পারলৌকিক হ্যাঙ্গারে হ্যাঙ্গ হয়ে আছে ইহকাল / পুনরায় জন্ম নেয়া এখন বিশেষ প্রয়োজন
ওদের মোনাজাতের প্রক্রিয়াটা বিরক্তিকর।
রাত প্রায় আটটা। তবু লোক কম হয়নি। সবাই মোনাজাত পজিশনে দুই হাত তুলে আছে শূন্যে। কারো কারো হাত শরীর থেকে বেশ দূরে, কারো কারো বুকের সাথে লাগানো।
অদৃশ্য শক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে ওদের প্রতিটি বাক্য। ওদের নেতা লোকটার দাড়ি সবার চে' বড়, যিনি উৎকোচ গ্রহণের সময় অদৃশ্য শক্তির ধার ধারেন না, মুখের উপর চেয়ে বসেন বেশরমের মতো---সে বেশ শব্দ করে মোনাজাতের বাণী আউরে চলেছে। এখন রাত। ভয় নামক অনুভূতিটি সবার ভেতরেই সক্রিয় কমবেশি। সবাই আমিন বলছে একসাথে
: হে পারওয়ারদেগার
তুমি এই মুর্দাকে বেহেশতে নসিব করো।
: আমিন
প্রায় আধ ঘন্টা যাবত শূন্যে তোলা দুই হাতে অদৃশ্য যতটুকু প্রাপ্তি সবটুকু মুখমণ্ডলে লেপ্টে নিলো সবাই।
সাথে সাথেই ধপ।
জ্বি না, মুর্দার কোনো শব্দ না। লাফ দিয়েছে অন্য এক ব্যক্তি।
আচ্ছা পাঠক আপনি কি তাকে জিজ্ঞেস করবেন সে কেনো লাফ দিলো! আপনার কী মনে হয়—রাত সাড়ে আটটায় লাশ দাফন শেষে একজন হঠাৎ কেনো লাফ দেবে ঠিক কবরের উপরে? আসলে কি সে লাফ দিয়েছে নাকি কেউ কৌতুক করে তাকে আলতো ঠেলায় ফেলে দিয়েছে? অথবা ধরুন সে আগেই কারো সাথে বাজি ধরেছিলো, মোনাজাতের পর কবরের উপর লাফিয়ে নামতে পারলে ১০০ টাকা।
বদ পোলাপান থাকে না কিছু? পাঠক আপনি কি এ প্রস্তাবে রাজি হতেন?
সবাই ঘুরে তাকিয়ে রইলো। লোকটি স্যাণ্ডেলের উপর দাঁড়িয়ে মোনাজাত করছিলো। মোনাজাত শেষে তার স্যাণ্ডেলটি লাফ দিয়েছে/ সে ফেলে দিয়েছে/ অন্য কারো পায়ের আঘাতে পড়ে গেছে। এবং স্যাণ্ডেলের সাথে সাথে সেও লাফ দিয়েছে/.../... ?
মনে হয় না। সে স্যাণ্ডেলটা পায়ে লাগিয়ে উপরে উঠে এলো।
এবং সবার সাথে হাটা শুরু করলো।
পাঠক, এই ব্যক্তিকে কি আপনার রহস্যময় মনে হচ্ছে? এই ব্যক্তি কি এমন কিছু ঘটাবে যা মাঝে মাঝেই বা প্রায়ই হরর মুভিতে দেখা যায়? বাঙলাদেশের মতো একটি দেশে রাত সাড়ে আটটায় গোরস্থানে লাশ দাফনের পর কী হতে পারে?
লাশ নিশ্চয়ই বলবে না, 'ইসকিউষ মি, যে ভদ্রলোক লাফ দিয়েছিলো সে ই আসলে আমার জায়গায় থাকার কথা, আপনাদের ভুল হচ্ছে'। শ্রদ্ধেয় পাঠক, আপনি বিরক্ত না হয়ে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন। সবাই গোরস্থানের গেট থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে বের হলোনা।
গোরস্থান প্রহরীর টুলে বসে স্যাণ্ডেলের ফিতা ঠিক করা শুরু করলো। সবাই চল্লিশ কদম যাওয়ার আগেতো সওয়াল-জপ শুরু হচ্ছে না। এজন্যই সে চল্লিশ কদম যেতে চায়না। সে চায়না এতো তারাতারি মুর্দাটিকে সওয়াল-জপ ফেস্ করতে হোক।
প্রহরী ঘুমিয়ে পড়েছে।
তার নামমাত্র প্রহরায় গোরস্থানের লাশেরাও সন্তুষ্ট নয়। কিন্তু নিশাচর এই ব্যক্তি সন্তুষ্ট। সে সদ্য মাটির নিচে চাপা দেয়া লাশটার কথা চিন্তা করছে। লাশটা পুরুষ না মহিলা!
