাল কিয়মাত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার জন্য অবশ্যই জ্ঞানে, বিচক্ষণতায়, নৈতিকতায়, শিষ্টাচারিতায়, আধ্যাত্মিকতায়, সত্যবাদিতায়, ন্যায়পরায়নতায়, রাষ্ট্র পরিচালনায় ইত্যাদিতে নবী (সা.)-এর অনুরূপ পবিত্র ব্যক্তিত্বগণের প্রয়োজন যারা কাল কিয়ামত পর্যন্ত ওই পথ ধারাকে অমিশ্রিত অবস্থায় টিকিয়ে রাখতে পারবেন৷ আর গাদীর হচেছ এমন একটি ঘটনা যা আমাদেরকে ওই সমস্ত পবিত্র ব্যক্তিগণের পরিচয় সূত্র যারা সিরাতুম্ মুসতাকিমকে কাল কিয়ামত পর্যন্ত অমিশ্রিত অবস্থায় টিকিয়ে রাখতে সক্ষম, যারা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্বাচিত ও মহা মানব কর্তৃক ঘোষিত৷ নিম্নে আমরা সেই সত্যই তুলে ধরলাম৷ কেননা গাদীর হচেছ:
- গাদীর হচেছ রিসালত ও ইমামতের মিলন কেন্দ্র৷
- গাদীর হচেছ প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হওয়ার স্থান৷
- গাদীর হচেছ হকের সাথে বাইয়াত করার দিন৷ যা আমাদের সামনে ভূল পথকে দুরে সরিয়ে দিয়ে সত্যের পথকে উন্মোচন করবে ইন্শাআল্লাহ্ তা'আলা৷
গাদীর দিবস কী?
গাদীর দিবস সর্ম্পকে জানার আগে 'গাদীর' ও 'খুম' শব্দদ্বয়ের সাথে পরিচিত হওয়া আবশ্যক৷ গাদীর একটি আরবী শব্দ৷ একটি নিচু স্থান, যেখানে বৃষ্টির পানি জমাকৃত হয়ে থাকে; আরবীতে তাকে 'গাদীর' বলে৷ মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী জায়গায় অবস্থিত অনুরূপ স্থানটিকে 'খুম' নামে ডাকা হত৷ এই দু'য়ের সম্বনয়ে পরবর্তী নামকরণ হয়েছে 'গাদীরে খুম'৷ বর্তমানে এ স্থানটি 'ওয়াদিউল গুরবাহ্' নামে প্রসিদ্ধ৷
দশম হিজীরতে নবী (সা.) যখন হজ্ব (যে হজ্বটি ইসলামে "হুজ্জাতুল বিদা" বা "হুজ্জাতুল ইসলাম" নামে পরিচিত) শেষে বিশাল কাফেলা নিয়ে মদীনা অভিমুখে ফিরছিলেন৷ কাফেলাটি ১৮ই যিলহাজ্ব 'গাদীরে খুম' নামক স্থানে পৌছায়৷ আর পৌছানো মাত্রই আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা তাঁর প্রিয় নবী (সা.)-এর উপর ওহী নাযিল করলেন :
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
'হে আমার রাসূল! যা কিছু তোমার প্রভুর নিকট থেকে তোমার উপর নাযিল করা হয়েছে তা মানুষের মাঝে পৌছে দাও৷ আর যদি তা না কর, তবে তুমি তোমার রিসালতের কোন কাজই আঞ্জাম দিলে না৷ আল্লাহ্ তোমাকে মানুষের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন, আর তিনি কাফিরদেরকে হিদায়ত করেন না' ৷
নবী (সা.) সকলকে দাড়ানোর নির্দেশ দিলেন এবং যারা দুরে চলে গিয়েছিল তাদের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করলেন ৷ হাজীগণ প্রচণ্ড গমর মধ্যে অপেক্ষা করতে লাগলো৷ এতই গমর ছিল যে, হাজীরা তাদের পোশাকের এক অংশকে মাথার উপর এবং আরেক অংশকে পায়ে পেচিয়ে রেখেছিল ৷ কারণ উত্তপ্ত বালুর উপর দাড়িয়ে থাকা ছির অন্তত্য কষ্টকর৷ তথাপিও নবী (সা.) কেন দাড়ানোর নির্দেশ দিলেন সেটাই ছিল মূখ্য বিষয়৷
