আমি বাঙালি এবং বাংলাদেশী
সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চ। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ দমনে সরকারি উদ্যোগ আরও গতিশীল করা এবং এ কাজে প্রশাসনকে কার্যকর করে তোলাসহ সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে মঞ্চ।
মঞ্চের দ্বিতীয় জাতীয় কনভেনশনে এই আহ্বান ও দাবি জানানো হয়। গতকাল শুক্রবার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে দিনব্যাপী ওই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারত ও পাকিস্তানের দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং দেশের প্রায় ৫০টি জেলার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
মঞ্চের পক্ষ থেকে আগামী নভেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়।
গতকাল সকাল ১০টায় আইইবি প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে কনভেনশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এরপর প্রবীণ রাজনীতিক অজয় রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনভেনশনের সাধারণ অধিবেশনে আনিসুজ্জামান বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা দরকার।
প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের মূল চেতনাই ছিল গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক। কিন্তু আজকের বাস্তবতা ভিন্ন।
দেশের সংবিধানে আজ অত্যন্ত বিসদৃশভাবে ধর্মরিপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্মের অবস্থান।
আনিসুজ্জামান আরও বলেন, অতীতেও বহুবার দেশবাসীর অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু নাগরিক সমাজের প্রতিরোধ তা নস্যাত্ কর দিয়েছে। আজও নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী সংগঠন নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
কনভেনশনে আমন্ত্রিত অতিথি পাকিস্তানের আওয়ামী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফারুক তারিক বলেন, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শক্তির আজকের সংগ্রাম অভিন্ন। বাংলাদেশের এই সংগ্রামে পাকিস্তানের সংগ্রামীদের সমর্থন আছে। তিনি জামায়াতে ইসলামীকে মোনাফেক (হিপোক্র্যাট) দল অভিহিত করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে দলটির অতীত-বর্তমান কলঙ্কিত কার্যক্রম তুলে ধরেন।
একাত্তরের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে ফারুক তারিক বলেন, তাঁর দেশের জনগণও ইচ্ছা পোষণ করে একাত্তরের পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার।
ভারত থেকে আমন্ত্রিত রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমান একাত্ম হয়ে বসবাস করেছে।
ধর্মকে ব্যবহার করে প্রতাপশালী মোঘল সম্রাটেরাও এই একাত্মতা নষ্ট করেননি। কিন্তু যখন থেকে ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারকে যুক্ত করা হয়েছে, তখন থেকেই সেই একাত্মতা নষ্ট হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গা দখল করতে শুরু করেছে সাম্প্রদায়িকতা।
অনুষ্ঠানে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, আজ দেশবাসীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ভবিষ্যতে তাঁরা কোন বাংলাদেশ দেখতে চান—তালেবানি, না মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থানের কোনো সুযোগ নেই।
এরা মানুষের অধিকার হরণ করে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী বলেন, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি এখনকার মতো এত বড় বিপর্যয়ের মুখে আগে কখনো পড়েনি।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, সাংসদ রাশেদ খান মেনন ও মঈন উদ্দীন খান বাদল, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর, রানা দাশগুপ্ত, আবুল বারকাত, মঙ্গল কুমার চাকমা, তুরিন আফরোজ, বদিউজ্জামান ভূঁইয়া, ইমরান এইচ সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
তথ্য সুত্রঃপ্রথম আলোর
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।