প্রিয় পাঠক, আপনার কি মনে হয়, লাশটি পুরুষ / মহিলা? এবারে আমি একটু সাম্প্রদায়িক হবো। পুরুষ পাঠক ধরে নিন লাশটি মহিলা এবং নারী পাঠক (পাঠিকা) ধরে নিন লাশটি পুরুষ।
তাতে কি কোনো উপকার আছে? পাঠক/পাঠিকা, আপনারা তাতে এতটুকুনও সুড়সুড়ি অনুভব করবেন? কিংবা উত্তেজনা? মৃত মানুষের ব্যাপারে সেকচুয়াল ব্যাপারগুলো গ্রহনযোগ্য নয়, তাইতো? কিংবা পুরুষ পাঠক চাইবেন লাশটি মহিলার হোক এবং নারী পাঠক চাইবেন লাশটি পুরুষের হোক? আবার নারী পাঠক চাইতে পারেন লাশটি নারীর হোক— যেহেতু আমরা লাশটির সঙ্গে কবরের উপরে দাঁড়ানো (যে কবরটি আবার খুঁড়ছে) লোকটির পুনঃসাক্ষাত হতে দেখবো; সুতরাং নারী পাঠক চাইতে পারেন মহিলার লাশ দেখে পুরুষ ব্যক্তিটির অভিব্যক্তি বা বা আনুভূতিক ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করতে। আমি চেষ্টা করবো সব রকম করে, প্রাণপ্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনি যাতে আশাহত না হন।
লোকটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে—এমন সময় বিকট শব্দে হ্যাচচো। নিশ্চিতভাবে গোড়খোদকের পরনের মালকাঁছ মারা লুঙ্গি ভীত প্রচ্ছাবে/পায়খানায় ভিজে/ কর্দমাক্ত (পায়খানাক্ত) কিংবা ধরুণ তার হার্ট দুর্বল হলে দ্বিতীয় কিস্তিতে খোঁড়া কবরে সিঙ্গেল খাটে দুজন শোবার মতো অবস্থা/পাল্টা চিৎকারে দিক-বিদিক আলোড়িত করতো এবং তার চিৎকারে গজ পাঁচেক দূরের সিমেন্টের ছোট কবরের মতো ঘরে ঘুমন্ত গোরস্থান প্রহরীর মূত্র বিসর্জনের অবস্থার সৃষ্টি হতো। যেহেতু তার হার্ট আপনার মতো শক্ত/আপনার মতো দুর্বল নয় তাই শুধুমাত্র বিড়িবিড় খিস্তিখেউর..দাঁত মুখ খিচিমিচি করে মাফ করে দিলো।
এবং কোদাল তুলে শাসাতেও ছাড়লো না। পেঁচা বেচারা তাকে চমকে দিয়ে এতটুকুও লজ্জিত কি না কে জানে।
লোকটা বাঁশগুলো সুচারুরুপে সরালো; তারপর চাটাই। সে চোখে হয়তো ভুলই দেখলো। লাশটা চিৎ থেকে ভুট হয়ে শুলো (ভদ্রলোক জানাযায় আসার আগে গঞ্জিকা সেবন করে এসেছিলেন যার মাত্রা ছিলো প্রায় ৩ পোটলা)।
এত সে কিছুটা বিরক্ত। লাশ কেনো নড়াচড়া করবে! বলুন পাঠক, তার জায়গায় আপনি হলে কি বিরক্ত হতেন না? লোকটির ইচ্ছে হলো কষে একটা থাপ্পড় লাগাতে—মুরুব্বি হোক আর যাই হোক; অভদ্র কোথাকার! কবরে শুলে পাশ ফেরা এবং চিৎ-ভুট হওয়া নিষেধ এটাও জানেনা। প্রথম তো! তার ক্ষীণ সন্দেহ হলো। লাশটি নিশ্চয়ই নারী। তাই ভুট হয়েছে, যেহেতু সে বেগানা পুরুষ---লজ্জা পেয়েছে।
পাঠক, অনুমান কতটুকু সঠিক? ভাবুন।
(খুব একটা দামি কাপড় না----
বড় জোড় দশ টাকা গজ)
লাশটার মাথা এবং পায়ের দিকের মোড়ানো কাপড়টুকু আলগা করে সে আস্তে আস্তে ছাড়িয়ে নিতে লাগলো। অল্প বাকী থাকতে এক ঝটকায় টান দিতেই লাশটা যেমন চিৎ করা ছিলো তেমন চিৎ হয়ে গেল। এবং কাপড়ের একটা অংশ পিঠের নিচে পড়লো। পিঠের নিচের অংশটুকু হাত দিয়ে সরাতে গিয়ে লাশটির স্তনে মৃদু ছোঁয়া লাগলো তার।
লোকটার বুকের ভেতরটা ধঢ়াশ করে উঠলো। সামান্য গরম। লাশের গা সামান্য গরম। লোকটা চেষ্টা করলো শরীরটার দিকে না তাকাতে। তরুণী/যুবতী/মধ্যবয়স্কা সেটা দেখার সময় বা মুনাফা কোনোটিই নেই।
তাছাড়া এরকম বহু গল্প সে মনে মনে পোষন করে। লাশটি যদি এই নির্জন রাতে কোনো প্রকার আবদার করে বসে তবে তার কাল্পনিক অনুভূতিগুলোর অন্তত একটা সত্য হবে। সে ঝটপট চাটাই এবং বাঁশগুলো আগের মতো করে রেখে দিলো। মাটি চাপা দিলো ঠিক আগের অবস্থায়। এখন সে একা—নিশ্চয়ই মোনাজাত করার প্রয়োজন নাই? তবু সে কবরটা জিয়ারত্ করলো এবং মোনাজাত করলো।
: হে পারওয়ারদেগার
তুমি এই মুর্দাকে বেহেশতে নসিব করো।
: আমিন
ওহ্হো! পাঠক, আপনাকেতো বলাই হলোনা। এই ব্যক্তিটি হলো একজন ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ি। তার হাতের ঐ কাপড়টুকু সে বিক্রি করবে---দরজি/কাপড়ের দোকানদার/কাপড় ফেরীকারী মহিলা /পুনঃদাফন কাজে। ঐ কাপড়টুকু দিয়ে তৈরি হতে পারে কোনো দরিদ্র নারীর ব্লাউজ বা সায়া।
একজন দরিদ্র মানুষের দ্বারা উপকৃত হবে আর একজন দরিদ্র মানুষ।
সে ক্ষুধার্ত মানুষ। এছাড়া তাঁর আর কোনো ক্ষুদ্রতা নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।