নবী (সা.) সবাইকে উটের পিঠ থেকে নেমে আসতে এবং উটের পিঠের উপর বসার জন্য চামড়া অথবা কাপড় দিয়ে যে স্থান তৈরী করা হয় (অনুরূপ ঘোড়ার জিনের মত) একস্থানে একত্রিত করতে বললেন৷ আর সেগুলোকে একের পর এক সাজিয়ে মিম্বার তৈরী করার নির্দেশ দিলেন৷ মিম্বার তৈরী করা হল, ততক্ষণে দুরে চলে যাওয়া হাজীরা এসে সে স্থানে উপস্থিত হয়েছে৷ তিনি মিম্বারে উঠে এরূপে খুৎবা দিলেন:
"সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ পাকের জন্যেই৷ আজ তাঁর কাছে সাহায্য চাইবো, তাঁর উপর ঈমান আনবো এবং তাঁর প্রতি ভরসা রাখবো৷ আর অপবিত্র নফস এবং খারাপ আমলের থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় নিব৷ তিনি যাকে হিদায়ত দান করেন, কেউ তাকে গোমরাহ্ করতে পারে না এবং তিনি যাকে হিদায়ত দান করেন না, কেউ তাকে হিদায়ত করতে পারে না৷ সাক্ষ্য দিচিছ যে, তাঁর মত একক মা'বুদ আর কেউ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও প্রেরীত৷
হে মানব সকল! বিজ্ঞ প্রভু আমাকে খবর দিয়েছেন যে, কোন নবীই তাঁর পূর্বের নবীর জীবনকালের অর্ধেক জীবনের বেশী জীবনকাল অতিবাহীত করবে না৷ আর এটাও জেনে রাখ! তিনি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমাকে তাঁর কাছে ফিরে যাওয়ার দাওয়াত করবেন এবং আমি তাঁর ইচছা পূরণ করবো৷ আর আমার কাছে এবং তোমাদের কাছেও প্রশ্ন করা হবে, তখন তোমরা কি জবাব দিবে?
তারা বলল: সাক্ষ্য দিব যে, আপনি ইলাহী বার্তাকে আমাদের কাছে পৌছিয়েছেন, কষ্ট করেছেন এবং প্রচেষ্টা চালিয়েছেন৷ এ জন্য আপনাকে যেন উত্তম পুরস্কার দান করেন৷
তিনি বললেন: তোমরা সাক্ষ্য দিচছ যে, একক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও প্রেরীত৷ আর বেহেশ্ত ও জাহান্নামের অস্তিত্ব আছে, আত্মার মৃত্যু হবে, কিয়ামত আসবে এবং সে দিন আল্লাহ্ সমস্ত মৃতদেরকে পূনরায় জীবিত করবেন?
তারা বলল: হ্যাঁ, এগুলোর সব কিছুর প্রতিই সাক্ষ্য দিচিছ৷
নবী (সা.) তাদের কাছ থেকে আল্লাহ্ তা'আলার পরিপূর্ণ কর্তৃত্বের স্বীকারোক্তি নেয়ার পর নিজের কর্তৃত্বের উপর তাদের স্বীকারোক্তি চাইলেন এভাবে:
ألست اولى بكم من انفسكم ؟
আমি কি তোমাদের থেকেও তোমাদের জান ও মালের তুলনায় উত্তম এবং উপযুক্ত নই? (তিনবার বললেন)৷
তারা বলল: অবশ্যই ইয়া রাসূলুল্লাহ্, আপনি আমাদের সব কিছুর উপর অধিকার রাখেন৷
অতপর তিনি আলী (আ.)-কে দু'হাত দিয়ে উচু করে তুলে ধরে বললেন:
ايها الناس ! الله مولاى و انا مولاكم، فمن كنت مولاه فهذا على مولاه، اللهم وال من والاه و عاد من عاداه و انصر من نصره و اخذل من خذله
'হে মানব সকল! আল্লাহ্ আমার মাওলা ও প্রভু, আর আমি তোমাদের মাওলা ও নেতা৷ সুতরাং আমি যার মাওলা ও অভিভাবক আমার পরে এই আলীও তাদের মাওলা ও অভিভাবক৷ হে আল্লাহ! বন্ধুত্ব রেখো তার সাথে, যে আলীর সাথে বন্ধুত্ব রাখে৷ শত্রুতা করো তার সাথে, যে আলীর সাথে শত্রুতা করে এবং তাকে সাহায্য কর যে আলীকে সাহায্য করে৷ আর ত্যাগ করো তাকে যে আলীকে ত্যাগ করে' ৷
এরপর তিনি বললেন: হে মানব সকল! তোমরা যারা এখানে উপস্থিত রয়েছো, তারা এই বক্তব্যটি অনুপস্থিতদের কাছে পৌছে দিও৷
