যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
এই শহরের ফ্রস্টেড রঙের আকাশকে কখোনোই নীল দেখায় না। আজো দেখেচ্ছে না। বিকেল চারটে। তার পরও মনে হচ্ছে দুপুর বারটা। পিচ গলতে শুরু করেছে।
গাড়ির চাকায় চচড়ে আওয়াজ। মানুষগুলোকে মনে হচ্ছে পিপাসাকাতর মুরগীর মত। কোত্ কোত্ করছে, কিন্তু গলা ভিজছে না। একটা কুকুর শশা বেচা দোকানের কাছে এসে পানি খাওয়ার চেষ্টা করতেই পাঁজড় বরাবর লাথি খেয়ে কোঁ কোঁ করতে করতে চলে গেল। দুটো রিক্সা স্পোক বাঁধিয়ে খিস্তি।
তিননম্বরটা এসে ডবল খিস্তি। বয়ষ্ক এক মহিলা চলন্ত বাসে ওঠার চেষ্টায় পড়ে গেল ছেঁচড়ে। একটা খোঁচরের গাড়ি খামোখা সাইরেণ বাঁজিয়ে ছুটে গেল । হাঁটার গতিতেই যাওয়াকে ছুঁটে যাওয়া বলতে হবে। দূরে একজন হলুদ সার্জেন্ট বাইকঅলার সাথে দেন-দরবার করছে।
আবারো চার-পাঁচটা রিক্সা জট পাকিয়ে গেল। জামসেদের আর সহ্য হলো না। বুটের এ্যাঙ্কেল থেকে ভ্রমরটা বের করে ঠান্ডা মাথায় এগিয়ে প্রথম রিক্সাটার চাকায় সেঁধিয়ে দিল ভ্রমরটা।
প্রথম প্রথম জামসেদ নিচু হয়ে হাওয়া ছেড়ে দিত, অথবা নজেল খুলে নিত। ওর ধারণা বাঞ্চোত্ গুলো খানিক দূরে গিয়েই নজেল কিনে লাগিয়ে নেয়।
এখন ভ্রমর থেরাপি! নো চুদুরবুদুর। মিনিমাম ঘন্টাদুয়েকের কামাইয়ের পোঁদ মেরে দিলাম! মনে মনে তৃপ্তিও পেল জামসেদ। খানিক বাদে এক ধুড়মার্কা মালকে দেখল বাইকের পেছনে মাল নিয়ে ক্যালাতে ক্যালাতে যাচ্ছে। জামসেদ সামনে গিয়েই ঘাপ।
-হেলমেট কই? দেখি কাগজ?
ধুড়মার্কা মালটা কান পর্যন্ত কেলিয়ে-ভাই কাগজ ভুল করে.......
-লাইসেন্স? -
-আছে, মানে ঠিক এখন কাছে...
-কেস হবে।
তিনটা ফল্ট। মিনিমাম নয়শ' যাবে...
ধুড় কেবল পেছনে হাত দিয়েছে,অমনি রাস্তার ওপার থেকে সার্জেন্ট এসে হাজির।
-যা: বাল ! সারাদিন পর যাও একটা মক্কেল জোটালাম তাও মারানির পুতের সহ্য হলো না ?
জামসেদের এই বায়োস্কোপ নিত্যদিনের। মে মাসের প্রথম দ্বিতীয়,তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহ জুড়েই। চলছে।
শুধু সময় আর লোকজন বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে খিস্তি দেওয়ার ধরণ আর খিস্তির রকম। যেমন আজ সকালে যখন মেজাজ তেতে ওঠে নি ঠিক সেই সময়ে একটা প্রাইভেট একটা হোন্ডাকে(বাইকের ব্র্যান্ড যা-ই হোক) ল্যাটকা মেরে ফেলে দিল। খুশীতে চনমন করে উঠল জামসেদের মুখ-ঘাড়-মাথা সব। লাফ দিয়ে একটানে প্রাইভেটের দরজা খুলে জেল দেওয়া মাথা টেনে বের করে আনল...
-কাগজ?
-লাইসেন্স?
-ইনস্যুরেন্স?
জেলমাথা ধীরে সুস্থে একটা কার্ড বের করল।
সাথে সাথে
জামসেদের ঐটা ছোট্ট হয়ে ভেতরে ঢুকে গেল।
জামসেদের দশ-পনের মিনিট আগেই মুতা থাকলেও আবার মুত পেল। দুএক ফোঁটা বেরিয়েও গেল। এই এক জ্বালা ! শালার ভয় পেলেই মুত আসে! কেন অন্য কিছু আসতে পারে না?
