আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দরজার ওইপাশে, আমি

দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
আজ থেকে বছরখানেক আগে সেলিম সামাদের একটি ইংরেজী ব্লগের লেজ ধরে এই ব্লগে এসে পৌছেছিলাম সেদিন। প্রথম আলোর কার্টুন ঝামেলা তখন তুঙ্গে, সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেরুল হাসান সুজন এই ব্লগে প্রকাশ করে দেন শিবিরের সেই মোঃ কদুর কার্টুন চিত্রটি। সেই ছবিটি হৈ হৈ করে ছড়িয়ে পড়ে তাবৎ দুনিয়ায়! বিষয়টি আমাকে আগ্রহী করে। আমি নিয়মিত ব্লগ পড়তে শুরু করি এখানে।

পড়তে পড়তে কদিনের মাথায় কিছু বলতেও ইচ্ছে হল আমার। ব্যাস এ ভাবেই আজ থেকে এক বছর আটচল্লিশ ঘন্টা আগে এই ব্লগে আমার যাত্রা শুরু হয়। সেদিন কি আর জানতাম ঠিক এক বছরের মাথায় এসে আমাকে ৭৭৩১৭টি হিট, দেয়া/পাওয়ায়'র ৫৫০৭ টি মন্তব্য ও ৬৭টি আবঝাপ ব্লগের বোঝা বইতে হবে এমন! খেয়ে না খেয়ে যে পরিমান সময় অপচয় করে ছি এই ব্লগে সে কথা ভাবলে ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে। ছাড়ি ছাড়ি করে কেমন করে যেন ৩৬৫ টি দিন পার করে দিলাম অবলিলায়! অটোয়া থেকে ব্লগাইছি, মন্ট্রিয়ল থেকে ব্লগাইছি, নিউইয়র্ক থেকে ব্লগাইছি, নিউজার্সি থেকে ব্লগাইছি এখন ঢাকায় এসে সেহেরীর সময় আজান দিয়ে ব্লগাচ্ছি। জানি না কি আছে আর সামনে! বলা বাহুল্য আমার প্রথম পড়া ব্লগটিই আমাকে এই ব্লগ দুনিয়ার বাসিন্দা হতে প্ররোচিত করে একশত ভাগ।

সে দিনের ঐ ব্লগ পোষ্টে ব্লগারদের বাক বিনিময় পড়তে পড়তে পরিচিত হতে থাকি বাংলা ব্লগিং এর কিংবদন্তী এই সাইটটি ও এর প্রাণ যাদেরকে সবাই ব্লগার বলে সম্বোধন করি তাদের সাথে। কি কারনে যেন এই ব্লগের বেশীর ভাগ সদস্যদের অদ্ভুত অদ্ভুত পরিচয় গুলিই আমাকে কেমন যেন আকৃষ্ট করল। আবদুল/ জলিল/ বাবর/ তারেক/ তোফায়েল এই টাইপের মানুষের নামের চেয়ে আমাকে প্ররোচিত করে অদ্ভুত কিছু নাম। পরে জেনেছি যাকে ব্লগের ভাষায় বলা হয় "নিক"। কেন যেন মনে হয়ে ছিল এখানে ব্লগ লিখতে গেলে আমারও এই টাইপের একটা "নিক" থাকতে হবে।

যেই ভাবা সেই কাজ করে ফেললাম। ব্লগে প্রকাশ পেল লাল দরজা নামের এক ভার্চুয়াল খাতার। ঠিক যেন আশির দশকের মাঝামাঝি কলেজে নিয়ে যাওয়া একটা সাধারন ডাইরির মত যার এক পৃষ্ঠায় অংকের নোট থাকলে আরেক পৃষ্ঠায় থাকত স্বৈরাচারী সরকারের নিকুচি। এক পাশে প্রেম ভরা পদ্য ত অন্য পাশে আবোলতাবোল গদ্য। আজো মনে পড়ে এমন একটা ডাইরীর প্রথম পৃষ্ঠায় লাল শীষ কলম দিয়ে বড় করে লিখে রেখেছিলাম জীবনে প্রথম ভালোবাসা মেয়েটির নাম।

