যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
বাবু এয়েচেন গ্রামে। ধূতির কোচা দুলিয়ে,খোটা পকেটে পুরে,মচমচ শব্দে চালাবেড়া কাঁপিয়ে যকন আঙ্গিনায় এসে দাঁড়ালেন পাইক-প্যাঁদা ত্রাহী ত্রহী ছুঁটে এলো। ঘটিতে জল-কাঁসার বাসনে ফলাহার-ফুলচন্দনচর্চিত রমণীকুলের খিল খিল রবে রিনিঝিনি তুলে বাবুকে বরণ করা হলো। বাবু দাওয়ায় বসে আয়েসে তাম্বাকু সেবনে ব্রতি হলেন। খানিক বাদে প্রজাকুলের নম:শুদ্র,চাড়াল-চন্ডালেরা ভেট দিতে এলো।
অবনত মস্তকে ভেট প্রদান হলে বাবু পরিতৃপ্তির শ্বাস ছাঁড়লেন এবং তাম্বাকুপ্রজ্জলিতধোঁয়ার আঁধারে স্মিত হেসে শুধোলেন-হ্যাঁরে,তোরা ভাল তো?
শহর কোলকেতায় তকন ষষ্টি চলচে। চারিদিকে আবের আঁটি, কাঁটালের
ভোষঁড়া, জামেরবিচি সয়লাব। মাছি ভন ভন করচে। মাতাল মাতাল গন্ধে মৌ মৌ করচে। এঁদোকাদা শুকনো ফলের আঁশ-ফাঁটাবাঁশ এবং ইত্যকার বিষয়াদির আধিখ্যে শ্রবণ-ভাদ্রের ঠাঁঠানো তাপে বাবুদের বৈকালিক আবহ ভাল যাচ্চে না।
ঠিক এই মাপের বাবুরা এই একবিংশ শতকে যখন সায়েব হয়েছেন। তাদের গায়ে যখন শেরওয়ান-আচকান-ধূতির বদলে প্যান্টালুন উঠেছে,তারা যখন সকালে প্রর্থনা-টার্থনা সেরে আল্লা-খোদা-ভগবান-ঈশ্বর জপে কাজে গিয়ে ফের সন্ধ্যেবেলা দু’পেগ নিয়ে বসছেন, রাতে উম্দা চ্যানেলের বিন্দাস ঝাঁকিনৃত্য দেখে গভীর রাতে ১৮ রেটেড দেখে গরমি খাচ্ছেন, আবার ন্যায়নীতি কপচে,আদর্শ-টাদর্শের ধ্বজা উড়িয়ে এখানে সেখানে জ্ঞানের বীজ ছিটিয়ে দিচ্ছেন, কাকসাদৃশ্য পোঁদে ময়ূরের পুচ্ছ লাগিয়ে পেখম মেলে বেলাজের মত পোঁদ দোলাচ্ছেন, টাকার মাপে কৃষ্টি-কালচার,সাহিত্য-টাহিত্য,মানবতা-মনুষ্যত্যের গাঁড় মেরে দিচ্ছেন, বনেদি আর দাপ্তরিক ক্ষমতাবলে আম- পাব্লিকের পেছনে কাঠি করে চৌরাস্তায় খাড়া করে দিচ্ছেন, ঠিক সেই মাপের কিছু মাল একটা নাইটকোচে উঠে বসেছিল। গন্তব্য-দক্ষিণ বাংলা।
৩৬ জন যাত্রী নিয়ে বাসটা আরিচায় ফেরীতে উঠেছিল। কার্টিজ লাইট জ্বেলে দেওয়া হয়েছিল।
অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। যারা জেগে ছিল তারা দেখল লম্বাপনা একজন ইন্জিনের পেছনে এসে দাঁড়াল। তারপর খুব আলতো ভাবে হেটে হেটে জাগ্রতদের হাতে একটা ছাপানো কাগজ ধরিয়ে দিল। সবাই ভাবল নিশ্চই সাহায্য-টাহায্য হবে, দলাকরে ছুঁড়ে ফেলতে গিয়েও কেউ পারল না। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়তে লাগল।
অদ্ভুতব্যাপার ! তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নামে একটা করে চিঠি! আশ্চয্য!লোকটা নাম জানল কী করে? প্রত্যেকেই তার নিজের টা পড়া শেষ করে অন্যের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে! সবাই ভাবছে-ওর টাতেও কী আমার কথা লেখা? কী লেখা ছিল কাগজগুলোতে?
>আপনি আজ যে পেনশনের ফাইলটা আটকে দিলেন,সেই লোকটি আজ নিয়ে ৪৩২ দিন ধরে ঘুরে এই সন্ধ্যেয় মারা গেছেন।
>আপনি সকালে যে বস্তির ছেলেটাকে গাড়িচাপা দিয়েছিলেন,সে মরে গেছে দুই ঘন্টা আগে।
>আপনার বউ আপনার মানিব্যাগে ডবকা মেয়েটির ছবি দেখে ফেলেছে। সে এখন তার পুরোনো বন্ধুর সাথে শুয়ে আছে। ক্রসবিট।
>যে মেয়েটিকে আজ আপনি হাসপাতালে ভর্তি হতে দিলেন না,সেই মেয়েটি এখন রমনাপার্কের পাশে ছটফট করছে, রাতটা হয়ত শেষ হবেনা,তার আগেই সে মারা যাবে।
>১৪ বছর ধরে যে মামলাটা জিতব জিতব বলে মক্কেলের ভিটেমাটি বিক্রি করিয়েছেন,নেই লোকটি আজ রাতে আত্মহত্যা করতে চলেছে,এতক্ষণে হয়ত করেও ফেলেছে।
>আপনি কাল যাকে ’ক্রসফায়ারে’হত্যা করেছেন,তার মরদেহ আকড়ে ৭ বছরের মেয়েটা হার্টফেল করেছে।
>আপনার কারণে যে নিরাপরাধী লোকটা সাড়েছয় বছর ধরে জেলখাটছে, আজ রাতে সে ৩৬টা ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করেছে...................................
হঠাৎ করে যেন সবাই সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে.....কেউ কেউ জানালা দিয়ে কালো আকাশের ক্যানভাসে একফালি ঝুলেথাকা চাঁদ দেখার চেষ্টা করে.....গোঁ গোঁ শব্দে ফেরী চলকে থাকে....মাছধরা নৌকাগুলো সাৎ করে পাশকেটে যায়। মোচার খোলার মত দুলতে থাকে।
দূরে আর একটা ফেরী ভোঁবাজিয়ে এগিয়ে যায়। পাশের বাসগুলোয় চটুল হিন্দীগান বাজতে থাকে। এক ল্যাংড়া ফকির হাঁক দিয়ে সরে যায়।
ইন্জিনের পেছনে এখন কেউ নেই! সবার হাতেধরা কাগজগুলো অনড়, মুখগুলো খোদাইকরা। দু:স্বপ্ন ভেবে সবাই হালকা হবার জন্য অনর্থক শব্দ করে ওঠে...কই কেউ তো নেই এখন? কেউ কি ছিল? আদৌ কি কেউ.........
অসমাপ্ত....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।