মানুষের সৃষ্টির সেরা হবার জন্য যে গুনাবলীগুলো প্রয়োজন তার অন্যতম আরেকটি হলো কৃতজ্ঞতাবোধ। এই কৃতজ্ঞতাবোধকে আমরা কোন কিছু প্রাপ্তির প্রতি আমাদের মনযোগ দেয় হিসাবে বুঝাতে পারি। আমরা জীবনে কত কিছুই তো পাই, তার কয়টা বিষয়ের হিসাব রাখি বলতে পারেন? না, আমরা আসলে যা পাইনি বা পাচ্ছি না তাই নিয়েই বেশী ব্যস্ত। যে কারনে আসলে আমাদের সমস্যাও যায় না আর না পাওয়ার রাস্তাও ফুরায় না। শুধু চিন্তা করেন যে আজ কি কি না পাওয়া নিয়ে সারাদিন মন খারাপ করেছেন।
অনেক লিস্ট তৈরী করতে পারবেন। কিন্তু আপনি কি কি পেয়েছেন তার কি কোন চিন্তা করে দেখেছেন? সারাদিন কি না খেয়ে কাটিয়েছেন? সেহরী করেছেন, ইফতার করেছেন রাতের খাবার খাচ্ছেন। আবার জামাকাপড় পরে বাইরেও গিয়েছেন। তাহলে এই যে জিনিসগুলো আমরা পেলাম তা নিয়ে কি ভেবেছি যে এগুলো কিভাবে এলো কোথা থেকে এলো? এই চিন্তাটাই আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে শিখাতে পারে। এটাই শুকরিয়ার প্রথম ধাপ।
আর এভাবে ভাবতে পারলে কিন্তু আমাদের অনেক অভাবই থাকবে না তা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
সাধারনভাবে আমরা কিন্তু কেউ কিছু দিলে বা কিছু করে দিলে তাকে ধন্যবাদ দেই। থ্যাঙ্কস দেই। কৃতজ্ঞে অনেক সময় গদগদ হয়ে যাই। আর যিনি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন, আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি আমাদের আচরন কি? আমরা কেন তার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে ভুলে যাই বলতে পারেন? কারন তিনি যে দিচ্ছেন তা আসলে আমরা অনুভব করতে পারিনা বা চেষ্টা করি না।
আচ্ছা আমাদের বস্তুগত চাহিদার কথা বাদ দেন, অনেকে বলতে পারেন যে এটা আমার উপার্জন। আমরা জীবনে বেচে থাকার জন্য কি কি জিনিস ফ্রি পাচ্ছি বলতে পারেন? হিসাব করুন:
বাতাস
পানি
প্রকৃতি
রোদ
বৃষ্টি
......ইত্যাদী ।
এগুলো কে দিয়েছে? অবশ্যই আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। কারন কোন মানুষকে আমরা এগুলো বানাতে দেখিনি। এগুলোর জন্য কি আমরা কখনো সজ্ঞান কৃতজ্ঞ হই? - তোমাকে ধন্যবাদ হে আল্লাহ, এই কথাটি কি আমরা অন্তর থেকে বলতে পারি? যারা পারিনা তারা একবার বলে দেখবেন কি? আপনার অনুভব নি:সন্দেহে নতুন রূপ লাভ করবে।
আপনি বিনিময়ে পাবেন প্রশান্তি ও আনন্দ। যে আমাকে ভাল কিছু করে দিল তাকে যদি আমরা ধন্যবাদ জানাতে থাকি তাহলে তিনি আমার আরো ভাল করার চেষ্টা করবেন। তাহলে স্রষ্টার প্রতি প্রতি মুহুর্তে কৃতজ্ঞ হলে তিনি কি আমাদেরকে আরো বেশী দেবেন না? তার তো কোন অভাব নেই। আসলে পাওয়ার সূত্রটাই এখানে। শুকরিয়ার জীবন হচ্ছে প্রাচুর্যবান জীবন।
শুকরিয়া করলে আমরা কি কি পেতে পারি। কয়েকটি নিম্নরূপ:
১। প্রশান্তি , কারন আপনি যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট।
২। প্রাচুর্য, কারন আপনি যা আছে তাকে স্বীকার করে আরো পাওয়ার পথ প্রশস্ত করেছেন।
৩। সাফল্য , কারন শুকরিয়া আদায় করার মাধ্যমে আপনি সাফল্যের সূত্রে প্রবেশ করেছেন।
তাহলে আমরা কি করতে পারি?
১। আমরা আমাদের সকালটা শুরু করতে পারি শুকরিয়া দিয়ে। ঘুম থেকে উঠেই বলুন - শোকর আলহামদুলিল্লাহ, চমৎকার একটা দিন।
২। জীবনে আমরা কি কি পেয়েছি তার একটা লিস্ট তৈরী করুন। প্রতিটা বিষয়ে আলাদা শুকরিয়া জানান। এভাবে প্রতি মাসে , প্রতি সপ্তাহে আমরা আমাদের প্রাপ্তি লিপিবদ্ধ করতে পারি।
৩।
আমার চেয়ে যে খারাপ আছে তার দিকে তাকাই- আমিতো তার অবস্থায় থাকতে পারতাম। সুতারং আমার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিৎ।
আসলে নিজেকে স্বীকার করতে হলে আপনাকে কৃতজ্ঞ হতে হবে। তাহলেই নিজের সত্যিকারের অস্তিত্বকে অনুভব করতে পারবেন।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরানে বলেছেন:
তোমার রব ঘোষনা করেন, কৃতজ্ঞ হইলে অধিক দিব, আর অকৃতজ্ঞ হইলে আমার শাস্তি হইবে কঠিন---সূরা ইবরাহীম:৯
তিনি আরো বলেন:
তাহাকে পথ দেখাইয়াছি , হয় কৃতজ্ঞ হও, নয় অকৃতজ্ঞ--- সূরা আদ দাহর:৩
আসুন এই রমজান মাসে শুধু উপবাস নয়, নিজেকে অনন্য হিসাবে গড়ে তোলার ট্রেনিং হিসাব শোকর প্রাকটিস করি, শোকরগোজার বা কৃতজ্ঞ হওয়ার চেষ্টা করি, প্রশান্ত থাকি।
ধন্যবাদ, আগামীকাল আবার দেখা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।