দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...
''আশ্বিন মাইয়া (মাসের) বাউরে, (বাউরী বাতাস) ও পুতরে না যাইও হাওরে''। হাওর অঞ্চলের সংগ্রামী মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই প্রবচন। এতে মা ও পুত্রের ভালোবাসার বহিপ্রকাশ ঘটলেও হাওর অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবনেরই অংশ। রাতে যখন হাওরে বাউর (বাউরি বাতাস) বয় তখন বিপন্ন হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষ। বাবা শা’জলাল-শারফিনের দোহাই দিয়ে সন্তান সন্ততি কোলে কাদে নিয়ে তারা বেড়িয়ে পড়ে ঘর থেকে।
নিজেদের বসত ভিটা রার জন্য আল্লা-রসুলের পাশাপাশি আউলিয়াদের নামেও কোরাস কণ্ঠে দোহাই দেয়। বর্ষায় হাওর ভয়ংকর বাউরে বিুব্দ সাগরের রূপ নেয়। বিুব্দ আফাল (প্রলয়ংকরী ঢেউ) আছড়ে পড়ে মানুষের বসত ভিটায়। ভেঙ্গে নেয় বসত ভিটা। দেবে যায় ঘরবাড়ি।
যুগ যুগ ধরে এভাবেই হাওরের বাউরের সাথে যুদ্ধ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষ।
বর্ষায় সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত প্রায় শহস্রাধিক গ্রামের লোকজন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিগত সময়ের প্রলয়ংকরী বন্যায় প্রায় শতাধিক গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। বিভক্ত হয়ে গেছে অর্ধ শতাধিক গ্রাম। ১৯৮৮ সালের বন্যায় তাহিরপুর উপজেলার দণি শ্রীপুর ইউপির মারালা গ্রামটি হাওরের ঢেউয়ে ভেঙ্গে তিন খন্ড হয়ে গেছে।
বাউরে ভিটা ভেঙ্গে যাওয়ায় গ্রামটি বর্তমানে ছোট হয়ে তিন খন্ড হয়ে গেছে। এই সময় গ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার ভিটামাটি হারিয়ে অন্যত্র সরে গেছে। পার্শবতী মদক গ্রামটিও চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে। মদন গ্রামটি কেবল স্মৃতিতেই বেচে আঁছে। চলতি বন্যায়ও তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা, শাল্লা, দিরাই উপজেলার প্রায় সহশ্রাধিক কাচাঘরবাড়ি ও ভিটা তিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের হাওরপাড়েরর মানুষের কাচা ঘরবাড়ি প্রায় নব্বই ভাগ। বর্ষায় অধিকাংশ কাচা ঘরবাড়িই তিগ্রস্ত হয়। হাওরের বাউরে ভেঙ্গে নেয়। আবার পানি কমার সাথে সাথে দুর্ভোগে পড়ে লোকজন। তখন পানির টানের সাথে ঘরবাড়িও নিচে নেমে যায়।
অনেকেরই কাচা ঘরবাড়ি তখন ভেঙ্গে পড়ে। এবারের বন্যায় তাহিরপুর উপজেলার ছিলাইন, জয়পুর, গোলাবাড়িসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শতাধিক কাচা ঘরবাড়ি ভিটাসহ ব্যাপক তিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ফুলভরি, বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়িও তি গ্রস্ত হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার মশলঘাট, বেহেলি গ্রামেরও অনেক কাচা ঘরবাড়ি তিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষায় এভাবে হাওরের বাউরে হাওর এলাকার কাচা ঘরবাড়ি বসতভিটা বিলীন হলেও এ গুলো রার জন্য সরকারের প থেকে কোনও উদ্যোগ নেয়া হযনি।
তবে স¤প্রতি কয়েকটি এনজিও ফাড প্রটেকশন প্রজেক্টের মাধ্যমে হাওর পাড়ের গ্রাম গুলোকে বাউরের কবল থেকে রার জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বম্বরপুর, শাল্লা ও জামালগঞ্জের কিছু এলাকার গ্রাম গুলোকে এই প্রজেক্টের আওতায় এনে ইট দিয়ে বেষ্টনী দেয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় গ্রামের চতুরদিকে বৃ লাগানো হয়েছে।
জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার মশলঘাট গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক ছুরত জামান বলেন, ইবার বন্যায় আমরার গ্রামে খতি অইছে বেশি। আমার ঘরে ইটের গাথনি ছিল।
ইবারের বাউরে আমার ইটের গাথনিও ভেঙ্গে গেছে। মারালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক কামাল উদ্দিন বলেন, এখন অল্প বাউরেই গ্রাম গুলো তিগ্রস্থ হয়। কারণ বাড়ির ইড়ে (আঙ্গিনায়) বিভিন্ন প্রজাতির বন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন বেড়া দেয়ার জন্যও বন মিলেনা। আগে হাওরে প্রচুর বন থাকলেও বিলের ইজারাদাররা অবাধে কেটে উজার করে ফেলছে।
ওই গ্রামের কৃষক হারিছ আলী বলেন, বাউরের তান্ডবে প্রতি বছর তার বাড়ি ভেঙ্গে যায়। প্রতি বছর আবার মাটি কেটে ভিটা তৈরী করেন। এভাবেই তিনি সংগ্রাম করে বেচে আছেন। একারণেই হাওরপাড়ের গ্রাম গুলো দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। বসতভিটা হারানো লোকজন শহরের বস্তিতে এসে ঠাই নেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।