আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বয়সের অসুখের কালে বালকেরা

কাগু ক্যান স্টার্ট অ্যা ফায়ার ইউজিং জাস্ট টু আইস কিউবস

বালকের মুখে বয়ঃসন্ধিক্ষণের ব্রনের নির্মম চাষাবাদ । নাকের নীচে দিন দিন গাঢ় হওয়া গোঁফরেখা । অবরুদ্ধ শহরের ভোরের আপাত সুখকর বাতাসেও তার অন্তঃর্গত শূণ্যতায় তেমন কোনো পরিবর্তন নাই । প্রতিক্ষা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরীর জন্য । কিছুক্ষণ পরেই যে নীল জামা পরে পেটের উপর বইয়ের ব্যাগটাকে ধরে, বালকের হৃদপিন্ডটাকে ছুরি দিয়ে খুলে নিয়ে লাথি মারতে মারতে স্কুলে যাবে ।

প্রতিদিনই সে এমন যায় । বালকের মর্ষকামিতা অথবা ভালোবাসা তাকে আবার পরবর্তী ভোরে নিয়ে আসে । আজ সাথে ইলিয়াসও থাকে । ইলিয়াস, একই বয়সী, অতএব ভোরের মিছিলের নাম-না-জানা, অন্য-কোন-বিবরণ-না-জানা একটি বালিকার প্রেম প্রত্যাশী, অবশ্যম্ভাবীভাবে । সাথে সাথে বালকের মত একই শূণ্যতার আধার ।

হয়ত সেটাই দূজনকে আরো কাছে টেনে আনে । আবেগের ভাষারুপ শোনাবার মত বন্ধু সহজে হয় না । কমলা জামা পড়ে, পিঠে ব্যাগ, মাথার দুপাশে বেণী ঝুলিয়ে সুবর্ণা যায় । নাম জানে না বলে বালকেরা তাকে এ নামে ডাকে । সুবর্ণা সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরীর মত অত নির্দয় না ।

চোখের দুয়েকটি ইশারা, ঠোট বাকানো, ইলিয়াসের মনে আশা জাগায় । সে বালকের কাছে তার দিবাস্বপ্ন বর্ণনা করে যেতে থাকে । ইলিয়াসের বাবা নাই । মারা যায়নি, তবে অন্য বউয়ের সাথে অন্য জায়গায় থাকে । ইলিয়াসের ভাইরা মিলে প্রতিটি তুচ্ছ ব্যবসা করে, প্রতিটি জানা লাঞ্ছনা সহ্য করে এখন কিছুটা সচ্ছল ।

তাই বয়সের তুলনায় ইলিয়াস হাস্যকরভাবে নিচের ক্লাসে পড়ে । এমনকি অপমানকরভাবে-বালকের মতে -সুবর্ণারও ২ ক্লাস নীচে । এইসব ভাবতে ভাবতে, ইলিয়াসের সৌভাগ্যে , বালকের ঈর্ষা কেটে যায় । বরং একটি মহামানবীয় মমতা আসে । কাল্লু বা কালু বা কালা মনিরা বা মনির আসে ফুটবল নিয়ে ।

সাথে সাথে আসে হইহই বালকদের একটি দল । ফেরার পথে কালু সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরীর খবর জানতে চায় । তার দেমাগ বেশী । তার আশা ছেড়ে দেয়াই বালকের জন্য সঠিক হবে বলে উপদেশ দেয় । কালু সম্প্রতি ছ্যাঁকা খাওয়া ।

ঠিক ছ্যাঁকা নয় । টাইট খাওয়া বলা যায় । গোবেচারা ধরণের একটা স্কুল বালিকাকে, যাকে বহুদিন নিজস্ব বেওয়ারিশ ভাবনায় ভালোবেসে এসেছে কালু, রাস্তায় থামিয়ে কয়েকটি কথা বলতে চেয়ছিল সে । মেয়েটি ভয় পেয়ে চলে যায় । পরদিন তার বাবা এসে কালুকে যা বলার বলে গেছে ।

তারপর থেকেই কালু একই উপদেশ সব বালককে দিয়ে বেড়াচ্ছে । সর্বশ্রষ্ঠ সুন্দরীর ফেরার পথে দাঁড়িয়ে কালু আর বালক । ইলিয়াস গেছে সুবর্ণার সাথে আরো দুএকটি দৃষ্টিবিনিময়ের আশায় । কালু আজ জেদ ধরে সুন্দরীর সাথে বালককে কথা বলতেই হবে । কত আর একা একা কষ্ট পাওয়া।

যদিও সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরীকে দেখার সাথে সাথেই বালকের তলপেটে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়, তবু কালুর চাপাচাপিতে, বলহীন হাঁটু, তলপেটে ছুরির ঘায়ের মত ব্যাথা আর বুকে হাতুড়ি পেটা নিয়ে তার সামনে দাঁড়ায় বালক । এএএকটু শুনবা ? এতটাই দুর্বল ছিল যে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা কালুই বেকুবের মত জিজ্ঞেস করে , কি । না, আপনার কথা কি শুনবো । সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেন । বিকালে ডেঙু বা সাইদুল ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করতে যায় বালক ।

বালকের দৃষ্টিতে চার পাঁচটি বছর আগে পৃথিবীতে আসা ডেঙুই বলতে পারে ভালোবাসার সব গোপন রহস্য । হুমমমমম, তোমাকে সে খেয়াল করেছে, সারাদিন যে রাস্তায় রাস্তায় থাকো, এটা নিয়ে সে নিশ্চয়ই টুকটাক দুঃশ্চিন্তাও করে । তোমার আশা আছে । পরদিন সকালে সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী বাঁকা চোখে বালকের দিকে একটু তাকিয়ে যায় । আবার ফিরতি পথেই পাথরের মত মুখ করে নির্লিপ্তভাবে চলে যায় ।

বালক বুঝে উঠে না কোনো কিছুই । তার শূণ্যতা পূরণ হতে হতেও হয় না । ইলিয়াস, কালুও সাথে ছিল । তারাও তাদের নিজস্ব শূণ্যতাবোধ, বয়সের অনুভূতিসমুহের সত্য রুপ ধরে উঠতে পারে নাই । চল গোধূলিতে যাই ।

ন্যাগেট ছবি দেইখা আসি । পড়ন্ত দুপুরে ন্যাগেট ছবি দেখে তারা মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বেরিয়ে আসে । পেটে তীব্র ক্ষুধা সত্তেও তারা শীতলক্ষার তীরে যায়, নিজ নিজ ভাবনাগুলোকে একটু আনমনে আলতো ছুঁয়ে দেখার জন্য । সূর্যাস্তের অনেক কাছাকাছি সময় পর্যন্ত নদীতীরে বসে থাকে তিনজন দার্শনিক ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.