নবীর (সা.) খুৎবা শেষে আল্লাহর আমিন হযরত জিবরাঈল (আ.) ওহী নিয়ে নাজিল হলেন, যা নিম্নরূপ:
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا
"আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে মনোনিত করলাম" ৷
গাদীরের এই ঘটনা বহু শিয়া ও সুন্নি আলেমগণ তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন৷ আমরা এখানে আহ্লে সুন্নাতের উদ্ধৃতিগুলোই তুলে ধরবো৷
১- গাদীরের হাদীস:
ক)- আহ্মাদ ইবনে হাম্মাল তার নিজের মুসনাদের ৪র্থ খণ্ডের ২১৮ পৃষ্ঠায় হাদীসটি এরূপে উল্লেখ করেছেন:
বারা' ইবনে আ'যেব বলল: আমরা আল্লাহর নবী (সা.)-এর সাথে সফরে ছিলাম৷ গাদীরে খুমে পৌছালাম এবং সেখানে অবস্থান করলাম৷ এমন সময় জামা'য়াতের সাথে নামায পড়ার আওয়াজ দেয়া হল৷ ওখানে দুটি গাছ ছিল তার নিচে নবী (সা.)-এর জন্য পাটি বিছানো হল৷ তিনি যোহরের নামায আদায় করলেন৷ তারপর তিনি আলী (আ.)-এর হাত ধরে মানুষের উদ্দেশ্যে এরূপ বললেন: তোমরা কি জান না যে, আমি মু'মিনদেও থেকেও তাদের নফসের উপর বেশী অধিকার রাখি৷ উপস্থিত সকলেই বলল: নিশ্চয়ই ইয়া রাসূলুল−াহ্৷ তখন আলী (আ.)-এর হাত ধরে উচু করে বললেন:
فمن كنت مولاه فهذا على مولاه، اللهم وال من والاه و عاد من عاداه
আমি যার মাওলা বা অভিভাবক এই আলীও তাদের মাওলা বা অভিভাবক, আল্লাহ্ তাকে ভালবাস যে আলীকে ভালবাসে, শত্রু মনে কর তাকে যে আলীকে শত্রু মনে করে৷
বারা' আরো বলেন: এরপর জনাব ওমর সামনে এসে বললো:
هنيئاً يابن ابی طالب اصبحتَ و اَمسيت مولی کل مؤمن و مؤمنة
মুবারকবাদ তোমাকে হে আবু তালিবের পুত্র আলী, তুমি আজ থেকে সমস্ত মু'মিন নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলে৷
খ)- মুত্তাকী, কানযুলুল উম্মালের ষষ্ঠ খণ্ডে ৩৯৭ পৃষ্ঠায় এই হাদীসটিকে অনুরূপ আহ্মাদ ইবনে হাম্বালের ন্যায় বর্ণনা করেছেন৷
গ) মুহিব তাবারী, র্আরিয়াযুন নাযারাহ্ গ্রন্থের ২নং খণ্ডের ১৬৯ পৃষ্ঠায় এই হাদীসটিকে অনুরূপ আহ্মাদ ইবনে হাম্মালের ন্যায় বর্ণনা করেছেন৷
ঘ)- মানাকিব নামক গ্রন্থে জনাব ওমরের উদ্ধৃতি দিয়ে এই হাদীসটিকে অনুরূপ আহ্মাদ ইবনে হাম্বালের ন্যায় বর্ণনা করেছেন৷
ঙ)- হাকিম নিশাপুরী, মুসতাদরাক গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১০৯ পৃষ্ঠাতে যাইদ ইবনে আরকামের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছে এরূপে: নবী (সা.) হজ্জ শেষ করে ফিরে আসার সময় গাদীরে খুমে অবস্থান করলেন এবং গাছের ছায়ার নিচে সকলকে একত্রি করে এরূপ বললেন:
"পরওয়ারদেগার আমাকে ডাক দিয়েছেন, খুব শিঘ্রই আমি এ দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিব৷ আমি তোমাদের মধ্যে দুটি অমুল্য সম্পদ রেখে যাচিছ যা একটি অপরটির থেকে অধিক মুল্যবান৷ প্রথমটি হচেছ আল্লাহর পবিত্র কোরআন, আর দ্বিতীয়টি হচেছ আমার ইতরাত বা আহ্লে বাইত৷ অতএব তোমরা হুসিয়ার থেকো আমার পরে তাদের সাথে কিভাবে আচরণ করবে, কারণ তারা একে অপর থেকে ততক্ষণ আলাদা হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা হাউযে কাউসারে আমার সাথে মিলিত না হবে৷ তারপর বললেন: আল্লাহ্ আমার অভিভাবক আর আমি তোমাদের অভিভাবক৷ এ বলেই তিনি আলী (আ.)-এর হাত উচু করে ধরে বললেন: আমি যার মাওলা বা অভিভাবক এই আলীও তার মাওলা বা অভিভাবক, আল্লাহ্ তাকে ভালবাস যে আলীকে ভালবাসে, আর তাকে শত্রু মনে কর যে আলীকে শত্রু মনে করে৷
