আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোজা ২২: অহঙ্কার-- প্রকাশ



আমরা জানি বা শুনি - অহঙ্কার পতনের মূল । এই বিষয়ে আলোচনা একটি গল্প দিয়ে শুরু করি। একজন বুজুর্গ ব্যক্তির নিকট তার এক মুরীদ এলো । বলল- হুজুর আমি যে কুয়ার পানি খাই , তার মধ্যে ভীষন দুর্গন্ধ । যেনোকিছু একটা পচে আছে খাওয়া যাচ্ছে না ।

হুজুর বললেন - কুয়ার থেকে ৫০ বালতি পানি ফেলে দাও। দুএকদিন পরে ঐ ব্যক্তি আবার আসলো , হুজুর পানিতে এখনো গন্ধ খাওয়া যাচ্ছে না। হুজুর বললেন আরো ৫০ বালতি পানি ফেলে দাও। আবারো ঐ ব্যক্তি এসে বলল হুজুর এখনো পানি খাওয়া যাচ্ছে না - কি করবো? হুজুর এবারে বললেন - ঐ কুয়ার মধ্যে যে পচা শুকরটা আছে সেটা কি উঠিয়ে ফেলে দিয়েছ? সে বলল - না । হুজুর বললেন তাহলে সারাজীবন পানি ফেললেও তো ঐ পানি অপরিস্কারই থাকবে, কোন কাজে লাগবে না।

আগে পচা শুকরটি ফেলে দাও, তারপরে পানি পরিস্কার হবে। আমাদের অহঙ্কার বা অহম বা অহং বা ইগো এই পচা গলা শুকরেরই মতো । আমাদের ভিতরে যতদিন থাকবে ততদিন যত চেষ্টাই করি আমরা শুদ্ধ মানুষ বা ভালো মানুষ হতে পারবো না। এই কারনে এই অহঙ্কার নামক বিষয়টি আসলে আমাদের জানা ও বোঝা জরুরী । আমরা আসলে সবাই জানি , সাধারনভাবে যখন কেউ নিজেকে বিশেষভাবে প্রকাশ করতে চায় তাকে আমরা অহঙ্কারী বলি।

অহম বা অহঙ্কার হচ্ছে নিজেকে উদগ্রভাবে প্রকাশ করার নাম। এটাকে আমরা কখনো আত্মাভিমান বলি। কখনো বলি হামবড়া ভাব। হামবড়া ভাব কথাটা অহঙ্কারের একটা ভালো প্রকাশ। হামবড়া মানে নিজেকে বড় মনে করা ।

আসলে এই নিজেকে বড় মনে করাটা আমরা অনেকেই পছন্দ করি না । কারন সবাই যার যার অবস্থানে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মানতে চায়। এটাই অহঙ্কার । আর এই অহঙ্কার আরেকজনকে উপরে উঠতে দিতে চায় না। অর্থ্যাৎ দেখা যাচ্ছে এক অহঙ্কার অপরের আরো অহঙ্কারের জন্ম দিচ্ছে।

এখন আমরা ভাবতে পারি অহঙ্কারের প্রকাশ কি কি ভাবে এবং কার কার মধ্যে হয়। অহঙ্কার ব্যক্তিগতভাবেই সাধারনত প্রকাশিত হয় । তবে এর প্রকাশ পারিবারিক এবং জাতীয় ভাবেও হতে পারে। ১। ব্যক্তিগত প্রকাশ: আমরা কত কিছুরই অহঙ্কার করি ।

আমার এই আছে সেই আছে। আছে বা থাকা জিনিসটা ঠিক আছে । কিন্তু এটা যখন আমি উদগ্রভাবে অপরের অসুবিধা সৃষ্টি করে প্রকাশ করতে চাই তখনই সেটাঅহঙ্কারে প্রকাশিত হয়। আমার একটা বাড়ী আছে - সবার কাছে যখন বলে বেড়াই । আমার অনেক টাকা আছে - যখন কথায় কথায় প্রকাশ করি ।

আমার একটা গাড়ী আছে - যখন দেখিয়ে বেড়াই। সুন্দর একটা শাড়ী কিনেছি- যখন বলে বেড়াই। আমি ভালো লিখতে পারি আমি একজন লেখক - যখন ভাবভঙ্গী পোশাক আশাকে তা প্রকাশ করতে থাকি। আমি একজন এম বি এ - সবাইকে জানান দিতে থাকি। আমি একজন মাল্টিন্যাশনালের অফিসার - যখন বিশেষ মুড নিয়ে থাকি।

.....ইত্যাদী ইত্যাদী নানাভাবে প্রকাশ পায় আমাদের অহঙ্কার । আসলে অহঙ্কার ছাড়া মানুষ খুজে পাওয়া দায়। ২। পারিবারিক প্রকাশ- এটা তো সবাই জানি। আমি চৌধুরী বংশের ছেলে আমার পরিবার চৌধুরী পরিবার।

আমি তালুকদার। বা আমার বাবাদাদা জমিদার ছিলেন। কিছুই অবশিষ্ট নেই কিন্তু পারিবারিক অহঙ্কারটি ঠিকই আছে। আর এটাওতো জানি যে এই অহঙ্কারই এ সকল পরিবারের পতনের মূলে । তেমনি নব্য ধনী পরিবারগুলোও নব্য অহঙ্কারে আক্রান্ত হয়ে যায়।

৩। সামাজিক বা জাতীয় প্রকাশ - সামাজিক বা জাতীয় কোন কিছু নিয়ে যখন বেশী বাড়াবাড়ি হয় তখন সেটা সেই জাতি বা সমাজের অহঙ্কারে পরিণত হয়। আসলে যেকোন উচ্ছাস বা আবেগ এর মাত্রাতিরিক্তবাড়াবাড়িটা অহঙ্কারের একটি দিক উন্মোচন করে এবং এটা ক্ষতিকর। দেখুন আই সিসি বিজয়ী ক্রিকেট দলকে নিয়ে আমাদের কি পরিমান উল্লাস ছিল । তা এখন কি রকম চুপসে গেছে।

আমরা মনে করি অহঙ্কার বুঝি শুধু বড় লোকের ব্যাপার । তা নয় এটা বড় ছোট গরীব ধনী সবার ব্যাপার। গরীবের অহঙ্কার প্রকাশের মাধ্যম রাগ ক্ষোভগালিগালাজ ইত্যাদী। আসলে অহঙ্কারের প্রকাশ সবার মধ্যেই সমভাবে বিদ্যমান। আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরানের বহু স্থানে অহঙ্কার এবং অহঙ্কারীদের সম্বন্ধে বলেছেন ।

এবং তাদের জন্য শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। ---ফিরআউন ও উহার বাহিনী অন্যায় ভাবে পৃথিবীতে অহঙ্কার করিয়াছিল এবং উহারা মনে করিয়াছিল যে , উহারা আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তিত হইবে না। আত:পর আল্লাহ তাহাদিগকে ধৃত করিলেন এবং সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলেন। দেখ, জালিমদের কি পরিণতি হইয়া থাকে। --সূরা কাসাস: ৩৯-৪০ এখানে অহঙ্কারীদেরকে জালিম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কেন তা আমরা আগামীকাল অহংকার -বিকাশ , পর্বে আলোচনা করবো। এর মধ্যে আমরা আমাদের ভেতরেযে অহঙ্কারের প্রকাশ নিয়ে ভাবতে থাকি। ধন্যবাদ । আগামীকাল আবার আলোচনা হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.