জামসেদের পুরো প্যান্ট ভেজার আগেই জেলমাথা গাড়ির ভেতর অদৃশ্য হলো। পরক্ষণে গাড়ি অদৃশ্য হলো।
হাফ ছেড়ে রুমাল বের করবে, এমন সময় দেখল এক বুড়ো রিক্সাঅলা স্পিন্ডেলে বাঁধিয়ে আর এক প্রাইভেটের এমাথা ওমাথা ফর্দিফাই করে দিয়েছে। ক্ষাণিক আগের মুতে দেওয়া জামসেদ এ্যাকশনে...।
লাফ। পেছনের চাকা। দুটো ফুঁটো।
তিনবার চুত্মারানি। চারবার শালারপো। পাঁচবার পোঁদের মধ্যে এটা ওটা দিয়ে দেবার ইচ্ছা,কিন্তু না দিয়ে উদারতা প্রকাশ।
জামসেদের বউটার বাচ্চা হবে। নয় মাস।
জামসেদ রোজই এটা ওটা আনে। প্রথম বাচ্চা। ও চায় বউটা যেন ভালমন্দ খেয়েদেয়ে একটা বড়সড় বাচ্চা দিক। ওর মত তালপাতার সেপাই যেন না হয়। গা গতরে একটু মাংশ থাকলে আর একটু লেখাপড়া জানা থাকলে কি ট্রাফিক হতো? হতো হলুদ জ্যাকেটের সার্জেন্ট।
আজ জামসেদ বউয়ের জন্য ডাব এনেছে।
-ডাব খা,ঐসব বালছাল কোকফোক না খেয়ে ডাব খা। মুখকাটা ডাব ফুটো করার কিছু না পেয়ে সেই ভ্রমরটা দিয়েই ডাব ফুটো করে বউকে দেয়। ভ্রমর দেখে আবার বউ বলে-
-রিক্সার চাকা ফুটা না কইরা .......
-আবার সেই বালের কথা ?তরে না কইছি মরদ মাইনষের চাকরি নিয়া কথা কবি না?
বউটা কথা বাড়ায় না।
মাসখানেক পর।
এক গুমোট রাত। গাছের পাতা নড়ে না। দর দর করে ঘামছে মানুষ। সন্ধ্যের দিকেই যে যার ঘরে ফিরছে। কানাঘুষো হচ্ছে আজ রাতে কারফিউ দেবে।
ভার্সিটির লাফাঙ্গার গুলা নাকি খেলা দেহার সময় কাগো লগে ঝামেলা পাকাইছে। হেই নিয়া প্যাঁচাল,তারপর বাল। এ দেশের কিচ্ছু হবে না সেই কথাটা আবারো ডজনখানেক গালি সহ ডেলিভারি দেয় । দেশের কিছু হোক না হোক ওর বউয়ের যে কিছু হবে সেটা ও বোঝেনি। রাত বারটার দিকে ওর বউয়ের ব্যাথা ওঠে।
মনে মনে বিরক্ত হয় ও,
ব্যাথা ওঠার আর দিন পেল না?রাত একটা-দেড়টার দিকে ব্যাথা প্রবল হতে থাকে। শশব্যস্ত জামসেদ পাড়ার শেষ মাথার বস্তি থেকে সলেমান রিক্সাওলা কে ডেকে আনে। কাফিউয়ের মধ্যেই বেরিয়ে পড়ে বউকে নিয়ে।
শুনশান ফাঁকা রাস্তা। মাঝে মাঝে একটাদুটো পেট্রোলগাড়ি হুশ্ করে চলে যাচ্ছে।
সলেমান সাধ্যমত জোরে টানছে। হঠাত্ একটা পেট্রোলগাড়ি থামল। দুজন পুলিশ নামল। একজন ঠাস করে সলেমানের মুখে থাবড়া লাগাল,অন্যজন বুটের এ্যংকেল থেকে একটা ভ্রমর বের করে পেছনের চাকা ফুটো করে দিল। পুরো ঘটনাটা ঘটল মাত্র কয়েক মুহূর্তে! আর্তচিত্কার করে উঠল জামসেদ-কী করেন !আমি একজন ট্রাফিক ! আমার বউয়ের ডেলিভারি কেস! তৃতীয় এজন নেমে জামসেদের মুখে কষে চড় লাগিয়ে বলল- আই ডি কার্ড? ওরা তিন জন নির্বাক।
গাড়িটা হুশ্ করে ছুটে গেল। সলেমান তবুও ফুটো চাকা নিয়ে ঘটাং ঘটাং করে এগুতে থাকল.....পুলিশ হাসপাতাল তখনো বহুদূর...জামসেদ বউকে জড়িয়ে ধরে বিড় বিড় করে সলেমান কে তাড়া দেয়.....ঘেমে নেয়ে ওঠে সলেমান..টানছে তো টানছেই ......জামসেদ বউকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে...বউটা নড়ছে....আসলে নড়ছিল না। অনেকক্ষণ ধরেই নড়ছিল না। হাওয়াহীন চাকা ঘটাং ঘটাং করে বাড়ি খাচ্ছিল শুধু...তাতেই মনে হচ্ছিল নড়ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।