চ)- আহ্লে সুন্নাতের আরো অনেকেই এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যেমন : সূয়ূতী 'আর্দ্দারুল মানসুর' গ্রন্থে আন্নাবী আওলা বিল মু'মিনিন মিন আনফুসিহিম আয়াতের তফসিরে, ফাখরে রাজি يا ايها الرسول بلغ ما انزل اليك আয়াতের তফসিরে, আবু নাঈম 'হিলি−য়াতুল আউলিয়া'-ও ৫ম খণ্ডের ২৬ নং পৃষ্ঠায়, খাতিব বাগদাদী 'তারিখে বাগদাদ' গ্রন্থের ৮ম খণ্ডের ২৯ নং পৃষ্ঠায়, নিসাঈ 'খাসাইস' গ্রন্থে ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬ নং পৃষ্ঠায়, ইবনে হাযার 'ছাওয়ায়ে'ক' গ্রন্থে ২৫ নং পৃষ্ঠায় এবং আসাদুল গাবা, মুসকিলুল আছার, ফেইযে কাদির, মাজমুয়ে হেইছামি গ্রন্থসমূহে৷
২- তাবলিগ ও আকমালুদ্বীন আয়াতের শানে নুযুল:
এই দুই আয়াতের শানে নুযুলের ক্ষেত্রেও আহ্লে সুন্নাতের গ্রন্থসমূহে লক্ষ্য করেছি এবং তা এখানে উলে−খ করছি:
ক)- খাতিব বাগদাদ 'তারিখে বাগদাদ' গ্রন্থে ৮ম খণ্ডের ২৯০ নং পৃষ্ঠায় আবু হুরাইরাহর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করে বলেন: যে ব্যক্তি ১৮ই যিলহাজ তারিখে রোযা রাখে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে ৬০ মাসের সমমানের ছওয়াব দান করবেন, আর এই দিনটি হচেছ গাদীরের দিন৷ যখন নবী (সা.) আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.)-এর হাত উচু করে ধরে বলেছিলেন যে, আমি কি মু'মিনদের অভিভাবক ও প্রতিনিধি নই? সকলেই বলেছিল: অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ্, তখন তিনি বলেছিলেন: আমি যার মাওলা বা অভিভাবক এই আলীও তার মাওলা ও অভিভাবক৷ এই সময় জনাব ওমর বলল: মুবারকবাদ তোমার উপর হে আবু তালিবের পুত্র আলী, তুমি আজ সকল মু'মিন নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলে৷ তখন আল্লাহ্ তা'আলা এই আয়াতটি নাযিল করলেন -اليوم اكملت لكم دينكم ৷
খ)- সূয়ুতী তার দাররুল মানসুর তফসির গ্রন্থে উক্ত আয়াতের তফসিরে ইবনে আসাকিরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন: যখন রাসূল আল্লাহ্ (সা.) গাদীর দিবসে আলী (আ.)- কে ইমাম ও বিলায়তের পদে অধিষ্ঠিত করলেন তখন জিবরাঈল (আ.) এই পবিত্র আয়াত সাথে নিয়ে নাযিল হলেন-اليوم اكملت لكم دينكم ৷
গ)- ফাখরে রাযি يا ايها الرسول بلغ ما انزل اليك এই আয়াতের তফসিরে উলি−খিত গাদীরের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন৷
বি:দ্র: উল্লেখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যদি করো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে মুক্ত মন ও পরিচছন বিবেক নিয়ে লিখুন৷
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।