মাহবুব লীলেন
দুজনেরই একান্ত আশ্রয় মন্দিরটি। একমাত্র যেখানে পা ছড়িয়ে বসতে পারি। মেয়েটিও দেখলাম নিশ্চিন্ত। ওখানেই তার সাথে পরিচয়। কথা।
এবং মগজের কোথাও যেন বাঁশি শোনার একটানা ব্যথা
একদিন। দু’দিন। তারপর আরো দিন। আরো বহুদিন
হঠাৎ বেজে উঠল কোথাও হুইসেল। তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম।
আমাকে যেতে হবে। গন্তব্যে যাত্রার সুবর্ণ সময়। আমি বললাম- দেবী নমস্কার
মেয়েটিও উঠল দ্রুত। সেও যাবে। দেবীকে নমস্কার জানাল সেও।
তাকে উদ্দেশ্য করে দেবী বলল- যা। তোর কোনো চিন্তা নেই। ও আছে সাথে। সে খুব নির্ভরশীল মানুষ। দেবী আমার কাঁধে হাত রাখল- দেখিস তাকে
মেয়েটি নিশ্চুপ বেরিয়ে গেল মন্দির ছেড়ে আমার আগেই।
গেটের বাইরে এসে দেখলাম সে দ্রুত হাঁটছে আমার পথে। আমি দাঁড়ালাম রিকশার অপেক্ষায়
আমার রিকশা তাকে অতিক্রম করে যাবার মুহূর্তে সে আমাকে থামাল- আমার কাছে কোনো পয়সা নেই রিকশা ভাড়ার। আমি বললাম- আমার কাছে অনেক টাকা। কিছু নিয়ে চলে যাও এই রিকশায়। আমি যাব পরে
মেয়েটি উঠে এল রিকশায়- একা যেতে হলে হেঁটেই যেতাম।
কিন্তু আমি এখন তোমার জায়গায় যাব। সে পথ আমি চিনি না। তুমি চেনো সেই পথ। সেখানে সবাই তোমাকে চেনে। দেবী বলেছেন তোমাকে ভরসা করতে
মেয়েটি বসেছে বাঁয়ে।
আমাদের শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে পরস্পর। আমি অনুভব করলাম আমার হৃৎপিণ্ডও যেন কী ছুঁয়ে দিচ্ছে বারবার। কে যেন দূর থেকে ডেকে বলছে-
পয়স্তি। পয়স্তি। চর জেগেছে।
আয় দেখে যা
মেয়েটি তার মাথা নামিয়ে দিলো আমার কাঁধে। তার চোখ বন্ধ। আমার হাত জায়গা করে নিলো সুবিধামতো। আমরা মিশে গেলাম
এভাবে যাচ্ছি। হঠাৎ হার্ড ব্রেক করে থেমে গেল আমাদের রিকশা।
আশপাশ থেকে বেরিয়ে এল ক’জন যুবক। আমার পরিচিত তারা। দেখা হলে সালাম ঠুকে সিগ্রেট লুকায়।
একজন তাদের নেতা। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল- মগের মুল্লুক পেয়েছ? নাকি চলে গেছ বেহেস্তে।
হুরির কোমর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছ? নেমে আয় শুয়োরের বাচ্চা
লাফিয়ে নামলাম আমি। সে বসে আছে। আমি ওদের দিকে জোড় হাত করলাম- ক্ষমা করেন মহাজন। আমি আসোলে ভুলে গিয়েছিলাম এটা আপনাদের দেশ এবং আমার কোনো দেশ নেই। আপনারা যা ইচ্ছে করেন- শুধু আমাকে ছেড়ে দেন।
পৈত্রিক প্রাণ নিয়ে ফেরত যেতে হবে পিতার ভিটায়
তাদের একজন আমার মাথায় চাটি মারল- সাবাশ বেটা বাহাদুর শাহ্। যা তোকে ছেড়ে দিলাম। যা দৌড় লাগা। পেছনে তাকাবি না। ওয়ান- টু- থ্রি...
পেছনে একই কণ্ঠ থেকে বারবার আমার ডাকনাম ধরে ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম।
একবার মাত্র সাহস করে তাকালাম পেছনে। তারা তাকে নামাচ্ছে রিকশা থেকে। তখনও তার কণ্ঠে আমার নাম
এখন আর দৌড়াচ্ছি না। হাঁটছি। অনেক দূর চলে এসেছি।
হয়তবা গন্তব্যের কাছাকাছি। কিন্তু কোথায় যাব আমি? ভুলে গেছি। ভুলে গেছি কোথায় যাবার ডাক পেয়েছিলাম। ভুলে গেছি আমি
বসে পড়লাম। অনেক্ষণ পর।
একটা রিকশা নিলাম ফিরতি পথের। রিকশাওয়ালাকে বললাম ঘুরপথে যেতে। কিন্তু রিকশা ঘুরপথে ঢুকবার আগেই দূরে দেখলাম তাকে। সে আসছে সেই রিকশায়। আমাকে খুঁজছে চারপাশে।
যখন কাছাকাছি এসে গেল তখন আমি বৃষ্টিরোধক পলিথিন দিয়ে নিজেকে আড়াল করলাম
পাশ কেটে চলে গেল সে। তার ঠোঁটে রক্ত। শরীরে ঘাম। চোখে পানি। যে রিকশায় চড়ে সে আমাকে খুঁজছে সে রিকশার ভাড়া দেবার কথা আমার
১৯৯৪.০৯.০৪ সোমবার
................................................
উকুন বাছা দিন
প্রকাশক- শুদ্ধস্বর।
প্রচ্ছদ- শিশির ভট্টাচার্য্য। ২০০৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।