যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রহস্যময় সংখ্যা ১৯ এবং ১৯৬ অ্যালগরিদম- এই বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত ৩টি পোস্ট দিয়েছি। লেখাটি পাঠে কিছু ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। আপাতদৃষ্টিতে সংখ্যা দুটির মধ্যে মিল এটুকুই যে, দুটি সংখ্যাই রহস্যময় সংখ্যা।
একটি হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা ঘোষিত এবং অপরটি গণিতজ্ঞ ঘোষিত।
১৯ সংখ্যাটি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ড. রাশাদ খালীফ ছাড়াও অনেকে এই রহস্যময় সংখ্যাটি নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন এবং এখনও করছেন। নাইনটিন নাম্বার ইন দ্যা কোরআন লিখে ইন্টারনেট সার্চ দিলে এ সংক্রান্ত অনেক তথ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে।
ড. রাশাদ খালীফ ১৯ সংখ্যাটি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে পুরো কোরআনটাকেই ১৯ এর ছকে আবদ্ধ করে ফেলতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু কোরআন হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর নিকট থেকে প্রেরিত গ্রন্থ। এর রহস্য যদি পুরোটাই উন্মোচিত হয়ে যায়, তাহলে শান্তির ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। পুরো কোরআনটা যদি মাতৃভাষা বাংলায় পাঠ করে ফেলা যায় তাহলে বোঝা যাবে- কী সহজ ভাষায় মানুষকে পথ নির্দেশ করে দেওয়া হয়েছে।
১৯৬ সংখ্যাটি গণিতজ্ঞদের কাছে আরেকটি রহস্যময় সংখ্যা। এর প্যালিনড্রোমিক হচ্ছে না।
অর্থাৎ সংখ্যাটিকে উল্টিয়ে লিখে মূল সংখ্যার সাথে যোগ করলে এটি একসময় বিশেষ আরেকটি সংখ্যায় পরিণত হবেই- এই বৈশিষ্ট্য দেখাচ্ছে না। প্যালিনড্রোমিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্য এটি যে, সংখ্যাটি উল্টোদিক থেকে পড়লেও একই হবে। যেমন- ৪৫৪, ৮৪৪৮ ইত্যাদি। ০ থেকে আরম্ভ করে ১৯৫ পর্যন্ত সমস্ত সংখ্যাই একসময় প্যালিনড্রোমিক হয়ে যায় কিন্তু ১৯৬ প্যালিনড্রোমিক হচ্ছে না। ২৪ লক্ষ বার পুনরাবৃত্তি করেও এই সংখ্যাটির প্যালিনড্রোমিক নাম্বার পাওয়া যায় নি, যেখানে গণিতজ্ঞরা ৩০০ ধাপের মধ্যেই ১৯ ডিজিট পর্যন্ত সমস্ত সংখ্যার প্যালিনড্রোমিক করে ফেলেছেন।
গণিতজ্ঞরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন এরকম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কতগুলো সংখ্যা আছে তা জানতে। তবে ১৯৬ হচ্ছে এরকম সমস্যা শুরু হওয়ার প্রথম পূর্ণ সংখ্যা। ওয়ান নাইনটি সিক্স প্যালিনড্রোমিক নাম্বার লিখে গুগুলে সার্চ দিলে এরকম অসংখ্যা তথ্য পাওয়া যাবে, তাই এখানে এগুলো লিখে পাতা ভরালাম না।
কোরআনে বর্ণিত ১৯ এবং ১৯৬ সংখ্যাটিকে মিল ঘটানোর চেষ্টা করা নয়, বরং সংখ্যা দুটোর রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করাটাই আমার এই লেখার মূল বিষয় বস্তু।
আমার লেখাটি পাঠে অনেকে বলেছেন, সংখ্যাতাত্ত্বিক যুক্তিতে এরকম মিল অনেক ঘটতে পারে।
অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনে, অনেক ঐতিহাসিক ঘটনায় এরকম অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।
একশ ভাগ সত্য কথা। কোরআনের সাথেও ১৯ সংখ্যাটির অনেক মিল আছে। ড. রাশাদ খালীফ নিজেকে আল্লাহর মেসেঞ্জার দাবি করেছেন বলে তাঁর ১৯ নিয়ে গবেষণার সবকিছুই যে বাতিল তা কিন্তু নয়। তিনি কোরআনের প্রতিটি আয়াত এবং বর্ণকেও ১৯ দিয়ে ছন্দোবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন বলে প্রধান অভিযোগ।
১৯৯০ সালে আততায়ীর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়ে তিনি তার প্রায়াশ্চিত্যই করেছেন বলা যায়।
ইসলামী চিন্তাবিদেরা কোরআন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দেখতে পাচ্ছেন কোরআনের মধ্যেই বিজ্ঞান অর্থাৎ বিজ্ঞানময় কোরআন। ড.মরিস বুকাইলির 'বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান' পড়ার সুযোগ ঘটেছিল অনেক আগে। বইটিতে তিনি কোরআনকে বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে যৌক্তিক ব্যাখ্যা।
আবার 'আরজ আলী মাতুব্বরের' লেখা ও পাঠ করেছি। মনে হয়েছে যৌক্তিক লেখা। এখন বাংলায় কোরআন পাঠ করে দেখছি ঐসমস্ত যৌক্তিকতার বাইরে সমাধানমূলক একটি সংবিধান- আল্লাহর এই প্রেরিত গ্রন্থ।
আমার শিরোনামোক্ত লেখাটির প্রসঙ্গে আসি। ১৯ এবং ১৯৬ স্যংখ্যাটির মিল দেখাতে গিয়ে বুঝাতে চাচ্ছি গণিতের এই দুটো পূর্ণ সংখ্যা খুবই রহস্যময়।
এই রহস্যময়তা ভেদ করতে গেলে একদিক দিয়ে গণিত এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা খুবই বাড়বে এবং ইসলাম ধর্মের শান্তির বাণীও মানুষের মধ্যে দৃঢ় হবে।
আরও অনেক যুক্তি দিয়ে লেখাটিকে আরও দীর্ঘ করা যায়। কিন্তু আমার এই লেখাটি আসলে ধর্মীয় বিতর্কের বাইরে অন্য একটি বিষয় নিয়ে একান্তই আমার ভাবনা। তাই দীর্ঘায়িত করবো না।
আমাদের পাঠ্য ব্যবস্থায় ধর্ম বিষয়ক যে বইগুলো আছে তাতে ইসলাম ধর্মের ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরা।
এগুলো পাঠে আধুনিক চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ না হয়ে শিক্ষার্থীরা মধ্যযুগীয় চেতনায় দীক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে মাদ্রাসাগুলোতে যে পাঠ্য ব্যবস্থা আছে তাতে আমাদের দেশে জঙ্গীবাদ উৎসাহিত হচ্ছে। বিজ্ঞানময় কোরআন এবং রহস্যময় গণিতকে ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে।
আমাদের দেশ থেকে বিজ্ঞান শিক্ষা ব্যবস্থাটা উঠে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিসংখ্যান নিলে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের যে হতাশাজনক চিত্র দেখা যায়- তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।
আমার এই পোস্টটিসহ পূর্বের তিনটি পোস্ট একত্রে মিলিয়ে পড়লে আমার পুরো লেখাটির উদ্দেশ্য পরিস্কার হবে বলে আমি আশা করি।
(সমাপ্ত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।