জীবনের প্রথম ই-মেইল একাউন্ট খুলে ছিলাম ১৯৯৮ সালে এর প্রায় অাট বছর পর এক দিন বাড়িতে আমার এ্যাপল জি ফোর ডেস্কটপটায় বাপ আর বেটি মিলে একটা নতুন ই-মেইল একাউন্ট খুলতে বসি। সেবার আর নিজের কোন একাউন্ট নয়, মেয়ে বড় হয়েছে তার একটা ই-মেইল একাউন্ট লাগবে। মহা সমারোহে আমার কন্যার জীবনের একটা এক্সাইটিং মুহূর্তের সংঙ্গী হলাম সে দিন। আমার স্নেহের কন্যাটি আমাকে বলে বসল, তোমার ই-মেইল এড্রেস এমন কেনা তোমার পুরা নামটা লিখে রাখছ? আমি বলি, কি লিখব তাইলে ঐটা আমার ঠিকানা ঐখানে ত নামই লিখব হটমেইলের আগে! ও উওর দিল, আহ্ তুমি কোনই ক্রিয়েটিভ না। আমি বলি, ক্রিয়েটিভ কেমনে হয়? ও বলে, আমার মেইলটা দেখ "এনামে রক্স"।

আমার মেয়েটি এ্যনিমেশন ফিল্মের পোকা। খুব ভালো ছবি আঁকে। ওর স্বপ্ন বড় হয়ে ও জাপান যাবে এনিমেশন পড়তে। মেয়েটির জন্মের পর বাবা মা খুব সখ করে একটি নাম রেখে ছিল, "মুনিয়া গল্প"। ভালোবাসার প্রথম সন্তান অনেক সখ করে দেয়া নাম।

ক্রিয়েটিভ বাবা মায়ের আদর করে দেয়া নাম। মেয়েটির আজকে সে নামের অর্ধেকটা পছন্দ হয় অর্ধেকটা হয় না। সে নিজে ও এখন ক্রিয়েটিভ হতে শিখছে। মনে পরে এক সময় আমি নিজে ও আমার নামের একটা বাহুল্য অংশ কেটে আমার পাশপোর্টে বসিয়ে দিয়ে ছিলাম। কি আর করা এক জীবনে আমাদের জীবন চলা বৃওাকার হয়ে ফিরে আসে না যে ফের শুধরে নেয়া যায় জীবনের ভুল গুলি।

ছোট বেলায় একটা দেখা ছবির কথা মনে হল। মিন্টু আমার নাম। সোহেল রানা কে ভীলেন ঘুষি মারে আর জিজ্ঞেস করে, বল তোর নাম কি? তখন সোহেল রানা ঘুষি খায় আর উত্তর দেয়, মিন্টু। দুইবার ঘুষি খায়। আবার উত্তর দেয়, মিন্টু।

তিন বারের মাথায় নায়ক সাহেব রাগ হয়ে পাল্টা আক্রমন করার আগে বলে ওঠেন, মিন্টু আমার নাম। ব্লগে ভর্তি হয়ে যখন নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে ব্লগীং করছি তখন হঠাত করেই এক দিন আবিষ্কার করলাম এখানে সবাই কিন্তু আবার আমার মত নাম পরিচয়হীন রাস্তার ব্লগার নন। কেউ কেউ রীতিমত নামের ভারে নানা ভাবে জর্জরিত। আমার মত নেড়ি ব্লগারদের পরিচয়হীনতা নিয়ে তাচ্ছিল্য করেন তারা যখন তখন। আজ এই বর্ষপূর্তিতে কত কিছুইত মনে হচ্ছে।

মনে হচ্ছে এই ব্লগের কল্যানে দুনিয়া জোড়া এক দল অদ্ভুত বন্ধু পাবার সৌভাগ্যর কথা। কার নাম ভুলে কার নাম উচ্চারণ করব! এই ব্লগে শত সময় অপচয়ের মাঝে এইটুকুই আমার অনন্য পাওয়া। সারা জীবন মনে থাকবে এই সব বেলা অ-বেলার কথা। ধন্যবাদ বন্ধুরা, ধন্যবাদ বাঁধ ভাঙ্গা পরিবার। পুনশ্চঃ আসল কথাইত বলা হইল না।

যে জন্য এই বর্ষপূর্তী ব্লগ রচনা। লাল দরজা আমার খুব প্রিয় এটি ছবি। কম্পিউটারের মনিটরের সামনে যখন ই এসে বসি এটাকে আমার কেবল ই আজব দুনিয়ায় যাবার দরজা জানালা মনে হয়। আর অমার ডাক নাম হেলাল ইংরেজীতে ইমেইল করলে সাইন করি এইভাবে heLal অর্থাত সে লালা। একটু ক্রিয়েটিভ হওয়া আর কি।

সে কারনেই হেলালের ভার্চুয়াল দরজা মানে লাল দরজা। এই আর কি, এই টুকুই বলার জন্য এ্যাতো ইনয় বিনয়! শুভেচ্ছা সকলকে। শুভ ব্লগিং। সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল ঢাকা, বাংলাদেশ
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।